গত ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লিতে মুসলিম গণহত্যার ঘটনায় পুলিশ যে সবশেষ চার্জশিট পেশ করেছে তাতে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের নাম উল্লেখই করা হয়নি।
বরং দিল্লি পুলিশের অভিযোগপত্রে ওই গণহত্যার জন্য প্রধানত দায়ী করা হয়েছে সেই সব প্রতিবাদকারীদের, যারা শহরের নানা প্রান্তে তখন দেশের মুসলিম বিরোধী বিতর্কিত নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন।
ওই গণহত্যার ঘটনায় যেসব এফআইআর দায়ের করা হয়েছে বা গ্রেপ্তার হয়েছে – তা থেকে পরিষ্কার, ওই বিক্ষোভে জড়িত মুসলিম নেতা বা ছাত্রছাত্রীদেরই এখন দোষী বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে দিল্লির উত্তর-পূর্ব প্রান্তে গেরুয়া সন্ত্রাসী হামলায় ৫৩ জনের অধিক মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছিলো।
তার ঠিক আগে শহরে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদ চলছিল – এবং পাশাপাশি বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরাও প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে নানা উসকানিমূলক বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছিলেন।
দিল্লি বিজেপির বিতর্কিত নেতা কপিল মিশ্রা ২৩ ফেব্রুয়ারি শহরের মৌজপুর চকে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েই হুমকি দিয়েছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতে থাকা অবধি তারা চুপ থাকবেন – কিন্তু তারপরও বিক্ষোভকারীরা রাস্তা খালি না-করে দিলে তারা জোর করে তাদের তুলে দেবেন, পুলিশের কথাও শুনবেন না।
এর কিছুদিন আগে বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর এই প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশ্য করেই জনসভা থেকে স্লোগান দেন “দেশের সঙ্গে যারা বেইমানি করছে তাদের গুলি করে মারা হবে।”
কিন্তু দিল্লি পুলিশের চার্জশিটে গণহত্যা কীভাবে হল, তা নিয়ে যে দীর্ঘ ঘটনাপরম্পরা বর্ণনা করা হয়েছে তাতে এসব বক্তৃতার কোনও উল্লেখই নেই।
‘তদন্ত হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে’
দিল্লির গণহত্যায়পীড়িতদের হয়ে অনেকগুলো মামলা লড়ছে আইনজীবী কলিন গঞ্জালভেস।
তিনি বলছিলেন, “গণহত্যার সময় পুলিশের বিরুদ্ধেই মারধর, অগ্নিসংযোগ বা ভয় দেখানোর অন্তত আশি-নব্বইটা অভিযোগ এসেছে, কিন্তু পুলিশ একটারও এফআইআর নিতে রাজি হয়নি।”
“আর ভিক্টিমদের বয়ানের ভিত্তিতে নয়, পুলিশ তদন্তটা সাজিয়েছে তাদের বানানো গল্প আর সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে। অথচ আমরা সবাই জানি গণহত্যার মূলে ছিল বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের ঘৃণা ছড়ানো ভাষণ!”
সাংবাদিক-অ্যাক্টিভিস্ট সারা নাকভিও বিবিসিকে বলছিলেন, “বেশির ভাগ টিভি চ্যানেলের ন্যারেটিভে যেভাবে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের দেশদ্রোহী সাজানো হয়েছে – দিল্লি পুলিশও ঠিক সেই লাইনেই তদন্ত করেছে।”
“মনে রাখতে হবে ওই প্রতিবাদ ছিলো নাগরিকদের সমানাধিকারের দাবিতে একটা সিভিল রাইটস মুভমেন্ট। আর দিল্লি পুলিশের চার্জশিট পড়লে মনে হচ্ছে মুসলিমরা এতই চালাক আর ক্ষমতাশালী যে তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে!
দিল্লিতে শাহীনবাগ, জামিয়া মিলিয়া বা জাফরাবাদের মতো যারা নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন, দিল্লি পুলিশ গণহত্যায় তাদের ভূমিকা বিস্তারিত বর্ণনা করেছে – এবং এরা প্রায় সবাই মুসলিম। সূত্র: বিবিসি।