গাজীপুরে কিশোর গ্যাং আতঙ্ক

1
591
গাজীপুরে কিশোর গ্যাং আতঙ্ক

গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বিপজ্জনক কিশোর গ্যাং-এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় অভিভাবকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দিন দিন এদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর, পূবাইল, টঙ্গী, বাসন, গাছা, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর থানাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় রয়েছে কিশোর গ্যাং গ্রুপ। এসব গ্রুপ বিভিন্ন নামে পরিচিত। পশ্চিমা কালচারের অনুকরণে এসব গ্রুপ গড়ে উঠেছে।

মঙ্গলবার রাতে শহরের নীলের পাড়া সড়কে দুই পক্ষ কিশোর গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এক কিশোরকে আটক করেছে। আটক কিশোরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিও রেকর্ডি-এ কিশোর ছেলেটি বলেন, শাহীন ভাই দুটি অট্রো এবং একটি মাইক্রোবাসযোগে তাদের ২০-২৫ জন কিশোরকে দা-কাঁচি ও অস্ত্রসহ নিয়ে আসে। পরে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্যরাও কয়েকটি মোটরবাইকে এসে গুলি ছোড়ে। এতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে ছোটাছুটি করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় একজন পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরকেন্দ্রিক কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা জড়ো হয় রাজবাড়ি মাঠে ও বাউন্ডারীর দক্ষিণ পাশে, জোর পুকুরের উত্তর ও পূর্ব পাড়, দক্ষিণ ছায়াবিথী-হাড়িনাল রোডের কালভার্টে, লালমাটি, শ্মশান ঘাটে, বারেকের টেক, ফুলস্টপের গলি, বরুদা, ছায়াবিথী, রথখোলা, ভোড়া, হাজীবাগ, কাজীবাড়ি, পূর্ব চান্দনা, নীলের পাড়া রোড, পশ্চিম জয়দেবপুর (লক্ষ্মীপুরা), মারিয়ালী, কলাবাগান, দেশীপাড়া, ভূরুলিয়ার ময়লার টেক, ডুয়েট ও রয়েল ইনস্টিটিউটকেন্দ্রিক আশপাশের এলাকা, এটিআই গেট, শিমুলতলী বাজারসংলগ্ন উত্তর পাশে, চতর স্কুল গেট, ফাউকাল রেলগেট এলাকা, কাউলতিয়া, চান্দনা, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, পূবাইল, গাছা ও টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় ছোটো-বড়ো কিশোর গ্যাং গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে আধিপত্য, মাদক, নারী, স্ট্যান্ড দখল, সিনিয়র-জুনিয়রসহ নানা ধরনের ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, মারামারি ও খুন খারাবির ঘটনাও ঘটছে।

এ ছাড়া বিভিন্ন স্কুল-কলেজের মোড়ে বা অলি-গলির চা দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্য ইভটিজিং এবং বীরদর্পে সিগারেট ফুঁকালেও কেউ কিছু বলার সাহস করে না। এরা বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী বা স্কুলছুট হওয়ায় এদের বয়স ১৩ থেকে ১৯-এর মধ্যে।

গত ৩ সেপ্টেম্বর গাজীপুর জেলা শহরের রাজদীঘির পাড় এলাকায় সামান্য ‘তুই’ বলা’কে কেন্দ্র করে সমবয়সী বন্ধুদের হাতে খুন হয় নুরুল ইসলাম নুরু (১৬) নামে এক কিশোর। পার্শ্ববর্তী সাহাপাড়ার ‘ভাই-ব্রাদারস’ গ্রুপের বেশ কয়েকজন সদস্য কিশোর নুরুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে।

গত ৭ জুলাই গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন ফকির মার্কেট এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে স্থানীয় ফিউচার ম্যাপ স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র শুভ আহাম্মেদকে (১৬) বুক, পিঠ ও মাথায় উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার কাজে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র, সুইজ গিয়ার ও চাকু উদ্ধার করা হয়। নিহত শুভ ছিল বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।

এ ঘটনার কয়েক দিন পর ২৪ জুলাই একই থানাধীন কাজী পাড়া চন্দ্রিমা এলাকায় বাসায় ঢুকে তৌফিজুল ইসলাম ওরফে মুন্না (১৫) নামে এক স্কুল শিক্ষার্থীকে খুন করা হয়। মুন্না রাজধানীর বিএফ শাহিন একাডেমির অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। এ ঘটনায় পুলিশ মুন্নার ব্যবহৃত মোবাইল সেট উদ্ধার করলেও হত্যাকাণ্ডের মূল অপরাধীকে এখনো শনাক্ত করতে পারেনি।

গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর এমএ বারী বলেন, কিশোর গ্যাং দেশের অপরাধ জগতের নব আবির্ভূত এক অপরাধী চক্র। বখাটে কিছু কিশোর দলবন্ধ হয়ে চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ এমনকি খুন খারাবির দিকে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বাস্থ্য প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির পাঁয়তারা
পরবর্তী নিবন্ধজুয়া খেলায় মত্ত ৯ পুলিশ সদস্যকে আটক