ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নে কন্যাপাড়া প্রেসিডেন্ট বাড়ি সংলগ্ন খালের উপর নির্মিত সেতু ও একই ইউনিয়নের উত্তর রামনগর আন্দাইরা খালের উপর নির্মিত সেতু দীর্ঘদিন ধরে ভেঙে পড়ে আছে। সেতু দুটি পুনর্নির্মাণের কোন উদ্যোগ গ্রহন না করায় সেতু দিয়ে পারাপার করা প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট বাড়ি সংলগ্ন খালের উপর ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য সেতুটি উপজেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর কর্তৃক সেতু/কালর্ভাট নির্মাণ কর্মসূচির আওতায় ৩২ লাখ ৫২ হাজার ৬৫৩ টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের জুন মাসে নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের কিছুদিন পরই বন্যার প্রবল স্রোতে সেতুটি ভেঙে যায়। সেই থেকে আশেপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ চরম দূর্ভোগে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলমান থাকলেও সেতুটি পুনর্নির্মাণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এই সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন জৈতক, গুইংগাজুড়ি, কন্যাপাড়া, রামনগর, দক্ষিণ রামনগর,বনপাড়া, ঝাউগড়া, ধুরাইল, পাবিয়াজুড়ি সহ প্রায় ১০ গ্রামের শতশত মানুষ যাতায়াত করে।
সেতুটিতে চলাচলকারী সারোয়ার আলম বলেন, সেতুর পাশে ২টি গোরস্থান, ২টি ঈদগাহ মাঠ ও ১টি মসজিদ রয়েছে। এই ইউনিয়নের মধ্যে এই সেতুটি পারাপারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাঙা সেতুর কারণে আমাদের এই জায়গাটি খুবই অবহেলিত। বাজারে পণ্য আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের এই ভাঙা সেতু দিয়েই আসা যাওয়া করতে হয়। অনেক সময় ভাঙা সেতুটিতে উঠানামা করতে দূর্ঘটনার স্বীকার হতে হয়। বিশেষ করে বন্যা মৌসুমে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
স্থানীয় মোঃ আবুল হাসেম বলেন, সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় আমাদের এখন খুবই কষ্ট করে চলাচল করতে হয়। এলাকার মুরুব্বীদের খুবই সাবধানে যেতে হয়। একটু অসাবধান হলেই ঘটে দূর্ঘটনা। এলাকার কেউ মারা গেলে এই ভাঙা সেতু দিয়েই গোরস্থানে নিয়ে যেতে হয়। বন্যা হলে লাশ নিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা সরকারের কাছে দাবী জানাই দ্রুত যেন এখানে একটি নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়।
অন্যদিকে পাশের গ্রামের উত্তর রামনগর আন্দাইরা খালের উপর ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ড ভিশন ২০০৫ সালে প্রায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য সেতু নির্মাণ করে। সেই সেতুটি ২০২০ সালে বন্যার প্রবল স্রোতে ভেঙে যায়। এতে করে আশে পাশের কয়েক গ্রামের মানুষও চরম দুর্ভোগে পড়েছে। সেতুর পাশেই বনপাড়া আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজ, বনপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বনপাড়া কওমী মাদরাসা সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেতুটি দিয়ে ডুবারপাড়, তালুকদানা, রামসোনা, দনারভিটা, পাকনিভিটা সহ আশেপাশের ১০ গ্রামের মানুষ চলাচল করে। বিশেষ করে পাশে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় ছাত্র/ছাত্রীদের পারাপারে কষ্ট সবচেয়ে বেশী। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় সেতুর সাইড দিয়ে হাটার পথ থাকলেও বন্যায় নৌকা ছাড়া চলাচল অসম্ভব বলছেন স্থানীয়রা অভিভাবকরা।
এ বিষয়ে স্থানীয় মাদরাসা পড়ুয়া ছাত্র আবির, আল-আমিন, রানা সহ অনেকে বলেন, মাদরাসা খোলা থাকায় প্রতিদিন আমাদের মাদরাসায় যেতে হয়। ভাঙা সেতুর পাশে ছোট পায়ে হাটার রাস্তা দিয়ে খুবই সাবধানে আমাদের চলাচল করতে হয়। আগে মাদরাসায় আমরা সাইকেল নিয়ে দ্রুত গিয়েছি। কিন্তু সেতুটি ভাঙার পর থেকে পায়ে হেটে যেতে হয়।
স্থানীয় কৃষক আবুল হাসেম বলেন, আগে তো আমরা খুব সহজেই কৃষি পণ্য বাজারে নিয়ে যেতে পেরেছি। এখন তা অসম্ভব আমাদের জন্য। এমনিতেই বন্যা প্রবণ এলাকা হওয়ায় আমাদের ফসলের ক্ষতি হয়। তার উপর সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় এই এলাকার মানুষের ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে দাড়িয়েছে।
স্থানীয় ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওয়ারিছ উদ্দিন সুমন বলেন, ২টি সেতুই এই এলাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় সাংসদ মহোদয়কে অবহিত করেছি। আমরা দাবী জানাই, বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় এখানে যেন বড় আকারে সেতু নির্মাণ করা হয়।
প্রেসিডেন্ট বাড়ি সংলগ্ন সেতুর বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আলাল উদ্দিন বলেন, আমি সেতুর বিষয়ে অবগই নই।
কালের কণ্ঠ