রাজধানী কাবুলসহ আফগানিস্তানের বড় বড় শহরগুলোতে চুরি, অপহরণ এবং হত্যার ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দালাল সরকার শাসিত অঞ্চলগুলোতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে জনসাধারণ। এ বিষয়টি এখন গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
ডাকাতদের জন্য কাবুল এখন স্বর্গরাজ্য। এই শহরটি খুব বেশি অনিরাপদ। সেখানে প্রকাশ্য দিবালোকে গাড়ি, টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন এবং মানুষের অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
ছিনতাইকারীরা ছোটখাটো জিনিসের জন্যও লোকদের হত্যা করতে কুণ্ঠিত হয় না। কোনো ধরণের বাধা-বিঘ্নতা ছাড়াই তারা দলবদ্ধ হয়ে সারা শহর ঘুরে বেড়ায় এবং ইচ্ছেমতো অপকর্ম করে।
দেশের অন্যান্য বড় শহরগুলোতেও ফৌজদারী অপরাধ একটি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুদিন আগে, শহরে ডাকাতদের নির্বিঘ্নে ডাকাতির ঘটনায় কুন্দুজ শহরের বাসিন্দারা প্রতিবাদ করতে শুরু করেন।
শহরগুলোতে অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলেছে। অথচ, অন্যদিকে ইসলামী ইমারাতের শাসনাধীন গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতে চুরি ও ডাকাতির কথাও শোনা যায় না ।
মার্কিন আগ্রাসনের পূর্বে ইসলামী ইমারত যেভাবে সমগ্র আফগানিস্তানজুড়ে নিরাপত্তার উত্তম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, এখনো বরকতময় সেই শরিয়াহ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করে যাচ্ছেন, যেখানে স্থানীয়দের জীবন, সম্মান ও সম্পত্তির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের জুলুমের আশঙ্কা নেই।
প্রশ্ন আসে, আফগানিস্তানের শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলের বাসিন্দারা একই (জাতি) হওয়া সত্ত্বেও কেন বড় বড় শহরগুলোতে অপরাধের হার সমস্ত রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে, অথচ গ্রামাঞ্চলে তা শূন্যের কাছাকাছি?
এই প্রশ্নের উত্তর হলো, সরকারি কর্মকর্তারাই চুরি ও দুর্নীতির মূলে যারা শহরগুলোকে দখলদারিত্বের ছত্রছায়ায় নিয়ন্ত্রণ করছে।
দালাল সরকারের অধিকাংশ কর্মকর্তারা কোনো না কোনোভাবে চুরি, দুর্নীতি, আত্মসাৎ এবং ডাকাতির মতো অপরাধে জড়িত। আর তাদের উচ্চপদস্থ নেতারা ব্যাংক ডাকাতি, সরকারি বাজেট আত্মসাৎ, জমিদখলসহ অন্যান্য বড় বড় অর্থনৈতিক প্রকল্পের দুর্নীতির সাথে জড়িত। অন্যদিকে নিম্নস্তরের কর্মকর্তারা সংঘবদ্ধ গ্যাংদের পরিচালিত করছে। আর, এসকল অপরাধী গ্যাং সদস্যরা হুমকি এবং বন্দুকের নল ঠেকিয়ে সাধারণ লোকদের সহায়-সম্পত্তি লুটে নিচ্ছে।
কাবুল ও অন্যান্য শহরের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন যে, অপরাধীরা কোনোরকম বাধা-বিপত্তি ছাড়া পুলিশের সামনেই লোকজনকে লুন্ঠন করছে। এমনকি জনসাধারণ যখন কোনো দুর্বৃত্তকে আটক করে কর্তৃপক্ষের হাতে সোপর্দ করে, তখন কয়েকদিন পরেই তাকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং পুনরায় সে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
এটিই প্রমাণ করে যে শহরগুলোতে প্রচলিত মাফিয়া সংস্কৃতি কোনও সাধারণ ঘটনা নয়, বরং দুর্নীতিবাজ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের জোড়ালো সমর্থনেই তা হচ্ছে। লুন্ঠিত সম্পত্তিতে সরকারি কর্মকর্তাদের একটা ভাগ থাকায় এইসব গ্যাংরা প্রকাশ্যে দিবালোকে হত্যা এবং অপহরণের সাহস পাচ্ছে। মাঝে মাঝে কিছু গ্যাং সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের নাটকীয় অভিযান জনগণকে ধোঁকা দেওয়া এবং নিজেদের অপরাধমূলক পদক্ষেপগুলো আড়াল করার প্রতারণা বৈ অন্য কিছু নয়।
ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান বিশ্বাস করে যে, দুর্নীতিতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ডুবে যাওয়া এবং চুরি ও আত্মসাতের ক্ষেত্রে বিশ্ব রেকর্ড গড়া কোনো শাসনব্যবস্থা কখনও নিরাপদ জীবনযাত্রার নিশ্চয়তা দিতে পারে না। যে শাসনব্যবস্থায় মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার চুরি করতে দ্বিধাবোধ করে না, সেখানে পুলিশ বা নিম্নস্তরের কর্মকর্তারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চুরি করতে গিয়ে কীভাবে লজ্জাবোধ করবে? এইসমস্ত অপরাধ রোধের একমাত্র উপায় হলো একেবারে গোড়া থেকেই এই শাসনব্যবস্থা সংস্কার করা এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শরীয়াহ আইন কার্যকর করা।
[বি.দ্র: বাংলাদেশেও চলমান শাসনব্যবস্থা ও শাসকগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে উপরের এই আলোচনা খাটে। এদেশেও চলছে জোর-জুলুমের শাসন, চলছে ভারতের আগ্রাসন। এই অপশাসনের সমাধান কেবল ইসলামী শাসনব্যবস্থাই দিতে পারে, আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানই পারে সকল প্রকারের জুলুমের অবসান ঘটাতে। আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামী শাসন কায়েম করার তাওফিক দান করুন, আমীন।
সম্পাদক]আর্টিকেলটি ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের অফিসিয়াল ইংরেজী সাইটে গত ১৬ই জানুয়ারীতে প্রকাশিত হয়। সেখান থেকে এটি অনুবাদ করেছেন ভাই ইউসুফ আল-হাসান।
আমীন ইয়া রাব্বুল আলামিন