হত্যার শিকার বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ ইসলামী ছাত্রশিবিরে যুক্ত ছিলেন- এমন অভিযোগসহ শিবির নিয়ে একের পর এক প্রশ্নে জর্জরিত করা হয়েছে তার বাবা মো. বকরত উল্লাহকে। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের শিবির সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে ‘না’ বলেন আবরারের বাবা।
গতকাল মঙ্গলবার আলোচিত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দিনে মাঝে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে আট ঘণ্টা বাদী বরকত উল্লাহকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এ জেরার মধ্য দিয়ে বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলো। ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম কৌঁসুলি আবু আবদুল্লাহ ভূঞা জানিয়েছেন, আজ বুধবার মামলার রেকর্ডিং কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহরাব হোসেন এবং সুরতহালের সাক্ষী এসআই দেলোয়ার হোসেন সাক্ষ্য দেবেন।
গত সোমবার ট্রাইব্যুনালে বাদী বরকতউল্লাহর সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। কুষ্টিয়ার অবসরপ্রাপ্ত এই ব্র্যাককর্মী জবানবন্দি দিতে গিয়ে কেঁদে কেঁদে সন্তান হত্যার বিচার চান। মঙ্গলবার জেরায় বরকত উল্লাহকে আসামিপক্ষের এক আইনজীবী বলেন, ‘আবরার ছাত্রশিবিরে যুক্ত ছিলেন’। উত্তরে ‘না’ বলেন আবরারের বাবা।
এ সময় আরেক আইনজীবী বলেন, ‘শিবিরের কমীদের ইন্ধনে ছাত্রলীগের কর্মীদের ওপর দায় চাপিয়ে এ মামলার এজাহার করা হয়েছে এবং এজাহার দাখিলের সময় শিবিরের সদস্যদের দিয়ে বাদী পরিবেষ্টিত ছিলেন।’ এ কথার উত্তরেও ‘না’ বলেন বরকত উল্লাহ। আবরারের লাশ কয়েকজন শিবিরকর্মী ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে নিয়ে বাদীর শ্যালক আব্দুল কাদেরকে বুঝিয়ে দেন বলে দাবি করেন এক আইনজীবী। এ কথায় আবরারের বাবা বলেন, ‘আমি তাদের চিনি না। আমি মর্গে ঢুকি নাই, বাইরে ছিলাম।’
এক আইনজীবী বলেন, ‘আপনি এমনভাবে শিবিরের কমীদের দিয়ে পরিবেষ্টিত ছিলেন যে আপনি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কাউকে হত্যার বিষয়ে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারেন নাই।’ আবরারের বাবা তা অস্বীকার করলেও মামলা করার বিষয়ে বুয়েট ভিসি কিংবা প্রক্টরের কাছে কোনো তথ্য জানতে না চাওয়ার কথা স্বীকার করেন। এক আইনজীবী প্রশ্ন করেন, ‘আবরারকে কারা কারা ডেকে নিয়েছিল এবং ২০১১ নম্বর কক্ষে কারা ছিল, তা আপনি জানেন?’ এসময় মৌন ছিলেন বরকত উল্লাহ।
এক আইনজীবী বলেন, ‘বুয়েট কর্তৃপক্ষ আবরার হত্যার দায় এড়াতে আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে। এ ঘটনাটি বুয়েট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ঘটেছে। যেহেতু আপনি (বাদী) শিবিরের সদস্যদের দিয়ে পরিবৃত ছিলেন, সে কারণে আপনি আবরার হত্যার দায় আপনার অজান্তেই আসামিদের ওপর চাপিয়েছেন। এ মামলায় আপনি নিজে বাদী না বুয়েট থেকে মামলা করা হয়- আসামি পক্ষের আইনজীবীর এই প্রশ্নে বুয়েট কর্তৃক নিয়োজিত আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী, আবু আবদুল্লাহ ভূঞা ও আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ, মঞ্জুর আলম মঞ্জু, শহীদুল ইসলামের মধ্যে তুমুল বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়। পরে বিচারকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
আসামি অমিত সাহার আইনজীবী মঞ্জু বাদীকে জেরা করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, ‘অমিতের নাম এজহারে নেই, আর বাদীও তার জবানবন্দিতে অমিতের নাম ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে কিছু বলেননি।’
আসামি মনিরুজ্জামান মনিরের পক্ষে আইনজীবী শহীদুল ইসলাম, আসামি মতিউল, শামীম বিল্লাহ, মিজানুর রহমান মিজান, এসএম মাহমুদ সেতুর পক্ষে ফারুক আহম্মদ জেরা করেন। এ মামলার আসামিদের মধ্যে ২২ জন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। বাকি তিনজন পলাতক রয়েছেন। আমাদের সময়