গত কয়েক মাস ধরেই চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সরু থেকে শুরু করে মাঝারি ও মোটা চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। বাজার পরিস্থিতি এমন হয়েছে মিল পর্যায়েই প্রতি বস্তা চাল (৫০ কেজি) ৩ মাসের ব্যবধানে ৭শ’ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর এ বাড়তি দরে চাল কিনতে ভোক্তার নাভিশ্বাস বাড়ছে। সব চাইতে বেশি সমস্যায় পড়েছেন খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
এ পরিস্থিতিতে চালের বাজার নিয়ে আজ (রোববার) সংবাদ সম্মেলনে আসছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সরকারি পদক্ষেপ জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে শনিবারে মিল পর্যায়ে, সরু চালের মধ্যে প্রতি বস্তা মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার টাকা। যা ৩ মাস আগে ছিল ২ হাজার ৩শ’ টাকা। সে ক্ষেত্রে ৩ মাসের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় দাম বাড়ানো হয়েছে ৭শ’ টাকা। পাশাপাশি মাঝারি মানের চালের মধ্যে বিআর-২৮ জাত প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৬শ’ টাকা। যা ৩ মাস আগে ছিল ২ হাজার টাকা। আর মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১৫০ থেকে ২ হাজার ২শ’ টাকা। যা ৩ মাস আগে ছিল ২ হাজার টাকা।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী চালের দাম বাড়িয়েছে। তাই সরকারের উচিত, সরকারি গুদামে মজুদ বাড়িয়ে ও বাজার তদারকি করে চালের দাম কমিয়ে আনা। এতে ভোক্তার স্বস্তি ফিরবে। রাজধানীর পাইকারি বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫০ থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা। যা ৩ মাস আগে ছিল ২ হাজার ৬শ’ টাকা। বিআর-২৮ চাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৭শ’ টাকা। যা ৩ মাস আগে ছিল ২ হাজার ৪শ’ টাকা। আর স্বর্ণা জাতের চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২শ’ টাকা। যা ৩ মাস আগে ছিল ২ হাজার ১৫০ টাকা।
যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। শনিবার প্রতি কেজি মিনিকেট ও নাজিরশাল বিক্রি হয়েছে ৬২ থেকে সর্বোচ্চ ৬৭ টাকা। যা ৩ মাস আগে ছিল ৫৫-৫৭ টাকা। বিআর ২৮ চাল বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা, ৩ মাস আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০-৫২ টাকা, যা ৩ মাস আগে ছিল ৪৫ টাকা।
কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল বিক্রেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেছেন, এ বছর করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে (মার্চের শেষে) মিলাররা নানা অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়েছে। কখনও সরবরাহ সংকট, কখনও শ্রমিক নাই মিল বন্ধ আবার কখনও ধানের দাম বেশি- এ করেই চালের দাম বাড়াচ্ছে মিলাররা। তারা বছরের শেষ সময় এসেও চালের দাম বাড়িয়েই যাচ্ছে। সর্বশেষ ৩ মাসের ব্যবধানে কেজিতে মিল পর্যায়ে ৫০ কেজির বস্তায় সর্বোচ্চ ৭শ’ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে ভোক্তা পর্যায়ে।
রংপুর ব্যুরো জানায়, রংপুরের বাজারে চাল ও ভোজ্যতেলের বাড়তি দাম ভোক্তাদের বিপাকে ফেলেছে। প্রায় ১ মাস ধরে প্রতি সপ্তাহে ভোজ্যতেল ও চালের দাম বেড়েই চলেছে। এতে করে সমস্যায় পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। প্রতি কেজিতে প্রায় সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে ৩-৫ টাকা। শনিবার রংপুরের মাহিগঞ্জ বাজার, সিটি বাজার, কামালকাছনা বাজার ও টার্মিনাল বাজার, মডার্ন মোড়, লালবাগহাট ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মাহিগঞ্জ ও সিটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে নতুন চাল স্বর্ণা প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বেচাকেনা হচ্ছে ২ হাজার ২৫০ থেকে ২ হাজার ৩শ’ টাকায়। আর খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা কেজি দরে। আঠাশ চাল প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বেচাকেনা হচ্ছে ২ হাজার ৬শ’ থেকে ২ হাজার ৬৫০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে তা পাওয়া যাচ্ছে ৫৪-৫৫ টাকা কেজি দরে। এছাড়াও মিনিকেট, নাজিরশাইলসহ সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩-৫ টাকা পর্যন্ত।
খুলনা ব্যুরো জানায়, অধিক লাভের আশায় সিন্ডিকেট ও কারসাজিতেই বাড়ানো হয়েছে চালের দাম। এমনই জানিয়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। মাত্র সপ্তাহ খানেকের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে অন্তত ৪ টাকা। অর্থাৎ বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) বৃদ্ধি পেয়েছে কমপক্ষে ২শ’ টাকা।
নগরীর খুচরা বাজারগুলোতে শনিবার প্রতি কেজি চাল মোটা (স্বর্ণা) ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা, আঠাশ বালাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, মিনিকেট (ভালোমানের) ৬০ থেকে ৬২ টাকা, মিনিকেট (নিম্নমানের) ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, বাসমতি ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি চাল মোটা (স্বর্ণা) ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, আঠাশ বালাম ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা, মিনিকেট (ভালোমানের) ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা, মিনিকেট (নিম্নমানের) ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, বাসমতি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।