করোনাভাইরাস ও সরকার : ‘ভাত দেবার মুরোদ নাই, কিল মারার গোঁসাই’

1
1597
করোনাভাইরাস ও সরকার : ‘ভাত দেবার মুরোদ নাই, কিল মারার গোঁসাই’

করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত দেশবাসী। কিন্তু এখনো আওয়ামী প্রশাসনের বর্বরতার মাত্রা কমেনি। একদিকে সরকারের দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত, মন্ত্রী-এমপিদের হাস্যকর-অবাস্তব মন্তব্য এবং অবহেলায় হুমকির মুখে জনজীবন, অন্যদিকে রাষ্ট্রের নির্বোধ ও হিংস্র প্রজাতির আমলা আর সন্ত্রাসী পুলিশ বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার শিকার নিপীড়িত এই জনসাধারণ।

সারাবিশ্বে যখন করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছিল, তখন মুজিববর্ষের নামে মুজিবপূজার নানা আয়োজনের শিডিউল তৈরিতে ব্যস্ত ছিল সরকার। এসময় মহামারী আক্রান্ত বিভিন্ন দেশ থেকে আসা লোকদের কোনো প্রকার ট্রেসিং করা ছাড়াই দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ দিয়েছে সরকার। কোনো ধরণের গাইডলাইনই দেওয়া হয়নি বিদেশফেরত এসকল প্রবাসীদের। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে দাবানলের মতো যে করোনা ছড়িয়ে পড়বে, অজস্র মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে সেসব নিয়ে কোনো চিন্তাই করেনি লুটেরা সরকার। বরং জনগণের রক্ত চুষে আদায় করা কোটি কোটি টাকা খরচ করে মুজিবপূজা উৎযাপনে তাদের পুরো মনোযোগ ছিল! তাগুত সরকারের এরূপ দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের মূল্য দিতে হচ্ছে দেশবাসীকে।

ইতোমধ্যে দেশের সামাজিক পরিমণ্ডলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত হচ্ছেন দেশবাসী, মারা যাচ্ছেন অযত্নে-অবহেলায়। কিন্তু, মাতাল আওয়ামী সরকারের হুঁশ ফেরেনি, কমেনি আওয়ামী গুণ্ডাদের উদ্ভট-হাস্যকর মন্তব্য। কোনো হাসপাতালেই করোনা মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। কোয়ারেন্টাইনের জন্য নির্ধারিত অনেক হাসপাতালেরই একেবারে বেহাল দশা। বেড, লাইট, ফ্যান কিছুই ঠিকঠাক নেই, জানালার কাঁচ ভাঙ্গা। ১৭ কোটি মানুষের জন্য কেবল ২৯টা আইসিইউ। ঢাকা ছাড়া বাকি ৬৩ জেলার কোথাও নেই কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের যন্ত্র!
ডাক্তারদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা উপকরণও সরবরাহ করছেনা সরকার, নিজের টাকায় কিনে নিতে বলছে। অল্পকিছু সুরক্ষা উপকরণ যা দিচ্ছে তা আবার ছাত্রলীগ বা আমলারা কেড়ে নিচ্ছে। চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে ডাক্তারদের। নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ সরকার ডাক্তারদের কড়াভাবে শাসিয়ে বলছে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে কঠোর শাস্তি পেতে হবে।
করোনাভাইরাস টেস্ট করতেও চরম অবহেলা করছে আওয়ামী সরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বারবার তাগিদ সত্ত্বেও করোনা টেস্ট করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেনা সরকার। ঢাকার আইসিডিয়ার ছাড়া অন্য কোথাও করোনা টেস্ট করার ব্যবস্থাই ছিলোনা মার্চের ২৬ তারিখ পর্যন্ত। পরে আরো তিনজায়গায় টেস্ট শুরুর কথা বলা হয়। কিন্তু এই তিনটি হাসপাতালে একটি টেস্টিং কিটও সরাবরাহ করা হয়নি। আইসিডিয়ারের ফোন সবসময় ব্যস্ত থাকে। নানা চেষ্টা তদবির করেও করোনা টেস্ট করা যায়না। সরকার মূলত “নো টেস্ট, নো করোনা” নীতি গ্রহণ করেছে বলে অনেকের অভিযোগ। এভাবে পিশাচ সরকারের অবহেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অনেকে মারা যাচ্ছে। অথচ করোনায় আক্রান্ত ছিলো কি না, তা জানা না থাকায় করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসা অনেকের জীবন আবার হুমকির মুখে পড়ছে।
এতোসব অব্যবস্থাপনা সত্ত্বেও মূর্খ মন্ত্রী-এমপিরা সবকিছু পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে বলে জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছে। দেশের শাসন ক্ষমতায় বসে থাকা এসব মূর্খ সন্ত্রাসীরা বরাবরের মতোই এখনো ‍জনগণের জীবন নিয়ে হাসি-তামাশা করছে। সারা জীবন যারা সন্ত্রাস করে এসেছে, জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, আজ তাদের কাছে কীভাবে জনগণের জীবনের মূল্য থাকবে?

বিদেশফেরত প্রবাসীদের অনিরাপদপন্থায় দেশে প্রবেশ করানো থেকে শুরু করে লকডাউন পর্যন্ত নেওয়া সরকারের একেরপর দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্তে আজ গ্রামের পর গ্রাম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার হুমকিতে রয়েছে। পাশাপাশি তাদেরই অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তে খেটে-খাওয়া কোটি কোটি গরীব মানুষ আজ না খেয়ে মরার উপক্রম হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য লকডাউন দেওয়া যেমন প্রয়োজন ছিল, তেমনি লকডাউন দেওয়ার পূর্বে দেশের কোটি কোটি দিনমুজুর ও গরীব মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছিল অপরিহার্য। কিন্তু, তা না করে আজ এসকল গরীব মানুষের উপরই অত্যাচার চালাচ্ছে দেশের সন্ত্রাসী সরকার ও তার আমলারা।

একদিকে ডাক্তারদের পিপিই কেড়ে নিয়ে নিজেরা নিরাপত্তার পর্দায় আচ্ছাদিত হচ্ছে, অন্যদিকে জনগণকে অনিরাপদ এবং ক্ষুধার্ত রেখে তাদের পিঠে লাঠির আঘাত হানছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী বাহিনী পুলিশ। এমনকি ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে এক ডাক্তারকে পর্যন্ত পিটিয়েছে তারা। গ্রামের মানুষদেরকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে সচেতন না করেই তাদেরকে ধাওয়া করে পেটাচ্ছে আওয়ামী মদদপুষ্ট পুলিশ বাহিনীর এসকল গুণ্ডারা। দরিদ্র গ্রামবাসীরা অসহায় কণ্ঠে প্রশ্ন করছে, তারা আমাদের পেটানোর আগে অন্তত সতর্ক করে যেতো!? তা না করে তারা মানুষকে পেটাচ্ছে, দোকানপাট ভাঙ্গচুর করছে! কেন? আমাদের জন্যই নাকি দেশ? এসকল পুলিশ-সেনাবাহিনী নাকি আমাদেরই সেবায় নিয়োজিত?! এগুলোই কি তবে তাদের সেবা?!

কেবল পুলিশ বা সামরিক বাহিনীই নয়, প্রশাসনের হিংস্র আমলারাও জনগণের রক্ত চুষতে এবার রাস্তায় নেমেছে। এতোদিন তারা বাল্যবিবাহের নামে প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম ছেলে-মেয়েদের বিয়ে বন্ধ করে যিনার দ্বার উন্মোচন করছিল। এবার তারা করোনাভাইরাসের অজুহাতে সাধারণ মানুষের মান-সম্মানের ওপর হামলে পড়েছে। একদিকে দেশের গরীবদের জীবিকার জন্য কোনোপ্রকার পূর্ব ব্যবস্থা না নিয়ে গরীবদের না খাইয়ে মারার উপক্রম করেছে, অন্যদিকে যেসকল গরীব মানুষজন জীবিকার তাগিদে রাস্তায় বের হচ্ছেন তাদেরকে ধরে পেটাচ্ছে, অসম্মান করছে এসকল নরপশুরা।  গত ২৭শে মার্চ শুক্রবার বিকেলে যশোরের মনিরামপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইয়েমা হাসানের তথাকথিত ভ্রাম্যমাণ আদালত মাস্ক না পরার দায়ে তিন গরীব বৃদ্ধকে বর্বরোচিতভাবে কান ধরিয়ে উঠবস করায়। শুধু তাই নয়, কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখার পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজে ওই চিত্র তার মোবাইলে ধারণ করে। পরবর্তীতে সরকারী ওয়েবসাইটে পর্যন্ত এ ছবি আপলোড করে। এ দৃশ্যটা যেন দেশের একটি সামগ্রিক চিত্র। ঐ বৃদ্ধদের মতোই যেন দেশের সবাই কিছু সন্ত্রাসী রাজনীতিবিদদের সামনে কান ধরে আছে।
যাইহোক, গরীবদের মাঝে মাস্ক ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ না করে তাদেরকে কান ধরিয়ে রেখে বর্বরোচিত আচরণ করার অধিকার কোথায় পেয়েছে এই সরকার ও তার আমলারা? জনগণের সেবক হিসেবে যারা নিজেদের দাবি করে, বাস্তবক্ষেত্রে তারা এতো হিংস্রভাবে জনগণের রবের আসনে বসতে চাচ্ছে কেন?

মূলত এমন মিথ্যাবাদী, সন্ত্রাসীগোষ্ঠীই বসে আছে রাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ পদে। যে জনগণের টাকায় তাদের পেট চলে, সেই জনগণের উপরই বারবার নির্মমভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে সন্ত্রাসী সরকারী বাহিনী। নিজেদের দায়িত্ব এরা কখনোই পালন করেনা, কিন্তু সবসময় জনগণকে দোষী বানায়, নির্মমভাবে পেটায়। এই আওয়ামী সরকার আর প্রশাসনের অবস্থা হলো, “ভাত দেবার মুরোদ নাই, কিল মারার গোঁসাই।” এদের হাতে জনগণের জান-মাল নিরাপদ নয়, নিরাপদ নয় দেশের অর্থব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা তথা সমগ্র দেশ।


লেখক: আহমাদ উসামা আল-হিন্দ, সম্পাদক, আল-ফিরদাউস নিউজ।

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধদিল্লিতে লকডাউনে সব্জির গাড়ি উল্টে পুলিশের তাণ্ডব, ভিডিও ভাইরাল
পরবর্তী নিবন্ধউন্নয়নের আসল চিত্র ফাঁস, নির্মাণের এক বছরেই সড়কে ধস