শ্বেতাঙ্গ এক পুলিশ সদস্যের হাঁটুচাপায় কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে পুরো যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির মিনিয়াপোলিস শহরে বিক্ষোভের যে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল তা এখন দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়েছে। কারফিউ উপেক্ষা করে টানা ষষ্ঠদিনের মতো কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের মৃত্যুর প্রতিবাদে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে ন্যায় বিচারের দাবি তুলেছেন।
বিক্ষোভ-প্রতিবাদ সহিংস আকার ধারণ করায় দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে কারফিউ জারি এবং সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা সবকিছু উপেক্ষা কয়েকদিন ধরে টানা সহিংস তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছেন। দোকানপাট, এটিএম বুথ, সরকারি-বেসরকারি ভবনে হামলা লুটপাট করছে বিক্ষোভে অংশ নেয়া কিছু মানুষ। সহিংস এই বিক্ষোভ দমাতে জর্জিয়াসহ বেশ কয়েকটি শহরে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
দেশটির অন্তত ৩১টি রাজ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে; বিভিন্ন ভবন, দোকানপাট ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। ইতোমধ্যে দেশটির এক পুলিশ সদস্য বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে মারা গেছেন; গ্রেফতার করা হয়েছে দেড় হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে।
পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ায় হুশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রয়োজনে হিংস্র কুকুর মোতায়েন করে বিক্ষোভকারীদের ঘরে ফেরানো হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি। মোতায়েনকৃত দাঙ্গা পুলিশের সদস্যরা বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।
মিনিয়াপোলিস শহরে পাঁচদিন আগে ৪৬ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে হাঁটুর নিচে চেপে রেখে হত্যা করেন শ্বেতাঙ্গ এক পুলিশ সদস্য। ডেরেক চওভেন নামের ওই পুলিশ সদস্যকে রোববার আদালতে তোলা হবে; যার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্য ডেরেক চওভেন দুই পকেটে হাত ঢুুকিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন। আর তার হাঁটুর নিচে চাপা পড়ে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড বাঁচার তীব্র আঁকুতি করছেন। পাঁচ মিনিটের বেশি সময় ধরে হাঁটুচাপা দিয়ে রাখা হাতকড়া পড়ানো জজং ফ্লয়েডকে এসময় বারবার বলতে শোনা যায়, তিনি নিশ্বাস নিতে পারছেন না।
শেষের দিকে তিনি পানির জন্য আকুতি জানান। এ সময় বেশ কয়েকজন পথচারী পুলিশের এমম নির্মম আচরণের নিন্দা জানিয়ে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। হাঁটুচাপায় ফ্লয়েড যখন আর কোনও সাড়া শব্দ করছিলেন না তখন পথচারীরা কান্না করে বলতে থাকেন, সম্ভবত সে মারা গেছে। দয়া করে তাকে পরীক্ষা করুন।
এসময় ঘটনাস্থলে থাকা অন্য তিন পুলিশ সদস্য পথচারীদের ধমকাতে থাকেন। এক পর্যায়ে পুলিশের হাঁটুর নিচেই প্রাণ হারান ফ্লয়েড।
কৃষ্ণাঙ্গ এই যুবকের এমন নির্মম মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না মার্কিনিরা। শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ-নির্বিশেষে সব শ্রেণিগোষ্ঠীর মানুষ এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে লকডাউন, কারফিউকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ব্যাপক-জ্বালাও পোড়াও শুরু করেছেন।
সূত্র: বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস।