কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না চালের বাজার। মিলগেটে দাম বেঁধে দেওয়া থেকে শুরু করে সরকারের চাল আমদানির সিদ্ধান্তও বদলাতে পারছে না বাজারচিত্র। গত সপ্তাহ থেকে রাজধানীর বাজারে পাওয়া যাচ্ছে আমদানি করা ভারতীয় চাল। তবে সরবরাহ খুবই কম ও দামে বেশি হওয়ায় তা বাজারে কোনো প্রভাব ফেলেনি। এদিকে আমদানির খবরে পাইকারিতে দাম কয়েক দফা ওঠানামা করলেও খুচরায় চালের দাম এখনো আগের মতোই চড়া রয়েছে।
রাজধানীর খুচরা বাজারে সরু মিনিকেট চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে মাঝারি বিআর আটাশ চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি এবং মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। এ ছাড়া নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৬৮ টাকা কেজি দরে। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবেও গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলগেটগুলোয় সরকারি দাম মানা হচ্ছে না। আগের মতোই বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে আমদানির সিদ্ধান্তের পর মাসখানেক সময় পার হলেও বাজারে পুরোপুরি ওঠেনি সে চাল। তাই বাজারদরের তেমন হেরফের হয়নি।
সরকার বেসরকারিভাবে আমদানি বাড়াতে গত ৭ জানুয়ারি চালের মোট করভার ৬২ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনে এবং ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। সরকারের এ উদ্যোগের এক মাস পার হতে চললেও বাজারে মিলছে না কোনো সুফল। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাল আমদানি হচ্ছে ঢিলেঢালা তালে। তা ছাড়া বাজারেও তা ঠিকঠাক পৌঁছাচ্ছে না।
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানিকারকরা বলছেন, কাগজপত্রের ত্রুটি ও সিরিয়ালের নামে ট্রাক দিনের পর দিন আটকে থাকায় এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানিতে ধীরগতি বেড়েছে। বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, গত ১৯ জানুয়ারি থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ২ হাজার ১১০ মে. টন চাল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে রেলে এসেছে ১ হাজার ৬৪০ মে. টন এবং ট্রাকে ৪৭০ মে. টন চাল প্রবেশ করে।
অন্যদিকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে গত ৯ জানুয়ারি থেকে চাল আমদানি শুরু হয়। প্রথম চালানে আসে ১১২ মেট্রিক টন চাল। হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ ট্রাক চাল আমদানি করা হয়। গত ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে মোট ১০ হাজার ৬৯৩ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়েছে।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারের কিচেন মার্কেটের বরিশাল রাইস এজেন্সির ব্যবসায়ী মো. জাহিদ হোসেন বলেন, তিন-চারদিন হলো বাজারে আমদানি করা ভারতীয় চাল এসেছে। তবে পরিমাণে খুবই কম। দামেও যে কম, তা নয়। নিলাভোগ, বিজয়ভোগসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের চাল পাওয়া যাচ্ছে। পাইকারিতে এ চালে বস্তা (২৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪২৫ টাকা থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা দরে, যেখানে মিনিকেট বিক্রি করছি ৬০ থেকে ৬১ টাকা কেজি। ভারতীয় এ চাল দামে বেশি হওয়ায় বাজারে তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি।
একই বাজারের মেসার্স জনপ্রিয় রাইস এজেন্সির ব্যবসায়ী মো. আমির হোসেন বলেন, সরকারের চাল আমদানির সিদ্ধান্তের পর বাজারে বেশ কয়েকবার দাম ওঠানামা করেছে। কিন্তু ঘুরেফিরে দাম সেই আগের জায়গাই রয়েছে। আমদানির খবরে মিনিকেটের বস্তার দাম কমে ২ হাজার ৯৫০ টাকা পর্যন্ত নেমেছিল। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে দাম দুই দফায় বেড়ে আবার ৩ হাজার ৫০ থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকায় উঠেছে। মাঝারি আটাশের চালের বস্তাও এখন ২ হাজার ৫৫০ টাকা। মোটা চাল বাদে অন্য সব চালের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।
যাত্রাবাড়ী চালের বাজারের বিসমিল্লাহ রাইস এজেন্সির ব্যবসায়ী সোলায়মান আলী বলেন, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, কারওয়ানবাজারসহ বড় বাজারগুলোয় আমদানি করা চাল ঢুকলেও অন্য বাজারগুলোয় এখনো এ চাল পাওয়া যাচ্ছে না। আমদানি হলেও সরবরাহ হচ্ছে অনেক কম। আমদানি করা চাল পুরোপুরি বাজারে ঢুকলে দাম কমে আসবে হয়তো।
ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতীয় চাল ও দেশি মিলের চালের দামে ব্যবধান খুব বেশি একটা না হওয়ায় ক্রেতারা এ চালে আগ্রহ কম দেখাচ্ছেন। মানে ভালো আর দামে কম না হলে চাল আমদানি করেও লাভ হবে না। ক্রেতারা এ চাল কিনছেন না।