নারায়ণগঞ্জে সরকারি চাকরি করেন মো. আফছার উদ্দিন (৪৩)। এক দিনের ছুটি নিয়ে নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌরসভা নির্বাচনের ভোট দিতে এসেছেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সেই ভোট আর তিনি দিতে পারলেন না। জোর করে নৌকায় তাঁর ভোট দিয়ে দিয়েছেন নৌকা মার্কার এক এজেন্ট।
ভোট দেওয়ার জন্য বড়াইগ্রাম কলেজ কেন্দ্রের ৪ নম্বর বুথে সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে পোলিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ব্যালট পেপার নেন আফছার উদ্দিন। গোপন কক্ষে ঢোকার মুহূর্তে সেখানকার নৌকা মার্কার এজেন্ট মো. সেলিম কয়েকজন সাংবাদিকের সামনেই ছোঁ মেরে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে নিজেই সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়ে দিলেন।
ব্যালট পেপার হাতে নেওয়ার পরও ভোট দিতে না পারার বিষয়ে আফছার উদ্দিন কোনো কথা বললেন না, শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলেন। চোখে তাঁর জল ছলছল করছিল।
সেলিমকে তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবু হানিফ মিয়া। কিন্তু তিনি সেলিমের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিলেন না, এমনকি সেখান থেকে সরিয়েও দিলেন না। আবু হানিফ মিয়া বলেন, ‘প্রার্থীদের এজেন্টরা এসব কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করেন। কিন্তু তাঁর কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীর কোনো এজেন্ট ছিল না। তাই তাঁর পক্ষে অপর প্রার্থীর এজেন্টকে দণ্ডিত করা যায়নি।’
এদিকে বড়াইগ্রাম কলেজ কেন্দ্রসহ বড়াইগ্রামের ৯টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত নৌকার এজেন্টরা ভোটারদের নানাভাবে হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে বড়াইগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খায়রুল বাশার বলেন, ‘আমি মৌখিকভাবে সতর্ক করেছি। তাঁরা শোনেননি।’
বিএনপি প্রার্থী ভোট দেননি, কোনো কেন্দ্রেও যাননি
নিরাপত্তার অভাবে বড়াইগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যাননি বলে জানান বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. ইসাহাক আলী। তিনি বলেন, ভোট গ্রহণের শুরুতে ওই কেন্দ্র থেকে তাঁর এজেন্টকে বের করে দেওয়া নিয়ে হট্টগোল হয়। বাকি আটটি কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপি প্রার্থী সেসব কেন্দ্রেও যাননি। তাঁর কোনো প্রতিনিধিও ভোট পর্যবেক্ষণে ভূমিকা রাখেননি।
উল্লেখ্য, দেশের প্রায় সকল নির্বাচনী কেন্দ্রে কম বেশি এমনই চলছে কুফরি গণতন্ত্রের নির্বাচনী খেলা।