চীনে মহামারি করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ইতিমধ্যেই ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশের উহান শহরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে চীন সরকার। আজ বুধবার উহান শহরে মানুষের বর্তমান জীবনযাপন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘বিবিসি’।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চীনের এক গৃহবধূ বলেন, ‘কোয়ারেন্টাইনে গিয়ে আলাদা থাকার চেয়ে ঘরে বসে সবাই একসঙ্গে মরব।’
৩৩ বছর বয়সী ওই গৃহবধূর নাম ওয়াং। সারা বিশ্বে আতঙ্ক ছড়ানো করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহানের বাসিন্দা তিনি।
গৃহবধূ ওয়াং বলেন, ‘গত ২৩ জানুয়ারি হুবেই প্রদেশ অবরুদ্ধ হওয়া থেকেই আমার পরিবার এখানে বেঁচে থাকার লড়াই করে যাচ্ছি। আমার চাচা ইতিমধ্যেই মারা গেছেন। বাবার অবস্থাও খুব খারাপ। আমার মা এবং চাচির মধ্যেও করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে তাদের পাকস্থলি আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া আমার ভাইয়েরও সর্দি কাশিসহ শ্বাসকষ্ট দেখা যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার বাবার খুব জ্বর হয়েছে। গতকাল তার শরীরের তাপমাত্রা ছিল ১০২ ডিগ্রি এবং তার ক্রমাগত কাশি এবং শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। আমরা বাড়িতে সারাক্ষণ তাকে অক্সিজেন দিয়ে রেখেছি। তাকে চীনা ও পশ্চিমা সব ধরনের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের সিট ফাঁকা না থাকায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা যাচ্ছে না।’
‘নিজের স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার পরেও একটি ফাঁকা সিটের আশায় আমার মা এবং চাচি প্রতিদিন হাসপাতালে খবর নিতে যায়। কিন্তু কোনো হাসপাতালেই সিট ফাঁকা নেই’ বলেন ওই গৃহবধূ।
কোয়ারেন্টাইন সম্পর্কে জানতে চাইলে ওয়াং বলেন, ‘উহানে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দেওয়া এবং ইনকিউবেশন পিরিয়ডে থাকা রোগীদের থাকার জন্য অনেকগুলো কোয়ারেন্টাইন রয়েছে। সেখানে কিছু সাধারণ প্রাথমিক সুবিধা থাকলেও আমার বাবার মতো যারা গুরুতর অসুস্থ তাদের জন্য কোনো বিছানা নেই। আমি সত্যিই প্রত্যাশা করি আমার বাবার সঠিক চিকিৎসার।’
তবে এই মুহূর্তে কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বা সহায়তা করছে না জানিয়ে ওই গৃহবধূ বলেন, ‘আমি কমিউনিটির কর্মীদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছি,তবে যা দেখেছি আমাদের হাসপাতালে বিছানা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই আমরা আলাদা হয়ে যাওয়ার চেয়ে বাড়িতেই মরে যাবো।’
চীনে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য নির্মিত নতুন হাসপাতাল সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘নির্মিত নতুন হাসপাতালগুলো হচ্ছে এই মুহূর্তে অন্যান্য হাসপাতালে ইতিমধ্যে থাকা ব্যক্তিদের জন্য। তাদের নতুন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে।’
এই ভাইরাসে চীনে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৯০ জন। এ ছাড়া ফিলিপাইন ও হংকংয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এই ভাইরাসে ২৮টি দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ হাজার ৩২৪ জন ।