হিন্দি ফিল্মের কুটিল গল্প আর পাশবিক অ্যাকশন মাথায় গেঁথে গিয়েছিল শেখ নাজমুল ইসলামের (৩০)। এর পর ফিল্মি কায়দাতেই অ্যাকশনে নামেন তিনি, ডা. সারোয়ার আলীর বাসায় সদলবলে হামলা চালিয়ে ডাকাতির চেষ্টা করেন তার সাবেক এই গাড়িচালক। নাজমুলের ভাষ্য, দরিদ্র হওয়ার কারণে সারোয়ার আলীর স্ত্রী তার সঙ্গে ভালো আচরণ করতেন না। তাই তাদের শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে গত ৫ জানুয়ারি রাতে উত্তরায় ডা. সারোয়ার আলী ও তার মেয়ের বাসায় সদলবলে হামলা চালান তিনি।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিআইবি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে পিবিআইপ্রধান পুলিশের ডিআইজি হিন্দু বনজ কুমার মজুমদার। সে বলেছে, নামজুল হিন্দি সিনেমার ভক্ত। তিনি ভাবতেন, গরিব হওয়া তার অপরাধ না। অথচ এ কারণে সারোয়ার আলীর স্ত্রীর কাছ থেকে তিনি সঠিক ব্যবহার পাচ্ছেন না। এ কারণে চাকরি ছেড়ে দেন এবং মনে মনে পরিকল্পনা করেন এর প্রতিবাদ করার। সে ধারণায় প্রভাবিত হয়ে ডা. সারোয়ার আলীর পরিবারকে ভয় দেখানো ও উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য ডাকাতির পরিকল্পনা করেন নাজমুল। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে চাচাতো ভাই রনি, ভগ্নিপতি আল আমিন, নুর মোহাম্মদ ও ফয়সালকে সঙ্গে নেন। রাজধানীর আজমপুর লেবার মার্কেট থেকে মনির ও ফরহাদকে দৈনিক ৫শ টাকা ভিত্তিতে ডাকাতির কাজে নিয়োগ দেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে ডিআইজি আরও জানান, কেউ যেন চিনতে না পারে, সে জন্য নাজমুল তিন মাস ধরে দাড়ি-গোঁফ না কেটে বড় করেন। ৫ জানুয়ারি বিকালে আশকোনা এলাকার হোটেল রোজ ভ্যালির ৩০৩ নম্বর কক্ষে ৭ ডাকাতকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন নাজমুল। বাসার পরিবেশ, কক্ষ, পার্কিং প্লেস সম্পর্কে সবাইকে অবগত করেন এবং ডাকাতির সময় কার কী ভুমিকা হবে তা বুঝিয়ে দেন। সারোয়ার আলীর বাড়িতে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটের অংশ হিসেবে ডাকাতির পরিকল্পনা হলেও ক্ষোভের বিষয়টি তখন গোপন রাখেন নাজমুল। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় হোটেল থেকে প্রথমে বেরিয়ে যান নাজমুল একা।
একটি ব্যাগে করে ৭টি চাপাতি ও ৫টি সুইচগিয়ার ছুরি নিয়ে উত্তরায় পৌঁছে রনির হাতে ব্যাগটি দেন নাজমুল। রনি হামলাকারী ৫ আসামিকে ছুরিগুলো বিতরণ করেন। নাজমুল রাত ৯টায় পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ প্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে দারোয়ান হাসানকে দেন এবং কৌশলে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। পরে চাপাতিসহ ব্যাগটি গ্যারেজের পাশে রেখে দেন।
নাজমুল ও ফয়সাল দ্বিতীয় তলায় তাদের স্যান্ডেল খুলে রেখে তৃতীয় তলায় যান। তৃতীয় তলায় সারোয়ার আলীর মেয়ে সায়মা আলীর কক্ষে নক করেন। তার মেয়ে দরজা খুললে নাজমুল ও ফয়সাল ধাক্কা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে সায়মা আলী, তার স্বামী হুমায়ুন কবির ও মেয়ে অহনা কবিরকে ছুরি তুলে ধরে ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে রাখেন। পরে ১০টা ২৫ মিনিটের দিকে ফয়সালকে তৃতীয় তলার নিয়ন্ত্রণে রেখে নাজমুল চতুর্থ তলায় সারোয়ার আলীর ফ্ল্যাটে গিয়ে নক করেন। দরজা খুলে দিতেই জোর করে ভেতরে ঢুকে তাকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে মেঝেতে ফেলে গলায় ছুরি ধরেন। এমন সময় তার স্ত্রী মাখদুমা নার্গিস চিৎকার শুরু করলে নাজমুল বাইরে অপেক্ষারত সহযোগীদের ফোনে ভেতরে আসতে বলেন। তাদের অনবরত চিৎকার শুনে দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া মেজর (অব) সাহাবুদ্দিন চাকলাদার ও তার ছেলে মোবাশ্বের চাকলাদার ওরফে সজীব চতুর্থ তলায় যান। দারোয়ান ঘুমিয়ে না পড়ায় নাজমুলের বাইরে অবস্থানরত সহযোগীরা ফোন পেয়েও ভেতরে ঢুকতে পারেননি। ফলে নাজমুল হতাশ হয়ে ভয় পেয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। পরে অন্যরাও দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
সূত্রঃ আমাদের সময়