হত্যার ভয় দেখিয়ে জমি দখল সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ নেতার

0
858
হত্যার ভয় দেখিয়ে জমি দখল সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ নেতার

মানিকগঞ্জের শিবালয় সদর ইউনিয়নের বড় আনুলিয়া গ্রামের জাবেদ আহমেদ ভুইয়া। সত্তরের দশকে আরিচা ঘাটের পাশে ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৪২ শতাংশ জমি কিনেছিলেন। পরবর্তী সময়ে খাজনা-খারিজসহ সব কিছুই তাঁদের নামে লিপিবদ্ধ করা হয়। কেনা জমি থেকে জাবেদ আহমেদ কিছু জমি বিক্রি করেন স্থানীয় রেজাউল করিম, বিমল চন্দ্র ও বনমালীর কাছে। তাঁরা জমিটি কিনে নিয়ে নামজারি-খাজনা পরিশোধ করে ভোগদখল করছেন দুই যুগ ধরে। বিক্রির পরও জাবেদের অবশিষ্ট ১২ শতাংশ জমি ছিল। সেই জমিটি একমাত্র পুত্র জাহিদুর রহমানের বাড়ি করার জন্য রাখেন তিনি। হঠাৎ বৃদ্ধ জাবেদ ব্রেন স্ট্রোক করে বিছানায় পড়ে যান। তাঁর এই অসুস্থতার সুযোগ নেন স্থানীয় এমপি দুর্জয়ের ঘনিষ্ঠ শিবালয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস।

এমপি দুর্জয়ের অদৃশ্য ইশারায় জোরপূর্বক সেই জমি দখলে নেওয়ার পাঁয়তারা করেন রফিক ও কুদ্দুস। তাঁরা আদালতে জমির মালিকানা নিয়ে মিথ্যা মামলা করেন। মামলার কোনো ধরনের ফায়সালা না আসার আগেই এমপির প্রভাব খাটিয়ে রফিক গায়েন ও কুদ্দুস ক্যাডার বাহিনী দিয়ে বৃদ্ধের কোটি টাকা মূল্যের জমিটি দখলে নেন। সেই জমির শোকে মারা যান জাবেদ।

শিবালয়ে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, জাবেদের মৃত্যুর পর স্ত্রী হালিমা বেগম (৭৫) জমিটি উদ্ধারের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। কারণ যাঁরা জমিটি দখলে নিয়েছেন তাঁরা সবাই এমপি দুর্জয়ের খুবই ঘনিষ্ঠ। ‘জমির সামনে গেলেই লাশ পড়ে যাবে’—তাঁর ছেলেকে এমন হুমকি দিয়েছে রফিক ও কুদ্দুসের ক্যাডার বাহিনী। ভয়ে একমাত্র ছেলেকেও আর জমির কাছে যেতে দেন না হালিমা বেগম, চান না আর মামলাটিও চালাতে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেই জমিটিতে একতলা ভবন নির্মাণ করছেন আব্দুল কুদ্দুস। ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক নির্মাণকাজে ব্যস্ত। এটি কার বাড়ি নির্মাণ করছেন—জানতে চাইলে শ্রমিকরা বলেন, আব্দুল কুদ্দুস সাহেবের বাড়ি। তবে স্থানীয় মনির হোসেন বলেন, ‘সারা জীবন শুনলাম জমিটি জাবেদ আহমেদ ভুইয়ার জমি। তারাই এটার প্রকৃত মালিক। এখন শুনি রফিক গায়েন আর কুদ্দুসের জমি। সহজ-সরল মানুষের জমিটিতে চোখের সামনে জোর করেই বিল্ডিং তৈরি করছে, কেউ কিছু কইতে পারে না। এমপির দাপট দেখিয়ে এলাকায় যা ইচ্ছা তা-ই শুরু করছে এরা।’

হালিমা বেগম কান্নাজড়িত বলেন, ‘৫০ বছর আগে জমি কিনে আমরা ভোগ দখলে থাকলাম, সেই জমি রফিক গায়েন আর আওয়ামী লীগ নেতায় দখলে নিয়ে বাড়ি করতাছে। কিছুই কইতে পারি না, আমার একমাত্র পোলারে মাইরা ফেলার হুমকি দেয়। আমরা গরিব মানুষ, হেরা এমপির লোক, এই জুলুমের বিরুদ্ধে কি কেউ কথা বলার নাই?’ ছেলে জাহিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা জমিটি কিনেছি প্রায় ৪৫ বছর আগে। সেই জমি কয়েকজনের কাছে বিক্রি করেছিলাম, তাঁরাও ভোগদখল করছেন। কিন্তু ভুলে আরএস রেকর্ডে একটু নাম চলে আসায় জোর করেই কোটি টাকার জমি দখলে নিয়ে গেল, কিছুই বলতে পারছি না। আদালতে মামলা করেছি, সেটা উপেক্ষা করেই ভবন নির্মাণ করছে।’

জাবেদ আহমেদের কাছ থেকে রেজাউল করিম একই দাগের ৬ শতাংশ জমি কিনেছিলেন ১৯৮৮ সালে। সেই জমির নামজারি, খাজনা-খারিজ করে নিরাপদেই বসবাস করছিলেন পরিবার নিয়ে। কিন্তু ৩০ বছর পর এখন রফিক গায়েন ও আব্দুল কুদ্দুস তাঁর জমিও দখলে নিতে চান। রেজাউল করিম বলেন, ‘বসতবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে চায় রফিক গায়েন ও তাঁর লোকজন। কাগজপত্র সব ঠিক থাকলেও তারা আমাদের উচ্ছেদ করতে চায়।’ একই অভিযোগ করেছেন বিমল চন্দ্রও। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আব্দুল কুদ্দুস এমপির প্রভাব খাটিয়ে নিরীহ মানুষের জমিটি চোখের সামনেই জোর করে নিয়ে ভবনও নির্মাণ করছেন, কেউ কিছুই বলতে পারছে না। কালের কন্ঠ

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১০ থেকে ২০ গুণ বাড়তি বিদ্যুৎ বিলের বোঝা সাধারণ জনগণের উপর
পরবর্তী নিবন্ধনিউইয়র্কের সহিংসতার আসল রুপ প্রকাশিত হচ্ছে ধীরে ধীরে