করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত নগরী নিউইয়র্ক এখন নতুন সংকটের সম্মুখীন। অনেকটাই ভেঙে পড়েছে নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। নগরীতে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে অপরাধ। অস্ত্র–সহিংসতা অতীতের রেকর্ড ছড়িয়ে গেছে। গত নয় দিনে নিউইয়র্ক নগরীতে গোলাগুলিতে ১০০ জনের বেশি আহত হয়েছে। নগরীর পাঁচ বরোতে নয় দিনে ৮৩টি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
২৮ জুন নিউইয়র্ক পুলিশের দেওয়া বিবরণী থেকে জানা গেছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৫০৩টি গোলাগুলির ঘটনার শিকার হয়েছে ৬০৫ জন লোক।
‘ডিফান্ড পুলিশ’ নামের আন্দোলন জোরালো হওয়ার পর নগরীর অপরাধপ্রবণতায় নতুন মাত্রা পেয়েছে। এনওয়াইপিডির কমিশনার ডারমট শিয়া গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, নগরীতে খুন পাঁচ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। আগের বছরের চেয়ে এ পর্যন্ত ৪২ শতাংশের বেশি লোক এ নগরীতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। প্রথম আলো
ব্রুকলিনের কমিউনিটি সংগঠক টনি হার্বার্ট সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর আগে গত পাঁচ বছরে নগরীর অপরাধপ্রবণতা কমে আসছিল। হঠাৎ করে মাত্রাহীন অপরাধ বেড়ে যাওয়ার এমন পরিস্থিতি নিজের জীবনে আর দেখেননি বলে জানান এ সংগঠক।
২৭ জুন ব্রুকলিনের ব্লক পার্টিতে এক নারীসহ দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ওই নারী এখন হাসপাতালে জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। ভোররাতের দিকে পার্টিতে গোলাগুলি শুরু হলে ৩০ বছর বয়সী ওই নারী গুলিবিদ্ধ হন। একই ঘটনায় ৩১ বছরের আরেকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। ওই দিন প্রকাশ্য দিবালোকে ব্রুকলিনে বাসার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন আরেক ব্যক্তি। এক সপ্তাহ আগে ব্লকের মধ্যে নিজের গাড়ি পরিষ্কার করার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন আরেকজন। ব্রুকলিনে গোলাগুলির কয়েক ঘণ্টা আগে পুলিশ ১৬ বছরের এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে। ওই কিশোরকে ইস্ট হারলেম এলাকায় আরেকটি গোলাগুলির ঘটনায় পুলিশ খুঁজছিলো। ওই ঘটনায় এক শিশুসহ দুজন গুলিবিদ্ধ হয়। এদিকে ২৬ জুন ম্যানহাটনে এরিকা লোপেজ নামের এক তরুণীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে পরদিন রুডি ওসিয়াস নামের একজনকে কুইন্স থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এনওয়াইপিডির পুলিশ ইউনিয়ন বলেছে, রাজনীতিকেরা অপরাধীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে ফেলেছেন। নগরীর মেয়র ও সিটি কাউন্সিল স্পিকার কোরি জনসন এসব ঘটনার জন্য দায়ী বলে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
নিউইয়র্কে করোনা–পরবর্তী সময়ে কর্মহীন লোকের সংখ্যা বেড়েছে। ২৫ মে মেনিয়াপোলিসে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর নাগরিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা আমেরিকায়। নিউইয়র্কে এ আন্দোলনের সুযোগে ব্যাপক লুটতরাজ হয়েছে। বিপুলসংখ্যক পুলিশ আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নিউইয়র্ক রাজ্য ও নগরী দ্রুত পুলিশ সংস্কারের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ নিয়ে পুলিশের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।