করোনা রোধে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সিআরসি টেক্সটাইল মিল বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর লকডাউনের মধ্যেই গত ২৬ এপ্রিল খুলে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত শ্রমিকদের গড় বয়স বিশের নিচে। কারখানার শ্রমিক নাজমা আক্তার বললেন, কারখানায় প্রবেশ ও বের হওয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা নেই। কর্মরত অবস্থায়ও শারীরিক দূরত্ব বজায় থাকছে না। সর্বক্ষণ করোনার ভয় লেগেই থাকে। চাকরি বাঁচাতেই এভাবে কাজ করতে হচ্ছে। একই কথা বললেন কেওয়া এলাকার সিজি গার্মেন্টসের এক নারী শ্রমিক। বললেন, নিজের ও পরিবারের সদস্যদের অনিরাপত্তায় রেখে জীবিকার প্রয়োজনে কাজ করছি। শুধু এ দুটি কারখানাই নয়, স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই গাজীপুরের অনেক কারখানাতেই শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। এতে করোনার ঝুঁকি বাড়ছে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গিলারচালা গ্রামের শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা ভিনটেজ ডেনিম। এই প্রতিষ্ঠানেও নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার তেমন ব্যবস্থা। কারখানার কোয়ালিটি বিভাগের কর্মী কামরুল হাসান বলেন, ভেতরে ও বাইরে সবই একরকম। প্রবেশ ও প্রস্থানে তো ধাক্কাধাক্কি করতে হয়।
একই অবস্থা মাওনা এলাকার এশিয়া কম্পোজিটে। এই কারখানায় কোনো ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি এখনো। শ্রমিক আনোয়ার হোসেন বলেন, অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে হয়। সবাই নিজেরা কিনে মাস্ক ব্যবহার করলেও ভেতরে শারীরিক দূরত্ব মানার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ বিষয়ে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল বাতেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
শ্রীপুরের জৈনাবাজার এলাকার রোশওয়া স্পিনিং মিল, ওসিন স্পিনিং মিলস, শাহজাহান স্পিনিং মিলস ও ফারসিন স্পিনিং মিলের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ করেন।
কারখানাসংশ্লিষ্ট ও কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগের তথ্যমতে, গাজীপুরের নিবন্ধনপ্রাপ্ত ছোট-বড় ও মাঝারি ৪ হাজার ৭৬৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। করোনাকালের আগে চালু ছিল ২ হাজার ৭২টি। এর মধ্যে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ’র নিয়ন্ত্রণাধীন কারখানা ৮৬২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে কয়েক লাখ শ্রমিক। করোনায় বন্ধ থাকার পর গত ২৬ এপ্রিল প্রথম ধাপে ও ২ মে দ্বিতীয় ধাপে কারখানাগুলো খোলা হয়। কারখানা খোলার পর প্রথম দু-একদিন বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল স্বাস্থ্যবিধির ওপর। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে ততই ঢিলেভাব চলে এসেছে, কমছে স্বাস্থ্যবিধির ব্যবহার। এখন পর্যন্ত টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে সচেতনাতই সৃষ্টি হয়নি। খবর: আমাদের সময়