সীমান্তে গরু পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত একাধিক অফিসার। দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) গত বছর থেকেই দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলে গরু পাচার চক্রের সঙ্গে বিএসএফ কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে তদন্ত করছে।
বিবিসি জানায়, অন্তত ৪ বছর আগেই বাহিনীর মহাপরিচালকে এ বিষয়টি জানিয়ে চিঠি লিখেছিল এক কমান্ড্যান্ট। তারপরও এত বছরে কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, বাহিনীটির ভেতরেই সেই প্রশ্নও উঠছে।
বিএসএফের কয়েকটি সূত্র বলছে, “সর্ষের মধ্যেই ভূত। যাদের দায়িত্ব ছিল দুর্নীতি রোখা, গরু পাচার চক্রে জড়িত ছিল সেই সব সিনিয়র অফিসাররাই। এদের মধ্যে কয়েকজনের নাম সামনে এসেছে, কিন্তু আরও অনেকেই জড়িত। তারা কেউ বিএসএফ থেকে অন্য বাহিনীতে চলে গেছে বা তাদের যেতে দেওয়া হয়েছে, কেউ চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।”
গরু পাচারের সঙ্গে যে বিএসএফ কর্মকর্তাদের একাংশ জড়িত— এ তথ্য জানিয়ে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি মহাপরিচালককে চিঠি দেয় রাজ কুমার বাসাট্টা নামে এক কমান্ড্যান্ট।
সে লিখেছে, দক্ষিণ বঙ্গ সীমান্তের হেডকোয়ার্টার্স থেকে শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশ আসত যে, কোম্পানি কমান্ডার এবং পোস্ট কমান্ডারেরা যেন পাচারকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করে।
এ রকম নির্দিষ্ট অভিযোগ আসা সত্ত্বেও কেন তখন কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? বাহিনীর ভেতরেই তো নজরদারি বিভাগ আছে, সিনিয়র অফিসারেরা আছে। তারাও চোখ বুজে আছে?
এই প্রশ্নের উত্তরে পঙ্কজ কুমার সিং বলছিল, “এ বিষয়টা আমার জানা নেই, কারণ আমি বাহিনীতে যোগ দিয়েছি ২০২০ সালে।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলে কাজ করে, এমন একটি মানবাধিকার সংস্থা মাসুমের প্রধান কিরিটি রায় বলছিলেন, তাদের কাছেও অনেক তথ্য প্রমাণ আছে যে বিএসএফের সহায়তা নিয়েই গরু-মানুষ-নিষিদ্ধ ড্রাগ পাচার হয় সীমান্ত দিয়ে।
তিনি বলেন, “অজস্র প্রমাণ আমাদের হাতে আছে, যা থেকে স্পষ্ট, যে বিএসএফের একাংশের মদদ ছাড়া সীমান্তে কোনো কিছু পাচার হওয়া সম্ভব নয়। এক শ্রেণির জওয়ান এবং অফিসার পাচার চক্রের সঙ্গে নিশ্চিতভাবেই যুক্ত।”
এ দিকে বিএসএফ অভ্যন্তরে এই প্রশ্নও উঠছে, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বা যাদের সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই বিএসএফ ক্যাডার অফিসার। কিন্তু শীর্ষ পদগুলোতে ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস বা আইপিএস অফিসাররা তো ছিলেন – তাদের ভূমিকা কেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে না?
মানবাধিকার সংস্থার মতে, ২০০০-২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কমপক্ষে ১ হাজার ১৮৫ বাংলাদেশিকে গুলি বা নির্যাতন করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসী বিএসএফ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হত্যার শিকার ব্যক্তিদের পাচারকারী হিসেবে প্রচার করা হয়।