এবার ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আয়োজিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে গুলি চালিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের লোকজন। এতে স্থানীয় মসজিদের ইমামসহ অন্তত দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।
ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) প্রতিবাদে মুর্শিদাবাদে চলমান বিক্ষোভে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন দুজন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
গত ১ ডিসেম্বর আইনে পরিণত হয় ভারতের মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিকত্ব বিল। তারপর থেকে দেশজুড়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলন সবচেয়ে ব্যাপক আকার নিয়েছিল জামিয়া মিলিয়া, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ও জেএনইউ-তে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায় মুর্শিদাবাদে নিহতদের নাম সানারুল বিশ্বাস (৬০) ও সালাউদ্দিন শেখ (১৭)।আহত হয়েছেন তিনজন।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে কলকাতার প্রভাবশালী গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, বুধবার সকালে ওই এলাকাটিতে সিএএ বাতিল ও এনআরসির বিরুদ্ধে ‘নবজাগরণ’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন অবস্থান ধর্মঘটে অংশ নেন। কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার বরাতে বলা হয়েছে, ওই সংগঠনে বিভিন্ন রাজনৈতির দলের কর্মীরা থাকলেও তারা মূলত অরাজনৈতিক একটি আন্দোলন তৈরির চেষ্টা করেছিলেন।
ইমদাদুল হক নামে অন্য এক স্থানীয় বাসিন্দার অভিযোগ, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তহিরুদ্দিন মণ্ডলের সঙ্গে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান উপস্থিত ছিলেন। তাদের নির্দেশেই সঙ্গে থাকা তৃণমূলের লোকজন বাজারে থাকা লোকজনকে লক্ষ্য করে বোমা মারতে থাকে। পরে স্থানীয়রা প্রতিরোধ করতেই চলে যাওয়ার পথে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। এতে দুইজন মারা যান ও তিনজন গুরুতর জখম হন।
নিহত সানারুল বিশ্বাসের ছেলে সাহারুল জানান, তার বাবা প্রতিদিন মসজিদে নামাজ পড়তেন। সেখান থেকে ফিরে আসার সময়ই কয়েকটি মারুতি ভ্যান এসে গুলি চালাতে শুরু করে। সেই গুলিতেই তার বাবা মারা যান। পুলিশ তাকে বাঁচানোর কোনও চেষ্টাই করেনি বলেও অভিযোগ করেন সাহারুল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল শুরু থেকেই এনআরসি, সিএএ ও বিরোধী আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু তাদের লোকেরাই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভে গুলি চালিয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, এলোপাথারি গুলিতে কয়েকজন আহত হলে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক দুই জনকে মৃত ঘোষণা করেন। তারা হলেন- আনারুল বিশ্বাস (৬৫) ও সালাউদ্দিন শেখ (১৭)। আনারুল স্থানীয় মসজিদের ইমাম।
স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস কোনোভাবে জানতে পারে বুধবার জলঙ্গিতে যে মিছিল ও বনধ পালন করা হবে তার নেপথ্যে রয়েছে আসাদুদ্দিন ওয়াইসির দল মজলিস-ই-মুত্তেহাদিন মুসলিমিন (মিম)। এতে সায় ছিল না তৃণমূলের। তারা চাইছিল এ রাজ্যে সিএএ-বিরোধী আন্দোলন ও বিক্ষোভ হবে শুধু তাদের নেতৃত্বে।
তৃণমূলের নিষেধ না শুনে বুধবার সকালে সাহেবনগরে সিএএ বিরোধী বিক্ষোভ ও মিছিল শুরু হয়, পথ অবরোধ করা হয়। আর তাতেই তারা খেপে যায় তৃণমূল।
হতাহতদের পরিবারের দাবি করেছে, তারা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তাহলে কেন তৃণমূল গুলি চালালো। আসলে সিএএ বাস্তবায়ন হোক তৃণমূল তা চায় বলেও মন্তব্য তাদের।