তথাকথিত ভাস্কর্যের নামে এদেশে মূর্তিকেন্দ্রিক শিল্পচর্চা এবং নাচ-গানকেন্দ্রিক বেহায়াপনার সংস্কৃতি আর যাইহোক কখনোই তা মুসলিমদের শিল্প-সংস্কৃতি হতে পারে না। বাংলাদেশ নামক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সেক্যুলার আওয়ামী মুরতাদ সরকার আর মালাউনদের মদদে বেড়ে উঠা এদেশের তথাকথিত একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী দাবিদাররা শিল্প ও সংস্কৃতির মতো একটি আদর্শিক বিষয়কে মূর্তি, নাচ-গানকেন্দ্রিক বেহায়াপনার আকারে মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দিতে চায়, আলিমদের কণ্ঠরোধ করতে চায় কথিত বাকস্বাধীনতার দাবিদাররা।
সম্প্রতি সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, মূর্তি ও ভাস্কর্য নিয়ে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করায় মসজিদ ও দ্বীনি মাহফিলগুলোতে আলিমদের সাথে চরম মাত্রার বেয়াদবী করা হয়েছে। অনেক জায়গায় দ্বীনি মাহফিলগুলো বন্ধও করে দেওয়া হয়েছে। এসব সীমালঙ্ঘনকারীরা প্রত্যেকেই ছিল কুলাঙ্গার মুজিবপূজারী।
এদেশে সন্ত্রাসের জন্মদাতা মুজিবের আদর্শে দীক্ষিত ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসী দলটির প্রধান মুশরিক সদস্যদের ধৃষ্টতা দেশবাসীকে অবাক করেছে! ক্ষমতাসীন এই সন্ত্রাসী দলটি দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ময়দানে নামার আহ্বান জানাচ্ছে। দলটির সভাপতি মুসলিমদের উদ্দেশ্যে বলেছে, “তোরা দিনের বেলা আসিস, তোদের ঈমানি শক্তি কত দেখবো”।
এই মুশরিকরা নিজ দলীয় কিছু সদস্যদের তো শুধুমাত্র এই কারণেই বহিষ্কার করেছে যে, তারা নিজেদের ঈমান বাঁচানোর তাগিদে ভাস্কর্যের বিপক্ষে কথা বলেছেন।
এভাবে যেই ভূখণ্ডের ৯০% মানুষ সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি গভীরভাবে বিশ্বাসী এবং শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ ﷺ এর শিক্ষা ও আদর্শের প্রতি আনুগত্যশীল, তাদের উপর আজ জেঁকে বসেছে আওয়ামি নামক মুরতাদ দলটি। কুফরি ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে তারা দেশে উগ্র মুশরিক হিন্দুদের রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করছে। তারা আজ আমাদের উপর শিল্প-সংস্কৃতির নামে চাপিয়ে দিচ্ছে বর্বর মালাউন হিন্দুদের মূর্তিকেন্দ্রিক শিরকি শিল্প-সংস্কৃতি।
মূর্তিকেন্দ্রিক শিল্প ও সংস্কৃতি আলোকিত কোনো সমাজের সংস্কৃতি নয়, বরং মূর্তি হচ্ছে অন্ধকার সংস্কৃতির প্রতিভূ। মূর্তিকে কেন্দ্র করে যে জঘন্যতম শিরক, কুসংস্কার এবং যে সীমাহীন অনাচারের সূচনা ও বিকাশ ঘটেছে তা মানব-ইতিহাসের অন্ধকারতম অধ্যায়। সুতরাং এটি কখনোই কোনো সভ্য জাতির সংস্কৃতি হতে পারে না।
পবিত্র কুরআনুল কারীমের সূরা হজ্জের ৩০তম আয়াতে মহান আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেন:
অর্থ- তোমরা পরিহার কর অপবিত্র বস্ত্ত অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।
এই আয়াতে মহান আল্লাহ্ তা’আলা পরিষ্কারভাবে সবধরনের মূর্তি পরিত্যাগ করার এবং মূর্তিকেন্দ্রিক সকল কর্মকাণ্ড বর্জন করার আদেশ দিয়েছেন। আরো লক্ষণীয় যে. উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা সকল ধরনের মূর্তিকে ‘রিজস’ শব্দ দ্বারা উল্লেখ করেছেন। আরবি ‘রিজ্সুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে নোংরা, অপবিত্র/নাপাক বস্তু। সুতরাং আয়াত থেকে বোঝাই যাচ্ছে যে, মূর্তিকেন্দ্রিক সকল কর্মকাণ্ডই হচ্ছে নোংরা ও অপবিত্র। তাই এই নাপাক মূর্তিকেন্দ্রিক সংস্কৃতির সংশ্রব পরিহার করা পরিচ্ছন্ন ও পরিশীলিত রুচিবোধের পরিচায়ক।
এছাড়াও এই মূর্তিকেন্দ্রিক সংস্কৃতি হচ্ছে শিরক ও অসংখ্য মিথ্যার উদ্ভব এবং বিকাশের উৎস। তাই তো মহান রব্বুল আলামীন কুরআন মাজীদে মূর্তিকে পথভ্রষ্টতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সূরা ইবরাহীমের ৩৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
‘হে প্রতিপালক, এরা (মূর্তি ও ভাস্কর্য) অসংখ্য মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে!’
কুরআনের ভাষায় মূর্তি বা ভাস্কর্য হচ্ছে, বহুবিধ মিথ্যার উৎস। ইরশাদ হয়েছে-
তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে উপাসনা কর (অসার) মূর্তির এবং তোমরা নির্মাণ কর ‘মিথ্যা’। (সূরা আনকাবুত: ১৭)
ইসলামী শরীয়তে কোনো প্রাণীর মূর্তি-বাস্কর্য তৈরি করা মারাত্মক কবীরা গুনাহ ও হারাম কাজ । যারা মূর্তি সংগ্রহ, মূর্তি সংরক্ষণ এবং মূর্তির বেচাকেনা ইত্যাদি করে তাদেরকে কিয়ামত দিবসে কঠিন শাস্তি প্রদানের কথাও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
যেমন সহীহ বুখারীর ৫৯৫০ নং হাদিসে বলা হয়েছে – হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন-
প্রতিকৃতি তৈরিকারী (ভাস্কর বা চিত্রকর) শ্রেণী হল ওইসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে কিয়ামত-দিবসে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে।
কুরআন ও হাদিসে মূর্তিকেন্দ্রিক এত স্পষ্ট বর্ণনা থাকা সত্ত্বেও দেশের সর্বোচ্চ কুফরি আদালত মূর্তিকেন্দ্রিক সংস্কৃতির পক্ষে তাদের আইন জারি করে বলেছে যে, “ভাস্কর্য, ম্যুরাল, প্রতিকৃতি, স্ট্যাচু ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না। তাই সে বিষয়ে সচেতনতা গড়তে ইসলামী ফাউন্ডেশন ও বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিবকে গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট”।
সুতরাং যারা আজ শিরক ও অপবিত্র বস্তু যা মানুষকে পথভ্রষ্ট করে, যা বহুবিধ মিথ্যার উৎস এবং অন্ধকার সংস্কৃতির প্রতিভূ মূর্তিকে এই সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছে, তারা এবং তাদের পক্ষে যারা অবস্থান নিচ্ছে তারা কখনোই প্রকৃত মুসলিম হতে পারে না। সবার জেনে রাখা উচিত, পশ্চিমা কুফরি গণতন্ত্রকে ইসলামী গণতন্ত্র নাম দিলে যেমন তা জায়েয হয়ে যায় না, তেমনি প্রাণীর মূর্তিকে ভাস্কর্য নাম দিলেই জায়েয হয়ে যাবে না।
তাই এই মুহূর্তে মুসলিম দাবিদার প্রতিটি ব্যক্তির জন্যই আবশ্যক হচ্ছে, বাংলাদেশ নামক কথিত সেক্যুলার জাতিরাষ্ট্রের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে কুরআনকে ‘ফুরকান’ অর্থাৎ ভালোমন্দ, সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী হিসাবে গ্রহণ করা। এই ভূমীতে ইসলামী শরিয়াহ্ প্রতিষ্ঠা করতে জিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং হকপন্থী মুজাহিদদের সাথে শরীক হওয়া।
সর্বশেষে দুটি হাদিস উল্লেখ করা জরুরি মনে করছি,
রাসুল ﷺ বলেছেন,
“আঁধার রাতের মতো ফিতনাহ্ আসার পূর্বেই তোমরা সৎ আমালের দিকে ধাবিত হও। সে সময় সকালে একজন মুমিন হলে বিকালে কাফির হয়ে যাবে। বিকেলে মুমিন হলে সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার সামগ্রীর বিনিময়ে সে তার দ্বীন বিক্রি করে বসবে।” (সহিহ মুসলিম ২১৩/সহিহ)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত,
‘এমন এক যামানা আসবে মানুষ মসজিদে জমায়েত হয়ে সালাত পড়বে কিন্তু সেখানে একজনও মুমিন থাকবে না।’ (মুসতাদরাক হাকেম ৩৪৬৪ ও ৮৪১৪, এবং আবি শায়বা ১০১)
লেখক: ত্বহা আলী আদনান, প্রতিবেদক, আল ফিরদাউস নিউজ