১। শায়খুল হাদীস মৌলভি আব্দুল হাকিম হাক্কানী:
শায়খুল হাদীস মৌলভি আব্দুল হাকিম হাক্কানী প্রয়াত মৌলভি খোদাদাদের পুত্র।১৩৩৬ হিজরি সোলার/এস এইচ (হিজরি সোলার ইরান ও আফগানিস্তানের পঞ্জিকা) সনে কান্দাহার প্রদেশের মাইওয়ান্দ জেলার অন্তর্গত তাইমুর গ্ৰামে তার জন্ম। তিনি মরহুম আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। হরকতে তালেবান প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
ইসলামী ইমারাহর শাসনকালে কানপুর প্রদেশের জিহাদী মাদ্রাসায় অধ্যাপনার পাশাপাশি আপিল আদালত ও কেন্দ্রীয় দারুল ইফতা বিভাগে দায়িত্বরত ছিলেন।
মার্কিন আগ্ৰাসন শুরু হওয়ার পর মরহুম আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমর মুজাহিদের দিক নির্দেশনায় বিচার ব্যবস্থাকে চলমান অবস্থায় আনতে তিনি মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। বর্তমান আমীরুল মুমিনীন শায়খ হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাহ যখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন, তখন মৌলভি হাক্কানী আপীল আদালতের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। আর যখন শায়খ হিবাতুল্লাহ আমীরুল মুমিনীন হিসেবে ঘোষিত হন, তখন মৌলভি হাক্কানী সাহেবকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
বর্তমানে তিনি ইসলামী ইমারাহ আফগানিস্তানের লীডারশিপ কাউন্সিল বা নেতৃত্ব পরিষদের সদস্য এবং কাতারের দোহায় চলমান সংলাপ দলের চেয়ারম্যান।
২। শের মুহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাই:
তার পিতার নাম মরহুম বাদশাহ খান। লুগার প্রদেশের বারাকী বারাক জেলার অন্তর্গত আব্বাস গ্ৰামে ১৩৩৮ হিজরি সোলার সনে জন্মগ্ৰহণ করেন।
মহল্লার মসজিদ ও কাবুলের উমরা খান স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। আর কাবুল মিলিটারি একাডেমি থেকে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করেন। সামরিক শিক্ষা অর্জনের জন্য সরদার মুহাম্মদ দাউদ খান অন্যান্য আফগান ছাত্রদের সাথে তাকে ইন্ডিয়া পাঠিয়েছিলেন। উচ্চতর সামরিক শিক্ষা অর্জনের পর ১৩৬০ হিজরি সোলার সনে আফগানিস্তানে প্রত্যাবর্তন করেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে জিহাদে অংশগ্ৰহণ করেন।
তিনি জামায়াতে ইসলামী ও ইত্তেহাদে ইসলামী দল দুটির সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৩৬৪ হিজরি সোলার সনে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ইত্তেহাদে ইসলামী দলের সেনা কমান্ডার ছিলেন। তিনি কালাত, কান্দাহার এয়ার পোর্ট,লশকর ঘা এবং আরো বেশ কিছু অভিযানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। এসব অভিযানের মাধ্যমে মোল্লা বুরজান, মোল্লা মাশার, মোল্লা মুহাম্মদ রাব্বানী এবং অন্যান্য সাবেক তালেবান নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং তাদের সাথে তার পরিচয় হয়। ১৩৬৯ হিজরি সোলার সনে হরকতে ইনকিলাবে ইসলামী তাকে জেনারেল মিলিটারি অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়। নজিব আমলের সমাপ্তি পর্যন্ত তিনি এই পদে নিয়োজিত ছিলেন।
দলীয় কোন্দলের সময় তিনি এসব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজ গৃহে অবস্থান করেন এবং হরকতে তালেবান প্রতিষ্ঠার পর তাতে যোগদান করেন। ইসলামী ইমারাহর শাসনকালে তিনি প্রথমে কান্দাহারে পররাষ্ট্র বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে এবং পরে জনস্বাস্থ্য উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্টানেকজাই আমেরিকার সাথে সংলাপে তালেবান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বর্তমানে তিনি নেতৃত্ব পরিষদের সদস্য এবং পলিটিক্যাল অফিস ও সংলাপ দলের ডেপুটি হিসেবে কাজ করছেন।
৩। মোল্লা মুহাম্মাদ ফাজিল মাজলুম:
তিনি ১৩৪৫ হিজরি সোলার সনে উরুজগান প্রদেশের চারচিনো জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দেশের নামিদামি কয়েকটি মাদ্রাসা ও মসজিদে বেশ কয়েকজন বিখ্যাত আলেমে দ্বীনের কাছে প্রাথমিক ও ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করেন। মোল্লা ফাজিল আখুন্দ গোয়ান্তানামোবে কারাগারে পবিত্র কুরআন হিফজ করেন।
ইসলামী ইমারাহর শাসনকালে জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি ও চীফ অফ স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
মার্কিন আগ্ৰাসনের শুরুর দিকে তিনি উত্তর আফগানিস্তানে বন্দি হন। তাকে মার্কিন বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০০২ সালের জানুয়ারি মাসের এগারো তারিখে কিউবার গোয়ান্তানামোবেতে তাকে স্থানান্তর করা হয়। তিনি সেখানে তের বছর বন্দি অবস্থায় ছিলেন। ০১/০৬/২০১৪ সালে তালেবান ও আমেরিকার মাঝে এক বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনে তাকে এবং তার অপর চার সঙ্গীকে কাতারে আনা হয়। তালেবানের পক্ষ থেকে মার্কিন বন্দি বৌঈ বার্গডলকে মুক্তি দেয়া হয়।
২০১৮ সালে মোল্লা মুহাম্মদ ফাজিল আখুন্দকে পলিটিক্যাল অফিস এবং আমেরিকার সাথে সংলাপের জন্য গঠিত সংলাপ দলের সদস্য মনোনীত করা হয়। বর্তমানে তিনি নেতৃত্ব পরিষদ, পলিটিক্যাল অফিস এবং সংলাপ দলের সদস্য।
[চলবে ইনশাআল্লাহ…]