ইতালীয় নাগরিক আয়েশা রোমানো সোমালিয়াতে মুজাহিদদের হাতে আটক হয়েছিলেন। মুজাহিদগণের কাছে বন্দী থাকাবস্থায় ইসলাম সম্পর্কে জানতে পেরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর মুজাহিদগণ তাঁকে মুক্তি দেন। সম্প্রতি তিনি ইতালীয় পত্রিকা “লালুকা”য় একটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন। উক্ত সাক্ষাতকারে তিনি তার ইসলাম গ্রহণের কারণ ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বর্ণনা করেছেন। ইতালীয় ভাষায় প্রকাশিত উক্ত সাক্ষাতকারটি আরবিতে ভাষান্তর করেছেন আল-কায়েদা শাখা হারাকাতুশ শাবাব মুজাহিদিন এর অফিসিয়াল সংবাদমাধ্যম “শাহাদাহ্ নিউজ”। আমরা উক্ত সাক্ষাতকারটির বাংলা অনুবাদ বাংলাভাষী পাঠকদের সামনে পেশ করছি-
প্রশ্ন: সেখানে যাওয়া এবং আটকের পূর্বে ধর্ম সম্পর্কে আপনার চিন্তা-চেতনা কেমন ছিল?
আয়েশা: আটকের আগে আমি আল্লাহ্ তা’আলার অস্তিত্ব সম্পর্কে উদাসীন ছিলাম। বলা চলে, সেই সময় আমি কাফের ছিলাম। যখন বিশ্বের অগণিত ট্র্যাজেডির কিছু শুনতাম, তখন আমি মাকে বলতাম: “যদি কোনো ইলাহ থাকতেন, তবে এতো খারাবী থাকতো না। আমি বিশ্বাস করি আল্লাহর কোনো অস্তিত্ব নেই। অন্যথায় তিনি এই সমস্ত দুঃখ এবং কষ্ট-ক্লেশের সুযোগ দিতেন না।” তবে আমি এই বিষয়গুলো খুব কমই ভাবতাম, বেশিরভাগ সময়ই আমি উদাসীন থাকতাম। আমি আমার ইচ্ছা ও স্বপ্নের বাস্তবায়ন এবং জীবনটাকে উপভোগ করার পেছনে মেতে ছিলাম।
প্রশ্ন: সেই সময় আপনার চরিত্র কেমন ছিল?
আয়েশা: আমার পছন্দ-অপছন্দ ছিল ভালো-মন্দের একমাত্র মানদণ্ড। আজ আমি জানি এটা কেবল কল্পনা ছিল।
প্রশ্ন: কোন অনুভূতি আপনাকে দুর্বলদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সাহায্য করতো? কেন ইতালি ছেড়ে চলে গেলেন?
আয়েশা: ভার্সিটিতে অধ্যয়নের শেষের দুই বছর বহিরাঙ্গনে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে বিশেষ আগ্রহী ছিলাম না, তবে যৌন ব্যবসা বিষয়ে আমার একটি প্রবন্ধ এ কাজে আমাকে বেশ সাহায্য করেছে। তখন থেকে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহী হতে থাকি।
প্রশ্ন: আপনি কি অধিক পরিমাণ দয়াশীল?
আয়েশা: আমি সবসময় সহানুভূতিশীল। নারী ও শিশু, বিশেষত নির্যাতিত নারীদের নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমি সর্বদা তাদের প্রতি করুণা বোধ করতাম। তবে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করার পর এবিষয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। স্থির করি যে, কাজের উপযুক্ত সময় এটাই। এখানে থাকা ও আরো পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবোনা। আমি অভিজ্ঞতা অর্জন, অন্যকে সহায়তা এবং আত্মিক উন্নয়নে আগ্রহী ছিলাম।
প্রশ্ন: আপনি বিভিন্ন জাতের মানুষের গ্রামে বড় হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে আপনার পরিবারের অবস্থান কেমন?
আয়েশা: আমি ভায়া পাডোভা ও পারকো ট্রোটার অঞ্চলে বড় হয়েছি এবং সেখানকার স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেছি। এখানে বিভিন্ন জাতের মানুষের বসবাস ছিল। আমার বাবা-মা খোলা মনের মানুষ ও সহনশীল। তারা জাতিগত বৈষম্যে বিশ্বাস করেন না। আমার বন্ধুদের অনেকে ভিন্ন মতের ছিল। আমার বাবা-মা আমাকে বিরোধী মতকে সম্মান করতে শিখিয়েছেন। আমি আমার মায়ের সাথেও অনেক ভ্রমণ করেছি। প্রতি গ্রীষ্মে আমরা মরক্কো, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, মিশর এবং কেপ ভার্ডের মতো বিভিন্ন দেশ পরিদর্শন করেছিলাম, তবে এই দেশগুলোতে আমাদের ভ্রমণ সীমাবদ্ধ ছিলনা।
প্রশ্ন: প্রাথমিক জীবনে মুসলমানদের সাথে নূন্যতম উঠাবসা ছিল?
আয়েশা: হ্যাঁ, তবে দুর্ভাগ্যক্রমে ইসলাম সম্পর্কে আমার ধারণা ঐ লোকদের মতোই ছিল যারা ইসলাম সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞ। ভায়া পাডোভাতে হিজাব পরিহিতা কোনো নারীকে দেখলে ভাবতাম, সে নিপীড়নের শিকার। আমার ধারণায় হিজাব ছিল নারীদের নিপীড়নের সমার্থক।
প্রশ্ন: “সিলভিয়া রোমানো” (আয়েশা) কি অন্য আরেকটি “ইসলামফোবিয়া”এর অবস্থা তৈরি করতে পারে?
আয়েশা: আমি আমার পূর্বেকার মতাদর্শে প্রভাবিত ছিলাম, কিন্তু ভিন্নতায় ভীত ছিলাম না। ভিন্ন কিছুর প্রতি বৈরী ভাবাপন্নও ছিলামনা। কিছু বিষয়ে আমার নেতিবাচক মতামত থাকলে সেটা প্রকাশ করে বেড়াতাম না। কারণ মানুষের মনে আঘাত করা আমার স্বভাব নয়। আমার পূর্বের আদর্শ আমায় সেসকল লোকদেরকে বুঝতে সাহায্য করেছে , যারা এখনও ইসলাম সম্পর্কে জানে না, এবং পূর্বের আদর্শকে দাঁত কামড়ে ধরে আছে। কিন্তু এখন আমি বলতে পারি যে আমি তখন অজ্ঞ ছিলাম। তখন আমি ইসলামের ব্যাপারে অজ্ঞ হয়েও ইসলামের নিন্দা করেছি। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় যে, আপনি ভিন্ন ধর্মের মানুষের কাছাকাছি থেকেও কখনো তাদের ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ বোধ করবেন না। নিজের আদর্শ নিয়ে পড়ে থাকবেন।
প্রশ্ন: কেনিয়ার “তাশাকামা” গ্রামে কি মুসলিম ছিল, যেখানে আপনি স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে কাজ করতেন?
আয়েশা: হ্যাঁ, সেখানে মসজিদ ছিল। মুসলমান ছিল।আমার এক কাছের বন্ধু মুসলিম ছিল। তবে সেসময় এগুলো আমাকে ইসলাম গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেনি। আমি আমার বন্ধুকে জুমা’আর দিন পাঞ্জাবি পড়তে দেখেছি, মানুষকে জুমা’আর নামায পড়ার জন্য মসজিদে যেতে দেখেছি। ছোট মেয়েদের হিজাব পরতে দেখেছি। তখন এই বিষয়গুলো ইসলামের প্রতি বিশেষ কোনো আকর্ষণ সৃষ্টি করেনি।
প্রশ্ন: আপনি কখন আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া শুরু করেছিলেন? এমন কোনো মুহূর্ত ছিল কি যখন আপনি নিজের ভেতরে কোনো আওয়াজ শুনতে লাগলেন? এমন কোনো বিষয় ছিল কি, যা আপনার চেতনা ও হৃদয়ের জানালা খুলে দিয়েছে?
আয়েশা: কিডন্যাপ হবার পর আমি ভাবতে লাগলাম, “আমি স্বেচ্ছাসেবার জন্যে এসেছি, আমি এখানে ভালো কাজ করছি, তাহলে কেনো আমার সাথে এমনটা হচ্ছে? আমি কী অপরাধ করেছি? আমিই কেনো কিডন্যাপের শিকার হলাম? অন্য কোনো মেয়ে নয় কেনো? তবে কি এসব কোনো নিপুণ পরিকল্পনার অধীনে ঘটছে?
আমার বিশ্বাস, প্রশ্নগুলো অবচেতনভাবেই আমাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিয়েছিল। এরপর আমার রূহানী যাত্রা শুরু হয়। এই ভ্রমণে এসব নিয়ে যতো ভেবেছি ততোই মানসিক চাপে নিষ্পেষিত হয়েছি। আমার কাছে এসবের কোনো জবাব ছিল না, কিন্তু জবাব তো আমাকে পেতেই হবে।
প্রশ্ন: এই প্রশ্নগুলো কি আপনার মধ্যে ভালো অনুভুতি তৈরি করেছিল?
আয়েশা: না, যখনই আমি নিজেকে এই জাতীয় প্রশ্ন করতাম তখন অনেক কান্না আসতো এবং অসুস্থ বোধ করতাম। এসবের কোনো উত্তর না পাওয়ায় নিজের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলাম। আমি ক্রমশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলাম। আমার কাছে কোনো উত্তর ছিল না। আমি জানতাম, এসবের উত্তর আছে এবং আমাকে সেই উত্তরগুলো খুঁজে পেতে হবে। আমি বুঝতে পারছিলাম এখানে একটি শক্তি কাজ করছে, যা চিহ্নিত করতে পারছি না। আমি বুঝতে পারছিলাম এসবের পেছনে রয়েছে নিপুণ কোনো পরিকল্পনা।
——————-
বন্দিত্বের সময়টাতে আমি পরবর্তী ধাপে উপনীত হলাম। গভীরভাবে শুরু করলাম। হয়তো আল্লাহ আমাকে আমার পাপের শাস্তি দিচ্ছেন। কারণ আমি ঈমান আনয়ন করিনি। তাঁর সাথে সম্পর্ক স্থাপন থেকে দূরে থেকেছি।
পরবর্তী জানুয়ারিতে এর পরের ধাপে উপনীত হই। সোমালিয়ায় বন্দি ছিলাম। তখন ছিল গভীর রাত। আমি ঘুমিয়েছিলাম। আকস্মিক বিমান হামলার বিকট শব্দে জেগে উঠি। আমি ছিলাম কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মনে হচ্ছিল, আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে। আমি নামাজে দাঁড়িয়ে গেলাম। কায়মানোবাক্যে প্রার্থনা করলাম, আল্লাহ যেন এই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। পরিবারের লোকদের কাছে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছিল। মৃত্যুর ভয়ে আতঙ্কিত ছিলাম। এভাবে প্রথমবারের মতো আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছিলাম।
আমি কোরআন পড়লাম। কোনো বৈপরীত্য খুঁজে পেলাম না। আমার বুঝতে অসুবিধা হলো না যে, এটিই পারে মহা কল্যাণের সন্ধান দিতে। কোরআন আল শাবাব মুজাহিদদের বাণী নয়। আমি অনুভব করলাম, কোরআন অলৌকিকতার গুণসম্পন্ন। আমার আত্মিক অনুসন্ধান চলতে থাকলো। আল্লাহর অস্তিত্বের সত্যতা নিয়ে আরো আস্থা জন্মালো। এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ভাবতে লাগলাম, আল্লাহ তায়ালা আমাকে জীবন চলার পথ প্রদর্শন করেছেন। তা গ্ৰহণ করতে বা বর্জন করতে আমি পুরোপুরি স্বাধীন।
প্রশ্নঃ এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে আপনি কি কোনো শক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন?
আয়েশা: আমি হতাশ ছিলাম। ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলাম। এতদসত্ত্বেও, সময় এগিয়ে চলার সাথে সাথে এই অনুভূতি হচ্ছিলো, একমাত্র আল্লাহ পারেন আমাকে সাহায্য করতে। তিনিই পারেন আমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে।
প্রশ্ন: কোরআনের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল?
আয়েশা: প্রথমবার পুরো কুরআন পড়তে পূর্ণ দুই মাস সময় লেগেছে। দ্বিতীয়বার কুরআন অধ্যায়ন করেছি গভীর ধ্যান ও একাগ্রতার সাথে। আরো বেশি অধ্যায়নের তাগাদা সর্বক্ষণ অনুভব করতাম। এক পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণ করি। বেশ কিছু আয়াত আমার অন্তরে রেখাপাত করে। মনে হতো আমাকে উদ্দেশ্য করে সরাসরি আল্লাহ তায়ালা আয়াতগুলো বলছেন। ইঞ্জিল অধ্যয়ন করি। কুরআন ও ইঞ্জিল কোন কোন বিষয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ বা অভিন্ন তা জেনেছি। অবশেষে বুঝতে পারলাম কোরআন পবিত্র গ্রন্থ। এটি পারে আমাকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করতে।
প্রশ্নঃ এমন কোনো সূরা রয়েছে যা আপনার মনকে বিশেষভাবে আলোকিত করেছে ইসলাম গ্রহণের পূর্বে?
আয়েশা: যে আয়াত আমাকে আমি বেশি প্রভাবিত হয়েছি সেটি হচ্ছে:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّمَن فِي أَيْدِيكُم مِّنَ الْأَسْرَىٰ إِن يَعْلَمِ اللَّـهُ فِي قُلُوبِكُمْ خَيْرًا يُؤْتِكُمْ خَيْرًا مِّمَّا أُخِذَ مِنكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ۗ وَاللَّـهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
হে নবী, তাদেরকে বলে দাও, যারা তোমার হাতে বন্দী হয়ে আছে যে, আল্লাহ যদি তোমাদের অন্তরে কোন রকম মঙ্গলচিন্তা রয়েছে বলে জানেন, তবে তোমাদেরকে তার চেয়ে বহুগুণ বেশী দান করবেন যা তোমাদের কাছ থেকে বিনিময়ে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া তোমাদেরকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। ( আনফাল ৭০)
আমি কোরআনের প্রথম সুরা, সূরায়ে ফাতেহা মুখস্থ করেছিলাম। কীভাবে নামাজ পড়তে হয় তা ভালোভাবে জানতাম না, তবুও নামাজ পড়া শুরু করেছিলাম।
আরো যে সকল আয়াত আমার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল, সেগুলোর কয়েকটি হচ্ছে:
كَيْفَ تَكْفُرُونَ بِاللَّـهِ وَكُنتُمْ أَمْوَاتًا فَأَحْيَاكُمْ ۖ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরী অবলম্বন করছ? অথচ তোমরা ছিলে নিষ্প্রাণ। অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে প্রাণ দান করেছেন, আবার মৃত্যু দান করবেন। পুনরায় তোমাদেরকে জীবনদান করবেন। অতঃপর তারই প্রতি প্রত্যাবর্তন করবে। ( সূরা বাকারা ২৮)
إِن يَنصُرْكُمُ اللَّـهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْ ۖ وَإِن يَخْذُلْكُمْ فَمَن ذَا الَّذِي يَنصُرُكُم مِّن بَعْدِهِ ۗ وَعَلَى اللَّـهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ
যদি আল্লাহ তোমাদের সহায়তা করেন, তাহলে কেউ তোমাদের উপর পরাক্রান্ত হতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন, তবে এমন কে আছে, যে তোমাদের সাহায্য করতে পারে? আর আল্লাহর ওপরই মুসলমানগণের ভরসা করা উচিত। (আলে ইমরান ১৬০)
মনে হতো এই আয়াতগুলো আমাকে উদ্দেশ্য করে নাযিল করা হয়েছে।
প্রশ্নঃ নিয়তির অদৃশ্য ইশারায় আপনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। নামাজ পড়তে শুরু করলেন। নিয়তি বা ভাগ্য নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি? আপনি কি বিশ্বাস করেন যে আপনার ভাগ্য সুপ্রসন্ন?
আয়েশা: ঈমানের বিভিন্ন ধাপ রয়েছে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ওঠানামা করে। ইসলাম গ্রহণের পর আমার ভাগ্য নিয়ে আরো গভীরভাবে ভেবেছি। আমার বিশ্বাস আল্লাহ আমাকে ভালোবাসেন। তিনি আমাকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করবেন। যখন পরিবার-পরিজন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবে উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়ি তখন নামাজে দাঁড়িয়ে যাই এবং এক ধরনের স্বর্গীয় সুখ অনুভব করি। আমার বিশ্বাসের সাথে শক্তি-সাহস ও ধৈর্য প্রার্থনা করি। বিশেষত যখন আমি বিষন্ন থাকি।
প্রশ্ন: আপনি ভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করেছেন। আপনার জীবনে এসেছে আমূল পরিবর্তন। আপনি ভিন্ন এক ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছেন। এ নিয়ে আপনার অনুভূতি কেমন?
আয়েশা: ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কোনো এক পর্যায়ে আমার মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মেছিল যে, অনুসরণযোগ্য সঠিক ধর্ম একমাত্র ইসলাম। একসময় মনে হলো যে ইসলাম গ্রহণের জন্য আমি প্রস্তুত। কিন্তু লোকে কি বলবে তা নিয়ে আমার মনে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করতো। আপনজনদের পক্ষ থেকে যেসব আচরণ ও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি আমাকে হতে হবে সেগুলো উপেক্ষা করে নিজ বিশ্বাসের অবিচলতা কামনা করে নামাজ পড়তাম।
প্রশ্নঃ আপনি এখন যে সকল বাধা-বিপত্তির মুখোমুখি হচ্ছেন সে সম্পর্কে আপনার কোনো পূর্ব ধারণা ছিল?
আয়েশা: অবশ্যই, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের জীবনী অধ্যয়নের মাধ্যমে আমি তা আঁচ করতে পেরেছিলাম। ইসলাম গ্রহণের ফলে সাহাবায়ে কেরামকে যেসকল বৈরিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, আমাকেও সেসবের মুখোমুখী হতে হবে, তা বেশ ভালোই অনুমান করতে পেরেছিলাম।
প্রশ্ন: আপনি আপনজনদের পক্ষ থেকে যে বৈরিতার আশঙ্কা করছেন, আপনার মতে তার কারণ কী?
আয়েশা: জুলুম, অর্থবিলি, ফ্যাসাদ ও অন্যায়ের উপর ভিত্তি করে যেসকল মতাদর্শ টিকে আছে, স্বভাবতই ইসলাম তা সমর্থন করে না। তাই এসব মতাদর্শ ইসলামকে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করে।
প্রশ্নঃ মনে হচ্ছে আপনার ইসলাম গ্রহণে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েছে। কারণ তাদের ধারণা মতে আপনি ছিলেন স্বাধীন। যেখানে খুশি যেতে পারতেন। যা ইচ্ছা করতে পারতেন। যা ইচ্ছা পরিধান করতে পারতেন। তাদের ধারণা মতে আপনি নিজের জন্য যে ধর্ম বেছে নিয়েছেন, তাতে আপনার স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়েছে। এখন আপনাকে পুরুষের সামনে নত হয়ে থাকতে হবে। এটা কীভাবে সম্ভব?
আয়েশা: স্বাধীনতার মর্মার্থ এখানে অপ্রাসঙ্গিক। তাছাড়া স্বাধীনতা একটি আপেক্ষিক বিষয়। অনেকের মতে নারীর স্বাধীনতা মানে হচ্ছে, দেহকে আবরণমুক্ত রাখার স্বাধীনতা। পোশাক পরার স্বাধীনতা। অবশ্য আপনি স্বাধীন এ কথা বোঝানোর জন্য তাদের পছন্দের পোশাকই আপনাকে পরতে হবে। অতীতে আমি নিজেকে স্বাধীন বলে জানতাম। অথচ আমি সর্বক্ষণ তাদের চাহিদার ছিলাম। এটা প্রকাশ পেল ঠিক তখন যখন আমি অন্য পোশাকে আত্মপ্রকাশ করলাম। আমি যে পোশাক নিজের জন্য বেছে নিয়েছি, তা তাদের মনঃপুত হল না। তারা আমাকে আঘাত করতে শুরু করলো।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন যে চলাফেরা কাজকর্ম ও মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাতের ক্ষেত্রে এখন আপনার স্বাধীনতা কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়েছে?
আয়েশা: আমি যখন বাহিরে বের হই তখন অনেকেই আমার দিকে তাকায়। জানিনা, তারা কেন তাকায়। হতে পারে তারা আমাকে চেনে বলে তাকায়। আবার হতে পারে হিজাবের কারণে তাকায়। আমার মনে হয় একজন ইতালীয় নারীকে এই পোশাকে দেখে তারা চমকিত হয়। তবে এতে আমি মোটেও বিচলিত নই। বরং আল্লাহ প্রদত্ত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বোধ আমার অনুভূতিতে জাগরুক থাকে।
প্রশ্ন: আপনি নিজের নাম পরিবর্তন করেছেন। এর পেছনে কোনো রহস্য আছে কি?
আয়েশা: এক রাতে স্বপ্নে দেখলাম, আমি ইতালিতে আছি এবং আমাকে ট্রেন ধরতে হবে। ট্রেনের যে টিকেট আমি পেলাম তাতে আমার নাম আয়েশা লেখা ছিল।
প্রশ্নঃ আপনি কি মনে করেন যে আপনি আগের চেয়ে ভালো আছেন?
আয়েশা: আমার যথেষ্ট ধৈর্য রয়েছে। পিতা-মাতার প্রতি রয়েছে অনেক শ্রদ্ধাবোধ। দান করতে পছন্দ করি, অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হই। যখন কেউ আমার সাথে খারাপ আচরণ করে, এমনকি জুলুম করে তখন আমার মনে কোনো অকল্যাণের চিন্তা আসেনা। আমি তার প্রতি ক্রোধান্বিত হইনা। অধিকাংশ সময় অন্যের বাড়াবাড়ির জবাব দিতে আগ্রহ বোধ করিনা। বরং তাকে বোঝার চেষ্টা করি। আমার বিশ্বাস, সে নিজেই ভোগান্তির শিকার। সম্ভব হলে তাকে সহযোগিতা করা আমার কর্তব্য।
প্রশ্নঃ ইতালির মুসলিমদের থেকে আপনি কী আশা করেন?
আয়েশা: মুসলমানদের সাথে পরিচিত হতে আমার তর সইছিলনা। তবে মনে করছিলাম কাজটি বেশ কঠিন হবে। পরিকল্পনামাফিক আমি মুসলিম মার্কেটে যাই। এক দোকানিকে আসালামু আলাইকুম বলি। হাব দেখে মনে হলো না, তারা আমাকে চেনে। ভাবলাম রমজান মাস তাহলে নিঃসঙ্গভাবে কাটবে। কিন্তু ঘটলো ঠিক এর উল্টোটা। প্রচুর পরিমাণে উপঢৌকন, স্বাগতা বার্তা, ইমোশনাল ভিডিও আসতে থাকে। আমার আনন্দের সীমা রইলো না। তাদের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা বোধে আচ্ছাদিত হলাম।
প্রশ্ন: সমাজের কোন বিষয়টি আপনাকে সবচেয়ে বেশি পুলকিত করেছে?
আয়েশা: প্রথমে মনে করেছিলাম ইতালিতে মুসলমানের সংখ্যা একেবারে হাতে গোনা হবে। ভেবেছিলাম আমাকে প্রথমত মিসর, মরক্কো ও আফ্রিকার মুসলমানদের সাথে সাক্ষাত করতে হবে। কিন্তু না, আমার সাক্ষাত হলো ইতালির মুসলমানদের সাথে। আমার জন্য এটি ছিল অবাক হওয়ার মতো বিষয়। সমাজের ঐক্য আমাকে অভিভূত করেছে। শুধু ‘মিলানো’তে নয়; সর্বত্র একই অবস্থা। আমার অনুভূতি ছিল এমন যে, আমি আমার দ্বিতীয় পরিবারের মাঝে বাস করতে এসেছি।
ধীরে ধীরে আরো অনেক কিছুই জানতে পারি। ‘মিলানো’ এবং ‘মিলানো’র বাহিরে এমন অনেক ইসলামী সংস্থার সাথে পরিচয় হয়েছে, যাদের কাজ প্রধানত দুর্বল, অভাবী ও নির্যাতনের শিকারদের পাশে দাঁড়ানো। এসব আমাকে তাদের সেবামূলক কাজে অংশ নিতে অনুপ্রাণিত করেছে।
আলহামদুলিল্লাহ অনেক সুন্দর একটি সাক্ষাৎকার জাযাকুমুল্লাহু খাইরান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সকল মানুষকে এই সমস্ত কথাগুলো বুঝার তৌফিক দান করুক আমিন
ভাই আল ফিরদাউস নামে একটা অ্যাপস তৈরি করেন ইনশাআল্লাহ