শত শত কোটি টাকায় নির্মিত ফ্লাইওভারে দীর্ঘদিন ধরে জমে উঠেছে ময়লা, বালি ও মাটি। পানি পেয়ে তার ওপর জন্মেছে সবুজ ঘাস। বোঝা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এসব ফ্লাইওভার পরিষ্কার করা হয় না। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েও আছে ঠেলাঠেলি। অপরিচ্ছন্নতার কারণে পরিবেশ দূষণের সঙ্গে যোগ হয়েছে আশঙ্কাও। শুষ্ক আবহাওয়ায় বালিতে এবং বৃষ্টি হলে কাদায় গাড়ির চাকা পিছলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন মোটরসাইকেল আরোহীরা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কুড়িল ফ্লাইওভারে দীর্ঘদিন ধরে জমা ময়লা-বালি-মাটি এবং সেখানে জন্ম নেওয়া ঘাস দেখা গেছে। শুধু কুড়িল ফ্লাইওভারই নয়, মাটিকাটা ফ্লাইওভারেও জমেছে বালি-মাটির আস্তরণ। ঢাকা উত্তরের অন্য ফ্লাইওভারগুলোতেও রক্ষণাবেক্ষণে অযত্ন-অবহেলার চিহ্ন চোখে পড়বে। রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, কুড়িল ফ্লাইওভারের দুই পাশে দেড় থেকে দুই ফুট করে মোট ৩/৪ ফুট পথ বালি-মাটিসহ অন্যান্য ময়লায় ঢেকে গেছে। কোনো কোনো অংশে আড়াই ফুটের বেশি বালি-মাটিতে ঢাকা পড়তে দেখা গেছে। বছরের পর বছর পরিষ্কার না করায় ফ্লাইওভারের ওপরে জমতে থাকা ময়লা, বালি-মাটিতে জন্ম নিয়েছে সবুজ ঘাস। ফ্লাইওভারের ঘাসগুলোর বয়সও বছরের কাছাকাছি। গেল বর্ষা মৌসুমের আগে থেকে এই ঘাসগুলো দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ পথে যাতায়াতকারীরাও। ঢাকা সেনানিবাসের ওপর দিয়ে এমইএস থেকে মাটি কাটা এলাকায় আসা-যাওয়ার ফ্লাইওভারে দীর্ঘদিন থেকে বালি-মাটি জমে আছে। তবে এই ফ্লাইওভারে কোনো ঘাস দেখা যায়নি। প্রগতি সরণির দিক থেকে শেওড়ার দিকে যেতে কুড়িল ফ্লাইওভারের প্রায় সবগুলো ল্যাম্পপোস্ট নষ্ট। রাতের বেলায় অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে এ পাশটা। প্রগতি সরণি থেকে এয়ারপোর্টের দিকে যেতে ফ্লাইওভারের অংশেরও বেহাল দশা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম. মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘ওই ইয়েটা কিন্তু আমাদের সিটি করপোরেশনের কাছে হ্যান্ডওভার করা হয়নি। যার জন্য দায়িত্ব কিন্তু আমাদের না, সিটি করপোরেশনের না। তারপরও কিন্তু আমরা বেশ কয়েকবার পরিষ্কার করে দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘এটা হলো সড়ক বিভাগের। এটা যখন আমাদের কাছে দেওয়া হবে। তখন আমরা নিয়মিত পরিষ্কার করব।’ জানতে চাইলে রোডস্ অ্যান্ড হাইওয়ে ডিপার্টমেন্টের অতিরিক্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার (পস্ন্যানিং অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স উইং) একেএম মনির হোসেন পাঠান জানান, কুড়িল ফ্লাইওভার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নির্মাণ করেছে। দীর্ঘদিন থেকে জমতে থাকা ময়লা-বালি-মাটি পরিষ্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। আমাদের অভ্যাসটাই বাজে হয়ে গেছে। আমরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে আলাপ করে সমস্যা সমাধান করতে পারি। সেটা না করে ওমুকের তমুকের এভাবে বললে সমাধান হবে না। এটা এই ডিপার্টমেন্টের না, ওই ডিপার্টমেন্টের এগুলো না করে এটা পরিষ্কার করতে হবে, না হলে রাস্তার মধ্যে কেমন দেখা যায়- এভাবে চিন্তা করা দরকার।’ তিনি বলেন, ‘ময়লা পরিষ্কারের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। রাস্তায় যদি কোনো ময়লা জমে, তা পরিষ্কার করার দায়িত্বও তাদের। কুড়িল ফ্লাইওভারের রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন রাখার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এরইমধ্যে চিঠি দিয়েছে বলে জানান সংস্থাটির সচিব সুশান্ত চাকমা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িল ফ্লাইওভারের প্রজেক্ট ডিরেক্টর উজ্জ্বল মলিস্নক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আপনার কথা সত্য। যেহেতু এ ব্যাপারে আমাদের বাজেট নাই। সিটি করপোরেশনকে দিয়ে দিতে মন্ত্রণালয়ে অলরেডি চিঠি দেওয়া হয়ে গেছে। দুই একদিনের মধ্যে ওদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’
সূত্রঃ যায়যায়দিন