করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটে আমেরিকায় ভয়াবহ মন্দা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা আবারও দেশে বেকারত্বের হার নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, আমেরিকার অর্থনীতিতে চরম মন্দা দেখা দেওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। লকডাউনের কারণে, গত এপ্রিলে বেকারত্বের হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। মে মাসে তা বেড়ে আরও শোচনীয় হয়ে ওঠে। অর্থনৈতিক মন্দা সূচকের নিম্ন পর্যায়ে চলে যাবে, এমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এসব কর্মকর্তা।
৮ মে শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর বিবরণী থেকে এমন আশঙ্কা জোরালো হয়ে উঠেছে। গত এপ্রিল মাসে আমেরিকার অর্থনৈতিক বাজারে ২ কোটি ৫ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন বলে প্রতিবেদন করা হয়েছে। এতে ওই মাসে আমেরিকায় বেকারত্বের হার ১৪ দশমিক ৭-এ দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোর রিপোর্ট
ট্রেজারি সেক্রেটারি স্টিভেন মনোচিন ১০ মে নতুন এই প্রাপ্ত সংখ্যা ঘোষণা করেছেন। গত মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত যাঁরা বেকার ভাতার আবেদন করেছিলেন, প্রকাশিত প্রতিবেদনে এর আগের সংখ্যা এসেছে। ফক্স নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অবশ্য এর পরে বৃদ্ধি পাওয়া বেকারত্ব সম্পর্কে বলেন ট্রেজারি সেক্রেটারি। ফক্স নিউজের ক্রিস ওয়ালেস প্রশ্ন করেছিলেন, আমরা কি ২৫ শতাংশ বেকারত্বের দিকে এগোচ্ছি? বেকারত্ব এ হারের কাছাকাছি উঠে গেলে দেশের অর্থনীতিতে ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’ শুরু হয়েছে ধরে নেওয়া হয়।
প্রশ্নটির উত্তরে স্টিভ মনোচিন বলেন, ‘হয়তোবা তাই। আসছে মাসগুলোতে এ সংখ্যা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে প্রশাসন।’
স্টিভেন মনোচিন বলেন, ‘গ্রেট ডিপ্রেশন আসে অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে। কিন্তু এখানে আমরা অর্থনীতিকে বন্ধ করেছি। এ কারণেই এখানে আমরা বিস্মিত হচ্ছি না। অর্থনীতি বন্ধ করলে তো এ হওয়ারই কথা। আমেরিকার অর্ধেক মানুষ তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিয়েছে।’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কেভিন হ্যাসেট ১০ মে সিএনএনের ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ শোয়ে বলেছেন, মে মাসের রিপোর্টে বেকারত্বের হার সম্ভবত ২০ শতাংশের কাছাকাছি চলে যেতে পারে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব মন্তব্য এসেছে এমন এক মুহূর্তে, যখন নানা অঙ্গরাজ্য তাদের অর্থনীতি যখন আবারও খুলে দিচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কয়েক মাস থেকে আমেরিকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অধিকাংশ ক্ষেত্রে বন্ধ ছিল। করোনা মহামারি ঠেকাতে দেশটির ফেডারেল সরকার এবং নানা অঙ্গরাজ্য প্রশাসন লকডাউনে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যের অর্থনীতি ইতিমধ্যে আবার খুলে দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। কেভিন হ্যাসেট মনে করেন, দেশটিতে বেকারত্বের হার মে মাসে কত হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে অর্থনীতি আবার চালু হওয়ার পর ভাইরাস কী প্রতিক্রিয়া দেখায়, তার ওপর।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় অর্থনীতি পরিষদের চেয়ারম্যান ল্যারি কাডলো বলেন, তিনি মে মাসে এ সংখ্যাটি বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন। তবে অপর দিকে, অর্থনীতি আবার চালু হওয়ায় আমেরিকানরা কাজে যাচ্ছেন। এ তথ্য থেকে তিনি আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘এপ্রিলে বেকারত্বের যে সংখ্যা দেখা গেছে, আমি মে মাসে এ সংখ্যার বিষয়ে মিথ্যা আশার বাণী দিতে চাই না। কারণ, মে মাসে আমি বেকারত্ব অনেক বাড়ার আশঙ্কা করছি।’ এবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ল্যারি কাডলো বলেন, রিওপেন হওয়ার পর, অর্থনীতিতে এর প্রভাব দেখা দিতে সময় লাগবে।