৯/১১-এর হামলা ছিল মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে

1
2108

ইরাকে দশ বছর ব্যাপী অর্থনৈতিক অবরোধের পর সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবিসি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছে, ‘উক্ত অবরোধের ফলে অর্ধ মিলিয়ন ইরাকীর মৃত্যু হয়েছে’। তার এই বক্তব্য যথার্থ। তবে একই সময়ে আমরা দেখতে পাই যে, দীর্ঘ দশ বছরের অর্থনৈতিক অবরোধের পর দুর্ভিক্ষ কবলিত এই অঞ্চলে মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হয়। ফলে যুদ্ধ, মারামারি-হানাহানি, বিভক্তি ও অরাজকতায় গোটা ইরাক ছেয়ে যায়। মার্কিন সেনাদের ছোড়া বিষাক্ত ইউরেনিয়াম বোমার তেজস্ক্রিয়তায় সেখানে দীর্ঘমেয়াদী বিপর্যয় নেমে আসে। এক পর্যায়ে ইরাকের তেল-গ্যাস কুক্ষিগত করতে ইরাকের মাটিতে বিশ্বের বৃহত্তম দূতাবাস নির্মাণ করার পর সেনা প্রত্যাহার করা হয়।

ইসরায়েলিদের আত্মরক্ষার স্বার্থে যদি শতেরও বেশি ফিলিস্তিনীকে হত্যা করা যায়; যদি যুদ্ধ বিমান, ট্যাংক, কামান ও বুলডোজার দিয়ে ১১,৭০০ (এগার হাজার সাতশত) বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়; যদি ২৪৩ জন নারী এবং ৪৫৭জন শিশু হত্যা করা যায়; যদি আত্মরক্ষার জন্য ৬১টি মসজিদ ও ১৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিতে হয়; যদি ইসরায়েলকে সুরক্ষিত করতে বাজার ও হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দিতে হয়; যদি গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ধ্বংস করে দিতে হয়, তাহলে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষার জন্য পরিচালিত নাইন ইলেভেনের হামলাকে কেন মেনে নিতে পারছে না? আমরা তো কেবল তোমাদের বাণিজ্যকেন্দ্র ও সেনা সদর দফতরে হামলা করেছি।

তোমরা বন্দুকের গুলি ছোড় নি বরং অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে অর্ধমিলিয়ন ইরাকী নারী ও শিশুকে হত্যা করেছ। এই অবরোধকে সাধারণ যুদ্ধের সাথে তুলনা করলে চলবে না, বরং এটি ছিল যুদ্ধের চেয়ে বহুগুণে বীভৎস ও ধ্বংসাত্মক। এর ফলে নারী-শিশু-যুবক-বৃদ্ধ সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত্র হয়েছে। বিশেষ করে, জাতির ভবিষ্যৎ অর্থাৎ শিশুরা প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছে। এই অবরোধের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুতেই সামরিক যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির চেয়ে কম নয় বরং বহুলাংশে বেশি। তোমাদের এতসব অপকর্মের পর সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী নিয়ে কথা বলার অধিকার তোমাদের থাকতে পারেনা।

পুঁজিবাদ ও গণতন্ত্রকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলার সময় হয়েছে। এসবের নামে যা করেছ তাতে এখন তোমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, বিশ্ববাসীকে প্রতারিত করা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে তোমরা বিশেষ পারদর্শি। আর আমাদের ভূমিতে তোমাদের যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনা করার অধিকার আমাদের রয়েছে। ফিলিস্তিন, ইরাক ও আফগানিস্তানে নারী-শিশু-বৃদ্ধদের রক্তের প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার আমাদের রয়েছে। নাইন ইলেভেনের জ্বালা যদি তোমার দেশ সহ্য করতে না পারে, তাহলে ষাট বছর ধরে ধুকতে থাকা ফিলিস্তিন, লেবাননও জাজিরাতুল আরবসহ সারা দুনিয়ার মুসলমানদের থেকে কিভাবে আশা করেন যে, তাদের অন্তরে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠবে না? আমি তোমার বা তোমার রাষ্ট্রের কাছে করুণা চাইনা। তোমাদের যা মনে চায় তাই কর!। আমার জীবন, আমার মরণ, আমার মুক্তি ও আমার কারাবরণ সবই তোমাদের জন্য অভিশাপের কারণ হবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
قُلْ لَنْ يُصِيبَنَا إِلَّا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ (51) قُلْ هَلْ تَرَبَّصُونَ بِنَا إِلَّا إِحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ وَنَحْنُ نَتَرَبَّصُ بِكُمْ أَنْ يُصِيبَكُمُ اللَّهُ بِعَذَابٍ مِنْ عِنْدِهِ أَوْ بِأَيْدِينَا فَتَرَبَّصُوا إِنَّا مَعَكُمْ مُتَرَبِّصُونَ

অর্থ: “আপনি বলুন, আমাদের কাছে কিছুই পৌঁছাবেনা, কিন্তু আল্লাহ যা আমাদের জন্য লিখে রেখেছেন; তিনি আমাদের কার্যনিবাহক। আল্লাহর উপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত। আপনি বলুন, তোমরা তো তোমাদের জন্য দুটি কল্যাণের কোনো না কোনো একটির প্রতীক্ষা করছ, আর আমরা তোমাদের জন্য প্রতীক্ষায় আছি যে, আল্লাহ তোমাদের আজাব দান করুন নিজের পক্ষ থেকে অথবা আমাদের হস্তে। সুতরাং তোমরা অপেক্ষা কর, আমরাও তোমাদের সাথে অপেক্ষমান”। -সূরা তাওবা, আয়াত ৫১-৫২

‘শায়খ খালিদ শেইখ মুহাম্মাদ ফাক্কাল্লাহু আসরাহ’ এর পক্ষ থেকে || ওবামার প্রতি চিঠি: ৯/১১ অপারেশনের নেপথ্য কারণ’ নামক রিসালা থেকে সংগৃহীত।

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধইসলামফোবিক বিভৎসরূপে সুইডেন ও নরওয়ে
পরবর্তী নিবন্ধফটো রিপোর্ট | জামিয়া ইসলামিয়া পরিদর্শন করেছেন তালেবানদের সাংস্কৃতিক কমিশন