করোনা ভাইরাস টেস্ট ছাড়া হাসপাতালে ঢুকতে পারবেন না কোনও মুসলিম। এমনই নির্দেশ জারি করেছিল উত্তরপ্রদেশের মীরাঠের এক ক্যান্সার হাসপাতাল। গত সপ্তাহে করোনা টেস্ট ছাড়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জানিয়ে স্থানীয় এক সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনটি ছেপেছিল ওই হাসপাতাল। তাতে বলা হয়েছিল কোনও মুসলিম রোগি ভর্তি হতে এলে, তাঁর করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করাতে হবে। শুধু তাই নয়, পরীক্ষা করাতে হবে তাঁর পরিবারের লোকজনকেও। টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ এলে তবেই তাঁকে ভর্তি নেওয়া হবে।
ভারতের অন্যতম জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ প্রায় ২০ শতাংশ। এখনও পর্যন্ত এই রাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯৭০ এবং মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। রাজ্যের অন্তত ১৫০ এলাকাকে হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের মীরাটে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ৭০ জন করোনা রোগী পাওয়া গিয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। সেই মীরাটের হাসপাতালের বিরুদ্ধেই মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। তার পরেই বিতর্ক শুরু হয়। এমনকী অভিযোগ ওঠে, ওই হাসপাতালের হিন্দু ও জৈন রোগীদের বেশি করে দেখাশোনা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর করোনা তহবিলে অনুদান দিয়েছেন তাঁরা পাচ্ছেন বিশেষ পরিষেবা। খবর দ্যা ওয়ালের
ভ্যালেন্টিস হাসপাতালের বিজ্ঞাপনে দিল্লির তাবলিগ জামাতের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এটাকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে।
ভারত প্রশাসন ও উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা করোনা ইস্যুকে এক চেটিয়াভাবে বিচার করছে। তাদের বোঝা উচিত, তাবলীগের প্রতিটি সাথী যেমন করোনা আক্রান্ত নয়, তেমন প্রতিটি মুসলমানও তাবলীগের সাথী নয়। সুতরাং তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে সমস্ত মুসলমানদের মূল্যায়ন করা, কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
আশ্চর্যের বিষয় হল, ভারতে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের বিস্তার এবং প্রাদুর্ভাব হুহু করে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে মুসলমানদের ওপরে ভারত সরকার ও প্রশাসনকর্তৃক চরম অসদাচরণের পরিমাণও বাড়ছে।
ভারতীয় মিডিয়াও প্রতিটি মুসলমানকে তাবলীগ কর্মী এবং প্রতিটি তাবলীগকর্মীকে করোনাবাহী হিসেবে প্রচার করে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে চরম বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। যা খুবই নিন্দনীয়।
অথচ, ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তাবলিগ জামাতের সমাবেশেরও আগে। এমনিভাবে, লকডাউন ঘোষণার পর মালাউনদের অনেক সমাবেশও হয়েছে।
এপ্রিলের ১ তারিখে ভারতবর্ষে সভা-সমাবেশের ওপরে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও হিন্দুদের বড় একটি গণ জমায়েত হয়েছে এবং তাতে অংশ নেওয়া এক ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারাও গেছেন। এর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলেন না। হয়তো বলবেনও না।