রাস্তায় পড়ে থাকা বশির আহমেদের নিথর দেশ সামাজিক গণমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। অদ্ভুতভাবে এক শিশু বসে আছে তার বুকের উপর, অভাগা এক শিশু। যেকোন দিক থেকেই দেখা হোক না কেন ছবিটি উদ্বেগ সৃষ্টিকারী।
কাশ্মিরে মৃত্যু সর্বব্যাপী। এরপরও বুধবারের সকালটি ছিলো ব্যতিক্রম। রাস্তায় লাশের উপর বসে থাকা তিন বছর বয়সী শিশু, তারপর পুলিশের কোলে কাঁদতে থাকা, তারপর নতুন কাপড় পরিয়ে পুলিশের গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেয়া। সামাজিক গণমাধ্যমে এই কাহিনীর অনেক সংস্করণ ছড়িয়ে পড়ে। আমি যখন ভাবছিলাম আসলে কি ঘটেছে তখনই হুট করে ঘরে প্রবেশ করেন আমার মা। তিনি বলেন, এইচটিএমের বশির সাহেবকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সে আমার চাচা।
তার বাড়ির দিকে যাওয়ার সময় আমি সামজিক গণমাধ্যমে দেখা বশির সাহেব ও আমার ভাগিনা এবি (নাম প্রকাশ করা হলো না)’র ছবিটি বুঝতে চেষ্টা করছিলাম। প্রথমে আমি তাকে চিনতে পারিনি!
সকাল ছয়টার দিকে নাতিকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন বশির আহমেদ খান (৬৫)। তিনি হান্দওয়ারা যাচ্ছিলেন একজন গৃহকর্মীকে নিয়ে আসার জন্য। সোপরি মডেল টাউন এলাকায় মালাউন পুলিশের ক্রসফায়ারের মধ্যে পড়েন তিনি। সকাল সাড়ে আটটার দিকে এটি এ্যাম্বুলেন্স তার লাশ বাড়িতে দিয়ে যায়।
শিশুটির চাচি বলেন, তিনি বশির এবির নিরাপত্তা নিয়েই উদ্বিগ্ন ছিলেন; তার নাতিকে নিয়ে এ ধরনের বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়ার চেয়ে বুলেটের আঘাত তার কাছে কম কষ্টের হতো। নাতি বেঁচে আছে এ কথা জানার আগেই সে মারা গেছে। জীবন দিয়ে নাতিকে বাঁচিয়ে গেছে সে।
পুলিশ অস্বীকার করলেও বশিরের মৃত্যুর জন্য সরকারি বাহিনীকেই দায়ি করছে তার পরিবার। যারা বশিরের বাড়িতে গেছে তাদের সবাই এ ব্যাপারে একমত। সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) তাকে গুলি করেছে। সেখানে শোক প্রকাশের জন্য জড় হওয়া লোকজনের মধ্যে শরবত বিতরণকারী এক লোক বলে, যখনই মালাউন বাহিনীর কেউ নিহত হয় তখনই তারা কোন নিরপরাধ বেসামরিক লোককে হত্যা করে প্রতিশোধ নেয়।
পুলিশ বলছে, ’জঙ্গিদের’ কাছ থেকে হুমকির কারণে পরিবারটি হত্যার দায় পুলিশকে দিচ্ছে। কিন্তু পরিবারটি এক কথা অস্বীকার করে। বশিরের ছেলে ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা আতঙ্কে পাথর হয়ে গেছি। আমরা প্রিয়জনকে হারিয়েছি। সত্য কথা বলতে কে আমাদেরকে বাধা দেবে? আমাদের আতঙ্ক কাশ্মির জুড়ে অগনিত ভারতীয় সেনাদের নিয়ে।
পুরনো নগরীর কাফালি মহল্লায় খানের পূর্বপুরুষদের গোরস্তান। কিন্তু তার পরিবার তাকে ঈদগাহের কাছে শহিদি গোরস্তানে দাফন করেছে। সেখানে তিনটি নতুন কবর খোঁড়া হয়েছিলো। একটিতে পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত জুনিমারকে কবর দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পুলিশ তাকে সেখানে কবর দিতে দেয়নি। পুলিশি হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার কারণেই বশিরকে সেখানে কবর দেয়া হয়। কিন্তু পুলিশ যদি এই পরিকল্পনা টের পেতো তাহলে তাকেও সেখানে দাফন করতে দিতে না বলে খানের ছোট ভাই সাজাদ আহমেদ জানান।
সূত্র: দি ওয়্যার