সম্প্রতি লকডাউনের মধ্যেই আসামের ডিটেনশন ক্যাম্পে আরও এক বাঙালির মৃত্যু হয়। বন্দিশালায় মৃতের সংখ্যা পেরিয়েছে ৩০ এর উপরে। করোনা-সংক্ৰমণ নিয়ে বাড়তি সতর্কতার মধ্যেও ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে মুক্তি নেই নাগরিক প্রমাণে ব্যর্থদের। অথচ দাগি অপরাধীরা অনেকেই ইতিমধ্যে ছাড়া পেয়েছেন। দু’বছরেরও বেশি ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে কিছুদিন আগে সুপ্রিম কোর্ট নোটিস দিয়েছে কেন্দ্র ও আসাম সরকারকে। এরপর দেশের এমন পরিস্থিতিতে আসামের ডিটেনশন ক্যাম্পে দু’বছরের বেশিদিন ধরে থাকা আবাসিকদের ব্যক্তিগত বন্ডে মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কদিন আগেই অসমের গোয়ালপাড়ার ডিটেনশন শিবির থেকে জামিনে মুক্তি পান বিদেশি সন্দেহে বন্দী কলকাতার আসগর আলি। এরপর মুক্তি পেলেন বাংলাদেশি সন্দেহে আটকে থাকা অসুস্থ বৃদ্ধা নুরুল নেসা।
২০১৬ সালে অসমের হাফলং থেকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক হয়েছিলেন ষাট বছরের অসুস্থ বৃদ্ধা নুরুল নেসা। তার বাবার বাড়ি কাছাড়ের মাসিমপুর এলাকায়। পেটের টানে কাজের জন্য স্বামীর সঙ্গে পাড়ি দিয়েছিলেন হাফলং। এখন তার স্বামী এবং বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই। সীমান্ত পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর প্রথমে কোকরাঝাড় বেং পরে শিলচর সেন্ট্রাল জেলের ডিটেনশন শিবিরে থাকতে হয় তাকে। তিন বছর ডিটেনশন ক্যাম্প কাটানোর পর গত বুধবার তাঁর মুক্তি মেলে। ওইদিন খোলা আকাশের নিচে বেড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধা নুরুন নেসা। তুলে ধরেন তিন বছর ধরে ডিটেনশন শিবিরে তার উপর টানা অকথ্য অতাচারের কাহিনি। নুরুন নেসার সঙ্গে এইদিন আরও দু’জন ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে জামিনে মুক্তি পেলেন। এরা হলেন সাধন মালাকার (৫৬) ও সুনীল রায় (৫৬)। এদের প্রত্যেককেই হাফলং-এর ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল বিদেশি ঘোষণা করেছিলো।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল ডিটেনশন ক্যাম্পে যেসব বন্দির মেয়াদ ৩ বছর পার হয়ে গিয়েছে তার শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু তবুও এদের মুক্তি মিলছিলো না। এখন লকডাউনের কারণে তাঁদের জামিনে মুক্তি মিলল। এঁদের প্রত্যেকেই বহু বছর ধরেই অসমে বসবাস করছেন। যেমন সাধনের। বাড়ি কাছাড়ের জামালপুর, আর সুনীল রায় থাকতেন হাফলঙে। আবার নুরুন নেসার বাড়ি ডিসাহাসাও জেলার হাফলং থানার কাশিপুরে। প্রয়োজনীয় নথিপত্রের অভাব এবং আইন লড়াই চালানোর মতো অর্থবল না থাকায় তাদের তিন বছর ধরে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি জীবন কাটাতে হল। নুরুন নেসা দীর্ঘদিন ধরে স্নায়ুরোগে ভুগছেন। স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেন না। তবে সংবাদমাধ্যমের সামনে বারবার বলে চলেন, ওরা আমাকে খুব মারধর করেছে, অন্যদের জামা কাপড় ধুতে বাধ্য করেছে না করলে খাবার কেড়ে নিযেছে। এমনকী প্রয়োজনীয় ওষুধটুকুও জোটেনি।
জেলের ভিতর কাজ করতে গিয়ে হাতে মারাত্মক চোট পেলেও তার চিকিৎসা জোটেনি। নিজের স্বামী এবং সন্তানকে আগেই হারিয়েছেন। কাজেই আগের মতো মনের জোরও নেই, নেই শারীরিক সক্ষমতা। তবুও অসুস্থ শরীর নিয়ে তাকে কাজ করতে হয়েছে। লকডাউনের পর প্রথম দফায় হাফলঙের ১৪ জনকে ডিটেনশন মুক্ত করা হয়। কিন্তু নুরুন নেসার মুক্তি মেলেনি জামিন দারের অভাবে। শেষমেশ বুধবার মুক্তি মিলল। বাড়ি যাওয়ার জন্য গাড়িতে রওনা হওয়ার সময় শুধু বললেন, আমার মতো আর কাউকে যেন ডিটেনশন ক্যাম্পে আসতে না হয়। এর থেকে মরে যাওয়া ভালো।
সূত্র: টিডিএন বাংলা