বরগুনায় ঈদের দিন বিকেলে শত শত স্থানীয় পর্যটকের সামনে কিশোর হৃদয়কে (১৭) হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূল নির্দেশদাতা স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিক কাজির (৫০)। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেই রফিক কাজি তার সন্ত্রাসীবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন হৃদয়সহ হৃদয়ের বন্ধুদের ওপর হামলা চালাতে। আর এই নির্দেশ পেয়েই হৃদয়ের ওপর হামলা চালায় রফিক কাজির সন্ত্রাসীবাহিনী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় এলাকাবাসী এ তথ্য দিয়েছেন। এ ঘটনায় বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটার দিকে প্রেস ব্রিফিং করেছে বরগুনা জেলা পুলিশ।
হৃদয়ের একাধিক বন্ধু ও প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের দিন বিকেলে সাত বন্ধু মিলে একসঙ্গে সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের স্থানীয় পর্যটন কেন্দ্র গোলবুনিয়া ঘুরতে যায় হৃদয়। সেখানে পৌঁছার পর আকস্মিকভাবে হৃদয়ের সঙ্গে দেখা হয় তার পরিচিত এক বন্ধুর। এসময় তার সাথে কুশল বিনিময় করে হৃদয়। এরই মধ্যে হৃদয় এবং হৃদয়ের ওই বন্ধুকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করে রফিক কাজির ছেলে ইউনুস কাজি (১৭)। ইউনুস কাজিও হৃদয়ের সাথে একত্রেই বরগুনার টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। বাজে মন্তব্য করায় ইউনুস কাজির সাথে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে ইউনুস কাজিকে একটি থাপ্পর মারে হৃদয়। যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই উভয় পক্ষের মধ্যে বিষয়টি মিটমাট হয়ে যায়।
কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে মিটমাট হলেও ইউনুস কাজি তার পিতা স্থানীয় ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিক কাজিকে গিয়ে হৃদয়ের বিষয়ে নালিশ করে। এরপর রফিক কাজি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেই তার সন্ত্রাসীবাহিনীকে নির্দেশ দেন হৃদয়সহ হৃদয়ের বন্ধুদের ওপর হামলা চালাতে। এরপরই ইউনুস কাজি, নয়ন, হেলাল, নোমান, আবীর এবং তণীকসহ রফিক কাজির সন্ত্রাসীবাহিনী লাঠিসোটা নিয়ে হৃদয়ের ওপর হামলা চালায়। এসময় হৃদয় দৌড়ে বাঁচতে চাইলেও তাকে তাড়া করে পেটাতে থাকে ইউনুস কাজি, নয়ন, হেলাল, এবং নোমানসহ ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল। একপর্যায়ে লাঠির প্রচণ্ড আঘাতে অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়ে হৃদয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রফিক কাজির দস্যুতার এমন ইতিহাস অনেক পুরান। ২০০৪ সালে তুচ্ছ ঘটনায় আপন ভাই কনু কাজিকে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি করে নাড়ি-ভুড়ি বের করে দিয়েছিলেন রফিক কাজি নিজেই। ভাগ্যগুণে গুলি খেয়েও বেঁচে যান তার ভাই কনু কাজি। পরে এ ঘটনায় সালিশ মীমাংসার মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে তা মিটমাট হয়ে যায়। স্থানীয় ওয়ার্ড সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ নেতার প্রভাব খাটিয়ে অন্যের রেকর্ডকৃত জমিতে মাছের বিশাল ঘের বানিয়েছেন রফিক কাজি জবরদখল করে। পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার কথা বলে স্থানীয় শত শত গ্রাহকের কাছ থেকে তিনি টাকা তুলেছেন। ঘর প্রতি ২৫’শ থেকে ৩২’শ টাকা পর্যন্ত তিনি নিজের পকেটে ভরেছেন।
চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘সিকো’ কম্পানির বেড়িবাঁধ উন্নয়ন ও নদী তীর সংরক্ষণের জন্য ব্লক তৈরির কাজে প্রভাব খাটিয়ে শ্রমিক নেতা হয়ে সুকৌশলে সেখান থেকে তিনি লাখ টাকার মালিক হয়েছেন। গ্রামে জমিও কিনেছেন লাখ লাখ টাকার। অথচ বছর কয়েক আগেও দু’বেলা দু’মুঠো ভাত যোগাড় করতেও তার বেগ পেতে হত। স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা রফিক কাজির ক্ষমতার দাপটে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না কেউই।
বিশেষ করে রফিক কাজির ভাগনে আহসান (৩৫), হাসান (৩২), আমীর হোসেন (২৫), ভাইয়ের ছেলে রাজা (৪০), নোমান (২২), জুয়েল (২০) এবং সোহাগসহ (২২) তার অনুসারী বনি আমিন (৩৫) এবং জাফর সিকদারদের (৪৫) ভয়ে রফিক কাজির বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না কেউই। কালের কন্ঠ