চীনে উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, বন্দীসহ নানা নির্যাতনের বিষয়ে তদন্তের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।
গত ১৫ ডিসেম্বর চীনের বিরুদ্ধে উইঘুর মুসলিম গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্তের আবেদনে অস্বীকৃতি জানানোর বিষয়টি প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা ও নিউইয়র্ক টাইমস।
খবরে বলা হয়, গত জুলাইয়ে উইঘুর নাগরিকরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চীনের বিরুদ্ধে মুসলিম নির্যাতনের প্রমাণ সম্বলিত একটি বিশাল নথি উত্থাপন করেন। এতে বলা হয়, চীন এক মিলিয়নেরও বেশি উইঘুর মুসলিম নাগরিকদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে আটক, ধর্ষণ, নারীদের জোরপূর্বক স্টেরিলাইজিং বা বাচ্চা জন্মদানের ক্ষমতা নষ্টসহ নানা ধরনের মানবতাবিরোধী নির্যাতন করে যাচ্ছে।
এই বিষয়ে আইসিসির কাছে জানতে চাওয়া হলে আইসিসির প্রসিকিউটর ফ্যাটিউ বেনসুদার জানায়, তারা চীনের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেবে না। কারণ চীনের বিরুদ্ধে যে অপরাধের অভিযোগ আরোপিত হয়েছে, তা সংঘটিত হয়েছে সেদেশের ভূখণ্ডে। আর চীন হেগ ভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাক্ষরিত রাষ্ট্র নয়।
আইসিসি জানায় , আঞ্চলিক অপরাধ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আঞ্চলিক এখতিয়ার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সাক্ষরিত রাষ্ট্র হওয়ার যে পূর্বশর্ত রয়েছে তা গুরুতর অভিযোগের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে অসম্মানজনকও বটে।
ফ্যাটিউ বেনসুদার পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, তাজিকিস্তান ও কম্বোডিয়া থেকে উইঘুর নাগরিকদের জোর করে চীনে পাঠিয়ে দেওয়ার পৃথক পৃথক যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা আমলে নেয়ারও কোনো ভিত্তি নেই।
উইঘুর অভিযোগকারীরা আইসিসির কাছে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এই যুক্তিও প্রদর্শন করেছিলেন যে, চীনের ভূখণ্ডে সংঘটিত নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইসিসি অক্ষম হলেও, তাজিকিস্তান ও কম্বোডিয়া অঞ্চলে উইঘুরদের নির্যাতনের ব্যাপারে আইসিসি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম। কেননা, তাজিকিস্তান ও কম্বোডিয়া উভয়ই আইসিসির সাক্ষরিত ও সদস্য রাষ্ট্র।
আইসিসির আইনজীবী কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, উইঘুরদের পক্ষে আইনী লড়াই চালানো আইনজীবীরা নতুন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের অভিযোগটি পুনর্বিবেচনা করতে আইসিসিকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
কমিউনিস্ট চীন নিজেদের বিরুদ্ধে আরোপিত সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করছে। দাবি করা হয়েছে, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পটি মূলত উইঘুরদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও চাকরি-প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে। বলা হয়েছে, এটি উইঘুরদের কঠোর ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ফিরিয়ে চীনা সংস্কৃতিতে আনার লক্ষ্যে গড়ে তুলা একটি পুনঃশিক্ষা কেন্দ্র। অথচ, বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে ওঠে এসেছে এই কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বন্দীদের উপর চৈনিক নির্যাতনের লোমহর্ষক কাহিনী। সেখানে চীন সরকার উইঘুর মুসলিমদেরকে ইসলাম ত্যাগ করতে বাধ্য করছে।
উইঘুর মুসলিমদের উপর চীন সরকারের এমন অমানবিক নির্যাতনের ব্যাপারে আজ মানবাধিকারের ধ্বজাধারীরা নিশ্চুপ, কথিত আন্তর্জাতিক আদালতও মাজলুমের পক্ষে কথা বলছে না।