ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়ন সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক নারীকে গভীর রাতে বেঁধে এনে শালিস করেন ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন ধনু মেম্বার ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতিসহ অন্যান্য দলীয় নেতারা। সালিসে ওই নারী এবং তার দেবরকে সোয়া লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগে তাদের মেরে বিবস্ত্র করে আপত্তিকর অবস্থায় ছবি তোলেন। এই ঘটনায় নির্যাতিত নারী শনিবার নবীনগর থানায় চাঁদাবাজি ও পর্নোগ্রাফী আইনে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
জানা যায়, উপজেলার শ্যামগ্রামের ৫নং ওয়ার্ডের ইউসুফ মিয়ার মেয়ে হোসনা বেগমের বিয়ে হয় ছয় বছর আগে একই ইউনিয়নের কুড়িনাল গ্রামের দুবাই প্রবাসী মোশাররফ পারভেজের সাথে। এই দম্পতির আরাফাত নামে পাঁচ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। স্বামীর সাথে গত কয়েক মাস ধরে বিরোধ চলছে। তার পর থেকে বাবার বাড়িতে বসবাস করছেন হোসনা আক্তার। স্বামীর সাথে বিরোধ মিটানোর জন্য তার শশুরবাড়ির আত্মীয় কুড়িনাল গ্রামের শামীমের সাথে (সর্ম্পকে দেবর) গত ৩ মে ইফতার শেষে আলোচনা করছিলেন তিনি। ওই সময় মামলায় উল্লেখিত আসামিরা ঘরে ঢুকে তাদের দু’জনকে মারধর করে। এক পর্যায়ে তাদের বিবস্ত্র করে জড়িয়ে ধরিয়ে আপত্তিকর অবস্থায় ছবি তোলতে বাধ্য করা হয়।
পরে তাদের বেঁধে রাত ১১টার দিকে শ্যামগ্রাম বাজারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন ধনু মেম্বারের নেতৃত্বে সালিশ করে দু’জনকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। যার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা নগদ ও বাকি টাকা এক সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়। পরে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে পরিবারের জিম্মায় দু’জনকে ছেড়ে দেয়া হয়। জরিমানা করা হলো দু’জনকে, তা হলে এই টাকা কারা পাচ্ছেন? এই প্রশ্ন এবং ওই নির্যাতনের ঘটনায় এলাকায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।
খবর: নয়া দিগন্ত
এ ব্যাপারে নির্যাতিত শামীম মিয়া বলেন, ‘আমাকে মাইরধইর করে কাপড় খুলে ছবি তুলেছে। পরে হাত বেঁধে ধনু মেম্বারের অফিসে নিয়া মিথ্যা অপবাদ দিয়া আমারে এক লাখ টাকা জরিমানা করছে। ৫০ হাজার টাকা দিয়া ছুইটা আইছি।’
নির্যাতনের শিকার হোসনা বেগম বলেন, ‘আমার জামাইর সাথে পারিবারিক ঝামেলা চলতাছে, তাই আমার মামাশশুরের ছেলে শামীম আমাদের বাড়িতে আসার পর কথা কইতাছিলাম, তখন হেরা(আসামী) আইসা আমরারে মাইরধইর করে পড়নের কাপর খুলে ভিডিও করছে। ওই সময় আমার প্রতিবন্ধী ছেলে কান্না করলে তাকে খাট থেকে নিচে ফেলে দিয়েছে। হেরা বলতেছে আমি নাকি দেবরের সাথে খারাপ কাজ করেছি। পরে ধনু মেম্বারের অফিসে নিছে বাইনদ্যা, আমরা দুইজনকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করছে। জরিমানার টাকা না দিলে তাদের তোলা ছবি ফেইসবুকে দিয়ে দিবে বলে হুমকি দিচ্ছে। এই অপমানের সঠিক বিচার না পাইলে আমি আত্মহত্যা করবো।’