ভারতে জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএএ) বিরোধী স্লোগান এবার জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) ‘নিখোঁজ’ ছাত্র নজীব আহমেদের মায়ের মুখেও।
তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তার ছেলের খোঁজ মেলেনি। হাল ছেড়ে দিয়েছে সিবিআই। মুখে কুলুপ প্রশাসনের। ষাটোর্ধ্ব ফাতিমা নাফিজ তার পরেও আরো বড় লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমি তো ভালোই আছি। কিন্তু কাল আমার দেশটার কী হবে? উচ্চবর্ণের হিন্দু ছাড়া বাকি সবাইকে তারা তাড়াতে চাইছে। মুসলিমদের বলছে, পাকিস্তানে যাও। মগের মুলুক নাকি! কেন যাব পাকিস্তানে? যেতে হলে কবরস্থানে যাব, তবে ওই গেরুয়া গুন্ডাগুলোর কয়েকটাকে সঙ্গে নিয়েই যাব।
২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর রাতারাতি ‘উধাও’ হয়ে যান নজীব। অভিযোগ রয়েছে, তার আগের দিনই এবিভিপির কয়েকজন তাকে বেধড়ক মেরেছিল। ওই বছরেরই ১৭ জানুয়ারি আত্মহত্যা করেন হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দলিত গবেষক রোহিত ভেমুলা।
সে ব্যাপারে অভিযোগ, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে সাত মাসের স্কলারশিপের টাকা আটকে ক্যাম্পাসে তাকে একঘরে করে রেখেছিল এবিভিপি-ই। সেই রোহিতের মা রাধিকা ভেমুলাও এখন বলছেন, চার বছর অনেক সয়েছি। কিন্তু ব্যক্তিগত শোকের আর সময় কোথায়! ছেলে হারিয়েছি, কিন্তু দেশ হারাতে দেব না। গেরুয়া সন্ত্রাস দেখে আবার আমার রক্ত ফুটছে। সংবিধান তো দেশের মা, সবার অধিকার রক্ষা করে। বিজেপি যখন সেই মাকেই বারবার নিশানা করছে, তখন কি আর চুপ থাকা যায়?
কিন্তু রাষ্ট্র এখন যদি কাগজ চায়? রাধিকা আম্মার জবাব, কীসের কাগজ? আগে মোদি-শাহ প্রমাণ দিক, তারা নিজেরা কোথা থেকে এসেছে!
দলিত-আদিবাসী দমন, এনআরসি, সিএএ-সহ যাবতীয় ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ রুখতে ছেলের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘মাদার্স ফর নেশন’ পদযাত্রার ডাক দিয়েছেন রোহিতের মা।
রাধিকা আম্মার ডাকে মহারাষ্ট্রের জলগাঁও থেকে রোহিতের স্মরণসভায় গিয়েছিলেন আবেদা তদভি। পায়েলের মা। অভিযোগ, ক্যাম্পাসে জাতিবিদ্বেষের শিকার হয়েই গত বছর মে মাসে আত্মহত্যা করেন মুম্বাইয়ের ডাক্তার পায়েল তদভি। শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যান্সার, আর মনে জ্বলন্ত কন্যাশোক। তবু নাছোড় আবেদা বলেন, অন্যায় হলে পথে তো নামতেই হবে।
নজীবের মা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিন তালাক রদের সময় তো খুব ‘বহেন, বহেন’ করতেন! এখন দিল্লির শাহিন বাগ, কলকাতার পার্ক সার্কাসে খোলা আকাশের নীচে শীতের রাতে কুঁকড়ে বসে থাকা মেয়েগুলোর কথা মনে হচ্ছে না? ক্ষমতা থাকলে সরাসরি বেঈমান বলুন। পথে নামলে জেলে পাঠান। হম ভি দেখেঙ্গে।