একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ আসনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ৫২ জন। এটি ছিল বিগত সংসদ নির্বাচনে কোনো আসন থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশী। সংসদ নির্বাচনের আগে এসব মনোনয়নপ্রত্যাশী নিজ নিজ এলাকায় বিশাল জনদরদি, সমাজসেবক সেজে গরিব-দুঃখীদের মাঝে ত্রাণ, মসজিদ-মাদ্রাসায় নগদ টাকা বিতরণ করেছেন। কেউ কেউ লাখ-কোটি টাকা খরচ করে শোডাউন করেছেন নিজের জনপ্রিয়তা দেখাতে। চলতি বছরের মার্চ থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস ও সদ্য আঘাত হানা প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে মানুষ যখন কর্মহীন, ঘরহারা, অসহায় হয়ে পড়েছেন তখন দু-একজন ছাড়া জনগণের পাশে নেই সেই মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা।
একই অবস্থা বরগুনা-২ আসনেও। এ আসনেও নৌকা পেতে মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন ৩২ জন। কুড়িগ্রাম-৪ আসনে নৌকার টিকিট বিক্রি হয়েছিল ৩০টি। এ আসনে বর্তমান এমপি ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দু-একজন ছাড়া সবাই ‘সেফ আইসোলেশনে’। শুধু বরগুনা বা কুড়িগ্রামই নয়, এমন চিত্রই প্রায় ৬৪ জেলায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে এমপি হতে নৌকার টিকিট কিনেছিলেন ৪ হাজার ২৩ জন।
একইভাবে সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ৪৩ আসনের বিপরীতে নায়িকা, গায়িকাসহ ১ হাজার ৫১০ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। আর পাঁচ ধাপে উপজেলা নির্বাচনে ৪৯২ উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার নেতা নৌকার টিকিট কিনেছিলেন চেয়ারম্যান হতে। আবার আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক কিংবা বিভিন্ন উপ-কমিটির সদস্য পদধারী ‘কেন্দ্রীয়’ নেতার পরিচয়ে এলাকায় গিয়ে দাপট দেখাতেন এমন নেতার সংখ্যাও ৫ হাজারের বেশি। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ও সদ্য আঘাত হানা প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে নেই এসব মৌসুমি নেতা।
সূত্রমতে, বরগুনা-১ এ চলমান প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ও প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের এই দুর্যোগের ঈদেও ত্রাণ বিতরণ তো দূরের কথা, টেলিফোনেও খোঁজখবর নেননি অধিকাংশ নেতা।
একইভাবে নেত্রকোনা-১ আসনে নৌকা পেতে ২৬ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। হাতেগোনা দু-একজন ছাড়া সবাই গা-ঢাকা দিয়েছেন। একই অবস্থা ফরিদপুর-১ আসনে। এখানে নৌকা পেতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন ১৫ জন। শুধু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই নয়, সদ্য অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা-৩ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ২৫ জন দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু সেখানে মনোনয়ন পান কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি। করোনার সংকট শুরু হওয়ার পর থেকেই মাঠ ছাড়া অধিকাংশ মনোনয়নপ্রত্যাশী।
দলীয় সূত্রমতে, সরাসরি সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ছাড়াও সংরক্ষিত নারী আসনে দলের মনোনয়ন পেতে নায়িকা-গায়িকাসহ ১ হাজার ৫১০ জন নারী নেত্রী দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। এর মধ্যে ৪৩ জন দলের মনোনয়ন পেয়ে বর্তমানে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। অনেকের কাজই দৃশ্যমান নয়। আর যেসব নায়িকা-গায়িকা নৌকা পেতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন তাদের মধ্যে একজনকে কিছু ত্রাণ দিতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি এমপি-মন্ত্রীর চেয়ে মাঠের রাজনীতিতে পোড় খাওয়ারাই এলাকায় জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ ছাড়া এমপি হয়ে যারা রাতারাতি টাকা বানিয়েছেন, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন, তারাও জনগণের বিপদে পাশে নেই। গা-ঢাকা দিয়েছেন স্যুটেট-বুটেট পরিহিত হঠাৎ গজিয়ে ওঠা নেতারা। যাদের দেখা মিলত সচিবালয়, রাজধানীর নামিদামি তারকা হোটেলে কিংবা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে।
সূত্র: বিডি প্রতিদিন