গত ১৯ ডিসেম্বর নাগাদ ভারতে নিশ্চিত করোনা রোগীর সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যায়। করোনা রোগী সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ভারত।
কয়েক মাস আগে ভারতের সবচেয়ে বড় বস্তি ধারভিতে করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটে, যাকে দেশের সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় মহামারি বোমা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দুই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই বস্তিতে ১০ লাখের বেশি মানুষের বাস।
এখন ভাইরাসটি নগর থেকে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা খুবই ভঙ্গুর। রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়, সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাসহ বহু ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
সরকারি হাসপাতালে বিছানা দুর্লভ হয়ে পড়েছে। এগুলো নোংরাও। বেসরকারি হাসপাতালগুলো গলাকাটা ফি চার্য করে। করোনা আক্রান্ত গরিব মানুষের বাঁচা-মরা ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভারতে করোনার আসল চেহারা আরো ভয়ংকর। গত সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োস্ট্যাটিসটিকস অ্যান্ড এপিডেমিওলজি’র প্রফেসর ব্রাহ্মর মুখার্জি তখনই বলেছিল যে ভারতে কোটির বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার সংখ্যা তুলনামূলক কম। তবে এ জন্য অনেক মৃত্যুর খবর না জানা এবং অনেক রোগীর করোনা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি সঠিকভাবে পরীক্ষা না করা দায়ি হতে পারে।
মহামরি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য গত মার্চে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত লকডাউন আরোপ করে। এতে কোটি কোটি গ্রামীণ অভিবাসী শ্রমিক কর্ম হারায়। অর্থনীতির নিম্নমুখি চাপ সামলাতে না পেরে গত জুন থেকে পর্যায়ক্রমে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করতে শুরু করে দেশটির সরকার।
ভারতের ম্যাক্স হেলথকেয়ারের মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড বিহেভিয়রাল সাইন্স বিভাগের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয় যে ভারতের মানুষ কোভিড-১৯ উদ্বেগে ভুগছে। এ কারণে প্রতি চারজনের একজন ভারতীয় মহা চাপে আছে এবং তাদের চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।
ভবিষ্যতে ভারতের পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। দেশটির অসুবিধা দুটি: প্রথমত, এর জনসংখ্যা বিশাল। ঘন বসতিপূর্ণ। ফলে গরীবদের পক্ষে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব। দ্বিতীয়ত, দেশটির সামাজিক উন্নয়ন নীচু মানের। বিশেষ করে পশ্চাদপদ এলাকাগুলোতে। ফলে ভারতে নিশ্চিত করোনা রোগী সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।