নারায়ণগঞ্জের তল্লায় মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেডের গঠিত পৃথক তদন্ত কমিটি পরস্পরের কাঁধে দোষ চাপাতে চাইছে। তিতাসের তদন্ত কমিটি বলছে, বিদ্যুতের স্পার্কিংই বিস্ফোরণের জন্য দায়ী। আর ডিপিডিসির তদন্ত কমিটি বলছে, মসজিদে জমে থাকা গ্যাসের কারণেই অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত।
তিতাসের তদন্ত কমিটির এক সদস্য গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, মূলত বিদ্যুতের স্পার্কিং থেকে আগুন লেগে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নামাজের সময় লোডশেডিং হওয়ায় মসজিদের মধ্যে থাকা দ্বিতীয় বিদ্যুৎ লাইন চালু করার চেষ্টা করায় এমনটি হয়েছে। মসজিদের পাশে থাকা গ্যাসপাইপের লিকেজ থেকে অনেকদিন ধরেই মসজিদের ভেতরে গ্যাস প্রবেশ করছিল। মসজিদ কমিটি বা মুসল্লিদের মধ্যে কেউ এ নিয়ে সচেতন ছিল না। তারা অনেকদিন ধরে গ্যাসের গন্ধ পেলেও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নেয়নি।
দুর্ঘটনার সময় মসজিদের ভেতরটা গ্যাসে ভরা ছিল। দ্বিতীয় বিদ্যুৎলাইন চালু করার সময় বিদ্যুতের স্পার্কিং হওয়ায় আগুন লেগে যায় এবং এতগুলো মানুষ প্রাণ হারায়।
অন্যদিকে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেড গঠিত তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলছেন, গ্যাসপাইপের লিকেজ দিয়ে বের হওয়া গ্যাস থেকেই মূলত আগুন লেগেছে। বিদ্যুতের স্পার্কিং অগ্নিকান্ডের কারণ কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিদ্যুতের স্পার্কিং তো হতেই পারে। বিদ্যুতের কাজ করতে গেলে স্পার্কিং হয়, হতেই পারে। তিনি বলেন, সুইচ অন করার সময় বিদ্যুতের স্পার্কিং হওয়াই বৈদ্যুতিক ধর্ম। সেখানে যদি গ্যাসের উপস্থিতি না থাকত, তবে আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনা ঘটত না।
এদিকে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ৭ দিন পর গতকাল মসজিদটিকে নিরাপদ করতে এর দুপাশে থাকা গ্যাসের সংযোগ লাইন এবং বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট কোম্পানির লোকজন দিনব্যাপী এ কাজে ব্যস্ত ছিলেন। মসজিদের পূর্ব-দক্ষিণ ও উত্তর পাশের গ্যাসের সংযোগ মসজিদের পাশ থেকে সরিয়ে ৩ ফুট দূরে এবং মসজিদের পূর্ব পাশে থাকা বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মারটি ঘটনাস্থল থেকে ২শ গজ দূরে অপর একটি খুঁটিতে স্থাপন করা হয়।
এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে আরও সাত দিন সময় চেয়েছে জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি। গতকাল চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বুধবার রাতে তিতাসের তদন্ত দল নিশ্চিত হয়, মসজিদের উত্তর পাশ দিয়ে যাওয়া তিতাসের একটি সংযোগ লাইন মসজিদ নির্মাণের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত সেই লাইনে ৬টি ছিদ্র হয়। ওই ৬টি ছিদ্র দিয়ে নির্গত গ্যাস ফ্রি স্পেস তৈরি করে মসজিদের ভেতরে ঢুকতে থাকে। তা থেকেই গত শুক্রবার রাতে ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। এতে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মারা যান ৩১ জন।
ঘটনার পর পরই ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানিয়েছিলেন, তারা ঘটনার পর পরীক্ষা করে মসজিদের ভেতরে গ্যাসের লিকেজ পেয়েছেন। মসজিদের ভেতরে জমে থাকা গ্যাস বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে এসে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়।
মসজিদ কমিটির অভিযোগ ছিলো, তিতাসকে গ্যাস লিকেজের কথা জানানোর পরও তারা তা মেরামত করেনি। বরং ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছে।
এদিকে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন ডিপিডির গঠিত তদন্ত কমিটির একজন কর্মকর্তা বলেছেন সেখানে লিকেজ হওয়া গ্যাস থেকেই মূলত আগুন লেগেছে। বিদ্যুতের স্পার্কিং থেকে আগুন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যুতের স্পার্কিং তো হতেই পারে। যে কোনো বাসাবাড়ি, দোকানপাট বা বিদ্যুতের কাজ করতে গেলে স্পার্কিং হয়। তিনি বলেন, যে কোনো সুইচ দিতে গেলে স্পার্কিং হবে, এটাই বৈদ্যুতিক ধর্ম। সেখানে যদি গ্যাসের উপস্থিতি না থাকত তবে আগুন লাগার মতো ঘটনা ঘটত না। আমাদের সময়