পাকিস্তানি মুরতাদ বাহিনীর যুদ্ধাপরাধ ও মুজাহিদদের তীব্র প্রতিরোধ

    1
    1659
    পাকিস্তানি মুরতাদ বাহিনীর যুদ্ধাপরাধ ও মুজাহিদদের তীব্র প্রতিরোধ


    পাকিস্তানি মুরতাদ বাহিনীর যুদ্ধাপরাধের বর্ণনা দিতে আমাদের প্রথমে ফিরে যেতে হবে ২০০১ সালে, যদিও ইতোপূর্বে তারা পূর্ব পাকিস্তানেও (বাংলাদেশ) একই ইতিহাস রচনা করে গেছে। তবে আজ আমরা বর্তমান পাকিস্তান নিয়েই আলোচনা করবো।

    ২০০১ সালে যখন ক্রুসেডার আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট এবং তাদের মিত্র দেশসমূহ একজোট হয়ে ইসলামি ইমারত আফগানিস্তানে আগ্রসন চালায়, তখন থেকেই পাকিস্তানি মুরতাদ বাহিনীর যুদ্ধাপরাধের তালিকা ভারী হতে থাকে, ক্রুসেডার আমেরিকানদের রক্ষা করতে স্বজাতির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতেও কুন্ঠিত হয়নি নাপাক সৈন্যরা। বিশেষ করে এই নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়াতে থাকে পাক-আফগান সীমান্ত ও পশতুন অঞ্চলগুলোতে। কেননা তারাই ইমারতে ইসলামিয়াকে রক্ষা করতে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে শুরু করেছিলেন। তারা নিজেদের সবকিছু উজাড় করে মুজাহিদদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে থাকেন।

    ফলশ্রুতিতে এসকল গোত্র ও অঞ্চলগুলোতে পাকিস্তানি মুরতাদ বাহিনীর জুলুমের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকে। তাদের অর্থ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়, ঘরের আসবাব পত্র লুট করে নিলামে তুলতে শুরু করে হায়েনার দল। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরকে বে-রহমী শহিদ করা হচ্ছিলো। সাহসী যুবকদেরকে পাকিস্তান জুড়ে খুঁজে খুঁজে গুলি করে তাদের শরীরকে ঝাঁঝরা করা হচ্ছিলো। এতো কিছুর পরেও তাওহিদবাদী পাকিস্তানি মুসলিমরা তাদের মুজাহিদ ভাইদেরকে ভুলে জাননি, তারা মুজাহিদদের রক্ষা করতে নিজেদের জীবনের নাজরান পেশ করতে থাকেন।

    মোটকথা, আমেরিকার গোলাম মুরতাদ পাকি বাহিনী জুলুম-অত্যাচার ও নির্লজ্জতার এমন কোন হীনপন্থা বাকি ছিলনা, যা তারা ক্রুসেডারদের সন্তুষ্টির জন্য করেনি। সর্বশেষ তারা আফগান যুদ্ধের পরিসীমাকে পাকিস্তান পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়।

    এরপর আফগান ফিরত পাক মুজাহিদিন ছোট ছোট দলে পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েন , তারা এখানেও আমেরিকা ও তাদের গোলাম নাপাক বাহিনীর স্বার্থে আঘাত হানতে শুরু করেন, এখানে হামলার তীব্রতা যতই বাড়ছিলো আফগান মুজাহিদদের জন্য যুদ্ধের ময়দান ততটাই অনুকূলে আসতে থাকে। কিন্তু আমেরিকা ও নাপাক বাহিনীকে দূর্বল করার জন্য প্রয়োজন ছিলো পাকিস্তানে যুদ্ধরত ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন গ্রুপগুলোর মাঝে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা। ফলে তালেবানদের সবচাইতে ঘনিষ্ঠ মিত্র আল-কায়েদা এই কাজটি সম্পন্ন করার কাজে নেমে পড়ে, এরপর খুব অল্প সময়েই তারা পাকিস্তানি জিহাদী দলগুলোকে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) অধীনে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হন। এরফলে পাক জিহাদী সংগ্রামে আসে নতুনত্ব, তারা একে একে সীমান্ত এলাকাগুলো দখলে নিতে থাকেন এবং ন্যাটোর রসদ-পত্রে ও সাপ্লাইয়ের রাস্তাগুলোতে সফলভাবে হামলা চালাতে থাকেন। আমেরিকা তখন বুঝতে পারে তারা আফগানিস্তানে এসে দীর্ঘ মেয়াদি এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, আর এর জন্য তারা পাক মুজাহিদদের (টিটিপি)কে দায়ি করতে থাকে এবং তাদেরকে সমূলে উৎখাত করতে উঠে পড়ে লাগে। কেননা আফগান যুদ্ধ এখন পাকিস্তানের উপরই নির্ভর করে। এখানের মুজাহিদরা যত বেশি শক্তিশালী হচ্ছেন, আফগানে আমেরিকার পরাজয় তত দ্রুতই নিশ্চিত হতে শুরু করে। এভাবে ধীরে ধীরে পাক মুজাহিদদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর শাহাদাতের মধ্য দিয়ে আফগান জিহাদ পূণরায় তার শক্তি ফিরে পায় এবং মুজাহিদগণ পাহাড়ি এলাকা থেকে বেরিয়ে একের পর এক অঞ্চল ও শহর দখল করতে শুরু করেন, মুজাহিদগণ হত্যা করতে থাকেন ক্রুসেডার আমেরিকা ও তাদের মিত্র বাহিনীগুলোর সদস্যদের। প্রতিদিনই নতুন নতুন কফিন যেতে থাকে ক্রুসেডার দেশগুলোতে।

    এরপর আমেরিকা ও তাদের গোলাম রাষ্ট্র পাকিস্তান বুঝতে পারে, আফগানে বিজয় অর্জন করতে হলে প্রথমে পাক মুজাহিদদের শেষ করতে হবে। তাই তারা সর্বশেষ ২০১৩ সালে পাক মুজাহিদদের উপর তাদের সর্বশক্তি ব্যয় করে অভিযান চালাতে শুরু করে, বিমান ও মিসাইল হামলায় কম্পিত হতে থাকে পাক সীমান্ত অঞ্চলগুলো, হত্যা করা হতে লাগলো হাজার হাজার নিরাপদ মুসলিমকে। যাদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছিল না, মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধরাও। বলা হয় যে, ২০১৩ সালের এই যুদ্ধে হাজার হাজার নিরপরাধ মুসলিম ছাড়াও প্রায় ১২ হাজার মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করেছিলেন। মুজাহিদগণ তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু তারা থেমে জাননি। টিটিপির একজন প্রাক্তন মুখপাত্র এহসানুল্লাহ এহসান গত মাসে জানান যে, পাকিস্তানী মুরতাদ বাহিনী ও মার্কিন বাহিনী এখন পর্যন্ত ৮ লাখ পাকিস্তানী মুসলিমকে শহিদ করেছে।

    এদিকে পাকিস্তানী মুরতাদ বাহিনী ও মার্কিন বাহিনীর এই বর্বরোচিত অভিযান তাদের কোন উপকারে আসেনি, কেননা ততদিনে আফগান মুজাহিদগণ নিজেদেরকে পূণরায় আফগানিস্তানে প্রস্তুত করে নিয়েছিলেন।

    অতপর, দীর্ঘ কয়েক বছর পাক মুজাহিদগণ গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে গেলেও সম্প্রতি তারা পূণরায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে শুরু করেছেন। হামলার তীব্রতাও তারা বাড়িয়েছেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, আফগানে ইমারতে ইসলামিয়ার বিজয়ের ফলে সেখানে থাকা পাক মুজাহিদিন এখন ধীরে ধীরে দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। যার ফলে পাকিস্তানে তালেবানের (টিটিপি) সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এখন তারা পূণরায় তাদের হারানো অঞ্চলগুলো ফিরে পেতে এবং পাকিস্তানেও ইসলামি ইমারত প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর।

    ইতোমধ্য টিটিপি পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে নিজেদেরকে পরিপূর্ণ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে নিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের শাকতাওয়ী অঞ্চল, মেহসূদ অঞ্চল এবং দের-ময়দান জেলা। এছাড়াও উত্তর ওয়াজিরিস্তান ও বাজুএজেন্সীতেও বেশ কিছু এলাকাতে মজবুত অবস্থানে রয়েছেন টিটিপির মুজাহিদিন। এসব এলাকা থেকে পাকিস্তানী মুরতাদ বাহিনী তাদের সিংভাগ চেকপোস্ট সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে, বর্তমানে এসব এলাকায় মিসাইল, বোমা ও গেরিলা হামলা চালাচ্ছে মুরতাদ বাহিনী। অপরদিকে টিটিপি এসব এলাকার বাসিন্দাদেরকে নাপাক সৈন্যদের চেকপোস্ট ও ঘাঁটিগুলোর আশপাশ থেকে দূরে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্যেও আবেদন করছেন।


    লেখক: ত্বহা আলী আদনান, প্রতিবেদক: আল ফিরদাউস নিউজ

    ১টি মন্তব্য

    1. আল্লাহু আকবর।
      খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।আমরা হয়ত জানতামই না যে এই ক্রুসেডারদের গুলাম মুর্তাদ পাকিস্তানি সরকার কত খারাপ।
      অনেক মুসলিমনা বুযেই পাকিস্তান কে এই অই মনে করেন। শুনেছিলাম কাশ্মীরের জিহাদকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল এই মুর্তাদ পাকিস্তানি সরকার। এরা ইসলামের দুশমন মুসলিম উম্মাহের শত্রু। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা এইসব কাজের জন্য মুর্তাদ পাকিস্তানের সরকারের লাঞ্চিত অবস্থা করবেন মুজাহিদদের হাতেই।জাযাকাল্লাহ।

    মন্তব্য করুন

    দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
    দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

    পূর্ববর্তী নিবন্ধফটো রিপোর্ট | নজিরবিহীন বন্দী বিনিময় চুক্তি, মুজাহিদগণের ভোজ আয়োজন
    পরবর্তী নিবন্ধদেশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছেঃ সাংবাদিক নেতা