ভারতে পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ওই রাজ্যে রাজনৈতিক সফরে এসে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অমিত শাহ বাংলাদেশ থেকে কথিত অনুপ্রবেশের ইস্যুকে আবার খুঁচিয়ে তুলেছে।
বৃহস্পতিবার কোচবিহার ও ঠাকুরনগরে দু’দুটো জনসভা থেকে শাহ দাবি করেছে, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে সীমান্ত দিয়ে “কোনও মানুষ দূরে থাক – একটা পাখিও ঢুকতে পারবে না।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও অনেকেই মনে করছেন কথিত অনুপ্রবেশ ইস্যুর আড়ালে বিজেপি আসলে হিন্দুত্ববাদি গেরুয়া সাম্প্রদায়িক এজেন্ডাকেই সামনে আনতে চাইছে।
বস্তুত পশ্চিমবঙ্গে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচন মাত্র মাসদুয়েক দূরে – আর সে রাজ্যে শাসক দল তৃণমূলের প্রধান চ্যালেঞ্জার বিজেপির প্রচারণায় নেতৃত্ব দিচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজেই।
ইদানিং খুব ঘন ঘন সে পশ্চিমবঙ্গ সফরেও আসছে – এবং গত (বৃহস্পতিবার) সবশেষ সফরে রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে সে দুটো বড় জনসভায় ভাষণ দিয়েছে।
কোচবিহার ও ঠাকুরনগরে এই দুটো জনসভা থেকেই সে পরিষ্কার করে বলে, বাংলাদেশ থেকে কথিত অনুপ্রবেশের ইস্যু ভোটে বিজেপির জন্য বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে যাচ্ছে।
“জেনে রাখুন, রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তন হলে তবেই কেবল অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে। বিজেপি সরকার গড়লে সীমান্ত দিয়ে মানুষ তো দূরে থাক – একটা পাখিও ঢুকতে পারবে না দেখে নেবে!”
কথিত ‘বন্ধু রাষ্ট্র’ ‘মহান’ ভারতের এই হুংকারবাদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য শুনলে মনে হতে পারে, বাংলাদেশ থেকে হরদম লোকজন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ভিড় করার জন্য লাইন ধরে থাকে! ভারত এবং তার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ হঠাৎ করেই বিলেত-সুইজারল্যান্ড বনে গেছে। টাকা পয়সায় সুখে-শান্তিতে সেখানে বসবাস করার জন্য আশপাশের দেশ থেকে পঙ্গপালের মত লোকজন ছোটাছুটি শুরু করেছে। অথচ বাস্তবতা এর বিপরীত। জীবনযাত্রা ও অর্থনীতিতে পশ্চিমবঙ্গের দশা এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের চেয়ে ভালো নয়। কিন্তু লজ্জা কম থাকলে ডায়লগ ছাড়তে সমস্যা হয় না।
বাংলাদেশিদের ব্যাপারে এর আগেও সে এধরনের কথা বলেছে। একবার বলেছে, ‘অনুপ্রবেশকারী বাঙ্গালীদের বঙ্গোপসাগর নিক্ষেপ করবে।’ একবার বলেছে, বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী বাঙালিরা হচ্ছে উই পোকা’। এধরনের তুচ্ছতাচ্ছিল্য কথাবার্তা শুধু সেই বলে না, তার দল ও সরকারের বড় বড় চাঁইরা প্রায়ই বলে।
রাষ্ট্র হিসাবে আমাদের বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এবং তার কর্তারা কতটা আমাদের বন্ধু আর কতটা তাচ্ছিল্য-প্রবণ নিম্ন রুচির শত্রু, তা এইসব বক্তব্য ও চালবাজির রাজনীতি থেকে বোঝা যায়। এক পরও আমাদের ‘দেশে’ একতরফা হিন্দুঘেষা অন্ধ প্রেমিকের অভাব নেই। তারা শুধু দিয়েই সুখ পেতে চায়। একবারের জন্যও চোখটা তুলে দেখতে চায় না, যাকে বন্ধুত্বের মোড়কে এত আনুগত্য দেওয়া হচ্ছে, সে আসলে মানুষ না অন্য কিছু!
কলকাতায় প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাবেক সাংবাদিক শিখা মুখার্জি আবার মনে করছে, এই অনুপ্রবেশের ইস্যু উসকে দেওয়ার পেছনে বিজেপির উগ্র সাম্প্রদায়িক তাস খেলার চেষ্টাই আসলে কাজ করছে।
মিস মুখার্জির কথায়, “অনুপ্রবেশের ভয় দেখিয়ে বিজেপি আসলে এটাই বলতে চায়, বাংলাদেশ থেকে দলে দলে মুসলিমরা এসে পশ্চিমবঙ্গে কোনও এক প্রক্রিয়ায় হিন্দুদের সংখ্যালঘু বানিয়ে দেবে।”
“ফলে এটা একটা মুসলিম বিদে্বষী বক্তব্য – আর এ কথাটা যাতে বলা যায় সে জন্যই অনুপ্রবেশের ইস্যুকে প্রক্সি বা অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে”, বলছিলেন তিনি।
এদিকে বাংলাদেশ থেকে আগত হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধান এনে ভারত সরকার পার্লামেন্টে নাগরিকত্ব আইন পাস করেছে।
সূত্র: বিবিসি