লোন উলফ ম্যাগাজিনের ২য় সংখ্যা নিয়ে
বিশেষ প্রতিবেদন
=======================
লোন উলফ ম্যাগাজিনের ২য় সংখ্যা ও ভিডিও ট্রেইলার নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। ইংরেজিতে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনটির অনুবাদ করেছেন বখতিয়ার মামুন। অনুবাদ নিম্নে দেওয়া হল-
আমেরিকান ও ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের উপর হামলা চালানোর জন্য বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনীর ভিতরে থাকা ‘লোন উলফদের’ আহ্বান জানালো আল-কায়েদা
এ বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বাংলায় ‘লোন উলফ’ ম্যাগাজিনের দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশ করেছে আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা (AQIS) এর প্রতি অনুগত বাংলাদেশী জিহাদিরা। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী এ ম্যাগাজিনের উদ্দেশ্য ‘বাংলাদেশে গ্লোবাল জিহাদের কাজকে অগ্রসর করা…’। গ্রুপটির প্রকাশনার মান উঁচু স্তরের। বিগত পাঁচ বছর ধরে এই মান তারা বজায় রেখেছে। ৫৩ পৃষ্ঠার নতুন এই ম্যাগাজিনেও এই উচ্চমান দৃশ্যমান। কাদের লক্ষ্য করে এই ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়েছে সেটা প্রচ্ছদেই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ম্যাগাজিনের শিরোনাম রাখা হয়েছে, ‘লেটার টু দা ইনসাইডার’ (‘ভিতরের ভাইয়ের প্রতি চিঠি’)। বাংলাদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর লোগো স্থান পেয়েছে প্রচ্ছদে। বাংলাদেশ নেভি, বাংলাদেশ বিমান, পুলিশ, র্যাব এবং এসএসএফ এর লোগের মাঝখানে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লোগো। প্রচ্ছদে এসএসএফ এর লোগো রাখার দিকটি বিশেষভাবে লক্ষনীয়। পাশাপাশি বাংলাদেশের তিন সশস্ত্র বাহিনীর সমন্বিত লোগোও স্থান পেয়েছে ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে। ম্যাগাজিনের নতুন এই সংখ্যাটি পুরোপুরিভাবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে।জিহাদের সমর্থনে জিহাদিরা যেসব যুক্তি, কারণ ও তর্ক উপস্থাপন করে সেগুলো সুক্ষ, গভীর এবং উন্নত। একজন মুসলিমের কাছে অনেক সময় জিহাদিদের এ কথাগুলো প্রামাণিক এবং গ্রহণযোগ্য মনে হয়। একজন সাধারন মুসলিমের জন্য এই বক্তব্য চ্যালেঞ্জ করা বেশ কঠিন। এই যুক্তি ও তর্কগুলো বৈশ্বিক জিহাদ আন্দোলনের নেতা ও চিন্তাবিদদের দীর্ঘদিনের বিশ্বাসগত ও পদ্ধতিগত আলোচনা, পর্যালোচনা এবং তর্কবিতর্কের ফসল। এই ম্যাগাজিনে এধরণের যুক্তি ও আলোচনাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। কাউকে নিজেদের মতাদর্শে দীক্ষিত করার জন্য জিহাদিরা সাধারণত যে পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে সেগুলো উঠে এসেছে এ ম্যাগাজিনে।
ম্যাগাজিনে সমসাময়িক বিশ্বের পর্যালোচনা উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের উপরে চলা নিপীড়নের কথা। বিশ্বের মুসলিম শাসকদের তাগুত (এমন শাসক যে স্রষ্টার সার্বভৌম শক্তি ও আইন প্রত্যাখ্যান করে) ঘোষণা করা হয়েছে, সেই সাথে যারা তাগুতের প্রতিরক্ষা করে এবং তাগুতের পথে যুদ্ধ করে তাদের কাফির ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে ‘বাহিনীগুলো’ তাগুতের সহায়তা করে কুরআনে তাদের জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ও মার্কিন সেনাবাহিনীর সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে সমালোচনা করা হয়েছে। ‘আল্লাহর বাহিনী’ আর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তুলনা উপস্থাপন করা হয়েছে একটি ইনফোগ্রাফিকের মাধ্যমে।এ বিষয়গুলো তুলে ধরার পর একমাত্র সমাধান হিসাবে বলা হয়েছে সশস্ত্র জিহাদের কথা।
ম্যাগাজিনটি পাঠকদের তাগুতের বাহিনীর ভিতরে “গোপন অপারেটর ” হিসাবে কাজ করার এবং “ওয়ান ম্যান আর্মি” হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এটিকেই তুলে ধরা হয়েছে পাঠকের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী পথ হিসাবে। সামরিক বা নিরাপত্তা বাহিনীর ভিতরে থাকা লোন উলফদের আক্রমনের তিনটি উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে- মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর নিদাল হাসান, যিনি ২০০৯ এ টেক্সাসের ফোর্ট হুডে হামলা চালিয়ে মার্কিন সেনাদের হত্যা করেছিলেন; মুহাম্মাদ আল-শামরানি নামের তরুণ সৌদি অফিসার যিনি ২০১৯ এর ডিসেম্বরে পেনসাকোলা ন্যাভাল এয়ার বেইসে মার্কিন সেনাদের উপর হামলা চালান; এবং তুর্কির পুলিশ অফিসার মেভলুত আলতিনতাস, যিনি ২০১৬তে আঙ্কারায় মিডিয়াতে সরাসরি সম্প্রচাররত অবস্থায় রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কারলভকে হত্যা করেন। সামরিক বাহিনীর ভিতরে লোন উলফ হিসাবে কাজ করতে পাঠকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক বার্তা ব্যবহার করা হয়েছে ম্যাগাজিনে। এর মধ্যে আছে কুরআনের আয়াত এবং সুন্নাহর বক্তব্য। ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনাবলীও উপস্থাপন করা হয়েছে। ম্যাগাজিনটিতে মুসলিমদের ঈমানের শক্তির কথা বলা হয়েছে, এবং চুড়ান্ত বিজয়ের নিশ্চয়তা হিসাবে দেখানো হয়েছে ইসলাম ধর্মের সত্যতা ও শক্তির কথা।সামরিক বাহিনীর ভিতরে থাকা লোন উলফদের আক্রমনের প্রভাব কী হতে পারে, তার একটি লিস্ট ম্যাগাজিনে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য একটি উল্লেখযোগ্য যুক্তি হল, কিতাল (সশস্ত্র জিহাদ) নিজেই একটি শক্তিশালী দাওয়াহ। জিহাদিদের বক্তব্য হল, একটি সন্ত্রাসী হামলার পর বহু মুসলিমের নিজেদের বিশ্বাসকে পুনরায় মূল্যায়ন করার সম্ভাবনা তৈরি হয় (যা মৌলবাদের দিকে ঝুকে পরার সম্ভাবনা তৈরি করে)। এটি একটি অভিনব যুক্তি। জিহাদিরা সাধারনত যেসব যুক্তি উপস্থাপন করে থাকে এটি সেগুলোর সাথে একটি নতুন সংযোজন।ম্যাগাজিনের নতুন সংখ্যার পাশাপাশি ট্রেইলার হিসাবে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ (AQIS) এর সাথে সংশ্লিষ্ট এই গ্রুপটি। ভিডিও আর ম্যাগাজিনের টার্গেট দর্শক প্রথমত নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। বলা যায় ভিডিওতে ম্যাগাজিনের বক্তব্য সংক্ষিপ্তভাবে উঠে এসেছে। আকর্ষনীয়ভাবে তৈরি করা এ ভিডিওতে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে, যা দেখে মনে হয় সুচতুরভাবে তৈরি করা এই প্রপাগান্ডা ভিডিওর নির্মাতাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল দর্শকের মনে শক্তিশালী প্রভাব ফেলা। ভিডিওটির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল সামরিক বাহিনীর ভিতরে থাকে লোন উলফদের জন্য স্পষ্টভাবে তিনটি সম্ভাব্য টার্গেট উপস্থাপন করা হয়েছে। এই তিনটি টার্গেট হল, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস, এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন উচ্চ পর্যায়ের টার্গেট নির্ধারন উচ্চাকাঙ্ক্ষী হলেও, এ ধরনের হামলার সম্ভাবনা হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।এই লোন উলফ ম্যাগাজিন ও ট্রেইলার ভিডিওটির মতো আকর্ষনীয়ভাবে নির্মিত কন্টেন্টের পিছনে জিহাদি গ্রুপগুলোকে করতে হয় উল্লেখযোগ্য পরিমানে সময়, সম্পদ ও সদস্য বিনিয়োগ। তাই একে AQIS এর বর্তমান ফোকাসের ইঙ্গিত হিসাবে দেখা অযৌক্তিক হবে না। লক্ষণীয় বিষয় হল, AQIS প্রকাশ্যে তাদের পদ্ধতি নিয়ে কথা বলছে। এর একটি কারণ সম্ভবত এই যে, ইতিমধ্যেই হয়তো সামরিক বাহিনীর ভিতরে তাদের মতাদর্শের প্রচার ও সদস্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এই বার্তাগুলো উপেক্ষা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না, কারণ এ থেকে পরিস্কারভাবে বুঝা যায় অদূর ভবিষ্যতে জিহাদিরা বাংলাদেশে কী দেখতে চাচ্ছে।
মূল- নেত্র নিউজ, আশেক হক, ০৫ মার্চ ২০২০ ইংরেজি
ডাউনলোড করুন:
https://archive.org/details/lonewolfmegazinersongkha2niyebiseshprotibedon
https://mega.nz/#!4uxyVYBL!fHQWp7I1e9mMkm8jRQpv0vHEWrQmIxizlIFLPs-rXI0
Docx
https://archive.org/details/lonewolfmegazinersongkha2niyebiseshprotibedon_202003
https://mega.nz/#!Z6gwmKpZ!G4RznmbFIejGxbyJkhJ0xEy0t5skajNZBAgyggfSOVE
আর্টিকেল টা ডাউনলোড করতে পারছি না।