বর্তমান সময়ে গণতন্ত্রের প্রতি মানুষ চরম অসন্তুষ্ট বলে এক জরিপে উঠে এসেছে। আর গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের অসন্তুষ্টির এ মাত্রা ‘রেকর্ড উচ্চপর্যায়ে’ রয়েছে। সম্প্রতি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের চালানো এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জরিপের ফলাফলে সতর্ক করে বলা হয়েছে, বিশ্বের দেশে দেশে গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা এখন ‘উদ্বেগের’ পর্যায়ে রয়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় গত ২৫ বছরের মধ্যে গণতন্ত্রের প্রতি অসন্তুষ্টি সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, সবচেয়ে বেশি বা উচ্চমাত্রায় অসন্তুষ্টি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার অব দ্য ফিউচার অব ডেমোক্রেসি’ নামের একটি বিভাগ এ জরিপ চালায়। ১৯৯৫ সাল থেকে এটি গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করে আসছে। তাদের জরিপে দেখা যাচ্ছে, গণতন্ত্রের প্রতি অসন্তুষ্টির মাত্রা ১০ ধাপ বেড়ে ৪৮ থেকে ৫৮ হয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রের প্রতি অসন্তুষ্টির সর্বোচ্চ পর্যায়।
গবেষকেরা বলছেন, গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের মনোভাব জানার ক্ষেত্রে ৪০ লাখ লোকের ওপর সাড়ে তিন হাজার জরিপ চালানো হয়। আর সবচেয়ে বেশি বা উচ্চমাত্রায় অসন্তুষ্টি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে। জরিপ পরিচালনকারীদের একজন রবার্তো ফাও বলেন, বিশ্বে গণতন্ত্রের অবস্থা অস্বস্তি বা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে।
রবার্তো ফাও বলেন, ‘আমরা দেখেছি, বিশ্বে গণতন্ত্রের প্রতি অসন্তুষ্টির মাত্রা বেড়ে চলেছে দিনকে দিন। অসন্তুষ্টি বাড়তে বাড়তে এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। গণতন্ত্রের প্রতি অসন্তুষ্টির মাত্রা সবচেয়ে বেশি উন্নত বিশ্বে।’
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অব দ্য ফিউচার অব ডেমোক্রেসির গবেষকেরা বিশ্বের ১৫৪টি দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। মানুষের কাছে তাঁদের প্রশ্ন ছিল, নিজ দেশের গণতন্ত্রের প্রতি আপনারা সন্তুষ্ট নাকি অসন্তুষ্ট।
গত এক দশকে গণতন্ত্রের অগ্রহণযোগ্যতা বাড়তে শুরু করেছে। বেশির ভাগ দেশে গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থা চলে যাচ্ছে অনাস্থার দিকে।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, গণতন্ত্রের প্রতি এই অসন্তুষ্টি ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দা ও ২০১৫ সালের বৈশ্বিক শরণার্থী সংকটের প্রতিধ্বনিও হতে পারে। আবার এ অসন্তুষ্টি রাজনৈতিক ও সামাজিক পুনর্বিবেচনার প্রতিফলনও হতে পারে।
জরিপে বলা হয়, ২০০৫ সাল থেকে এটি নিম্নমুখী হয়েছে। বলা হচ্ছে, বৈশ্বিক প্রবণতা, আর্থিক সংকট ও দেশটির পার্লামেন্ট সদস্যদের অর্থ ব্যয় নিয়ে বিতর্কিত ঘটনার কারণেই গণতন্ত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মানুষ।
গবেষকেরা বলছেন, গণতন্ত্রের প্রতি অসন্তুষ্টি একটি সাম্প্রতিক প্রবণতা। গত বছরের ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের আগে করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গণতন্ত্রের প্রতি অসন্তুষ্টির মাত্রা পৌঁছেছে ৬১ শতাংশে। অথচ ১৯৯৫ সালে যুক্তরাজ্যে গণতন্ত্র নিয়ে অসন্তুষ্টি ছিল ৪৭ শতাংশ। ২০০৫ সালে তা ছিল ৩৩ শতাংশ।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেও গণতন্ত্রের প্রতি অসন্তুষ্ট মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দেশটিতে গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের সন্তুষ্টির মাত্রা ছিল প্রায় ৭৫ শতাংশ। এরপরই তা কমতে শুরু করে। বর্তমানে সেটি ৫০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। গবেষকেরা বলছেন, অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি, রাজনৈতিক মেরুকরণসহ বিভিন্ন কারণে গণতন্ত্রের প্রতি অসন্তুষ্ট হচ্ছে মার্কিনরা।
রবার্তো ফাও বলেন, গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা কমছে, কারণ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছে না। আর এই প্রবণতা বিশ্বের প্রতি হুমকিও বটে। এর কারণে অর্থনৈতিক ঝক্কি বাড়তে পারে।