একের পর এক নৃশংস ঘটনা। জোড়ায় জোড়ায় খুন। কোথাও ভাইবোনের লাশ উদ্ধার, কোথাও মা-ছেলের। একটির রেশ না কাটতেই আরেকটি নৃশংস ঘটনা। মানুষ ক্রমেই অসহিষ্ণু ও নৃশংস হয়ে উঠছে। এমনকি, আপনজনও এই নৃশংসতা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে এমন ঘটনা ঘটছে।
গত সোমবার দুই জোড়া খুনের ঘটনা মানুষের মনে আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে নিজেদের ঘরের খাটের নিচ থেকে দুই ভাইবোনের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে লাশ দুটো উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলো সলিমাবাদ গ্রামের কামাল উদ্দিনের ছেলে কামরুল ইসলাম (১০) ও মেয়ে শিফা আক্তার (১৪)। শিশু দুটো স্কুলে লেখাপড়া করত। বাঞ্ছারামপুর থানা পুলিশের ইন্সপেক্টর রাজু আহমেদ জানান, নিহতদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
একই রাতে চট্টগ্রাম নগরে মা-ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানা এলাকার রমজান আলী সেরেস্তাদারের বাড়ি থেকে লাশ দু’টি উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন গুলনাহার বেগম (৩৩) ও তার শিশুসন্তান মো: রিফাত (৯)।
চান্দগাঁও থানার ওসি খন্দকার আতাউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, টিন শেডের সেমিপাকা একটি ঘরের ভেতর সংযুক্ত শৌচাগারে পড়ে ছিল গুলনাহারের লাশ। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আর মেঝেতে পড়ে ছিল ৯ বছরের শিশুটির লাশ। তার গলা কাটা। নিহত গুলনাহার এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ওই বাসায় থাকতেন। ঘটনার সময় তার বড়মেয়ে কারখানায় ছিলেন।
সুনামগঞ্জের ছাতকে আবুল কালাম আজাদ (২৭) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। সোমবার বেলা ২টার দিকে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের পীরপুর উত্তরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সোমবার নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের কামালপ্রতাপ গ্রামে আব্দুর রাজ্জাক মল্লিক (৭০) নামে সাবেক ইউপি সদস্যকে গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
কুমিল্লার মুরাদনগরে মামাতো ভাইয়ের পিটুনিতে মারা গেছেন ডালিম (৩৫) নামের এক যুবক। মো: ডালিম (৩৫) মুরাদনগর উপজেলার আমিননগর গ্রামের মৃত হালিম মিয়ার ছেলে।
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দুই ভাই নিহত হয়েছেন। নিহত দুই ভাই হলেন- শামীম মাতুব্বর (২৭) ও রকিব মাতুব্বর (১৭)। সোমবার সকালে এই ঘটনা ঘটে।
মানবাধিকার সংস্থা এমএনপিএসর নির্বাহী পরিচালক রেজাউল কবির রেজা নয়া দিগন্তকে বলেন, একজন মানবাধিকারকর্মী হিসেবে এভাবে একের পর এক নৃশংস ঘটনায় তিনিও শঙ্কিত। সাধারণ মানুষ চরম আতঙ্কের মধ্যে। মহামারী করোনার কারণে এমনিতেই মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছে। এরপর একের পর নৃশংস ঘটনা মানুষকে আরো আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকারকর্মী সাইদুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, আইনের শাসন নেই বলেই মানুষ নৃশংস হয়ে উঠছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। ন্যায়বিচারের কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে অনেকে যা ইচ্ছে হচ্ছে তা-ই করছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে এমনসব ঘটনা ঘটছে। নয়া দিগন্ত