আরবের নামধারী কিছু ইসলামী সংস্থা, বুদ্ধিজীবি ও শাসকগোষ্ঠি চরমপন্থা দমনের নামে স্কুল কলেজের শিক্ষা সিলেবাস থেকে কুরআন হাদীস ও ইসলামী শিক্ষা উঠিয়ে দিবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তাদের ধারণা, কুরআন হাদীস ও ইসলামী শিক্ষা গ্রহণের ফলে মনুষ চরমপন্থী’ ও ‘জঙ্গিবাদী’ হয়ে ওঠে৷ তারা সন্ত্রাস ও চরমপন্থা দমনের জন্য মৌলিক ধর্মীয় শিক্ষাটা বহাল রেখে সিলেবাস এবং আরবী ভাষা ও ইতিহাস থেকে কুরআন হাদীস ও ইসলামী শিক্ষা তুলে দেওয়ার সিন্ধান্ত নিয়েছে৷
আরব বিশ্বের নামধারী কিছু ইসলামী সংস্থা এবং পশ্চিমা বিশ্বের কাছে মাথা বিক্রি করা একদল শাসকগোষ্ঠি ও বুদ্ধিজীবি এমন কিছু নোংরা ও পৈশাচিক চিন্তা ধারার প্রসার ও বাস্তবায়নের উদ্যেগ নিয়েছে যা আরব প্রজন্মকে ইমান-আমল শূন্য করে ইহুদী খৃস্টানদের আদলে গড়ে তুলবে৷ সর্বপ্রথম এই কু-পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটাতে যাচ্ছে মিশরের ক্ষমতাদখলকারী সামরিক প্রেসিডেন্ট “সিসি”৷
গত(১৭ ফেব্রুয়ারি)আ’লাম টিভি নেট জানায়, দেশটির জাতীয় প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষা কমিটির সদস্যে “ফ্রেডি আল-বেয়াদী” এই চিন্তাধারাটিকে বেশ পছন্দ করে৷ লোকটি আরবি ভাষা, ইতিহাস এবং ভৌগোলিক বিষয়গুলিতে ধর্মীয় পাঠ্যকে “মহা বিপদ” হিসাবে বিবেচনা করে৷ তার বক্তব্য, অযোগ্য শিক্ষকরা সিলেবাসে থাকা কুরআন-হাদীসের ব্যাখা করে উগ্রবাদ, সন্ত্রাস ও চরমপন্থী ধ্যান-ধারণা ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়।
এদিকে বিযয়টি মিশরের জনগণের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। মিশরসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র নিন্দার ঝড় বইছে৷
দৈনিক সংবাদপত্র আ’লম টিভি ও ওয়াতন টিভি নেট জেনারেল সিসি বরাবর এক প্রতিবেদনে লিখেছে, মনে হচ্ছে সরকারের আদেশে মিশরের শিক্ষামন্ত্রণালয় কুরআন হাদীস উঠিয়ে দিয়ে পাঠ্যতালিকায় ইসলাম ইহুদী ও খৃস্টবাদের সংমিশ্রন ঘটিয়ে এক নাস্তিক্যবাদী শিক্ষাসিলেবাস প্রণয়ন করতে চায়৷ যা বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য চরম হুমকি৷
মিশর মুসলিম দেশ৷ এ দেশের সংবিধানে রয়েছে ‘রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম’, সুতরাং অন্যান্য দেশের মতো এ দেশের প্রতিটি মানুষের জন্যও ইসলামের উৎসগ্রন্থ কুরআন ও হাদীস থেকে ইসলামী শিক্ষা অর্জন করা, দ্বীনকে বুঝা এবং ধর্মীয় জ্ঞানের প্রতিটি শাখায় পাণ্ডিত্য অর্জন করার অধিকার রয়েছে৷
সন্ত্রাস ও চরমপন্থার সাথে কুরআন হাদীসের নুন্যতম সম্পর্ক নেই- এটা তথাকথিত ইসলাম নামধারী সংস্থা ও শাসকগোষ্ঠি ভালো করেই জানে৷ আসলে তারা নিজেদের ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও অপকর্মগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই এমন জঘন্য সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে৷
একটু ক্ষতিয়ে দেখলে বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যায়, চরমপন্থা যদি সত্যিই ছড়িয়ে থাকে, তাহলে এর জন্য মিশরের বৈধ সরকার মুরসিকে উৎখাত করে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারই দায়ী৷ কেননা ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতি, দুঃশাসন, জুলুম এবং জনগনের সম্পদ আত্মসাতের ফলে দেশটিতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অবক্ষয় ও ক্রমবর্ধমান দারিদ্রতার ফলেই এসব পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে৷
তাদের দুর্নীতি ও অপকর্মের ফলে নবী-রাসূল ও সাহাবায়ে কেরামের ঐতিহ্যবাহী দেশটি ধ্বংস গহ্বরের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে৷ কিছু মানুষ চরম দারিদ্র ও খাদ্যসংকটের ফলে চুরি ও ছিন্তাইয়ের পথ পর্যন্ত বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে৷ এসবের জন্য দায়ী একমাত্র সরকার৷
একসময় ইসলামী সংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ গৌরবোজ্জল একটি কেন্দ্র হিসেবে মিশর বিবেচিত হতো। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক সম্পদের দিক দিয়ে মিশর অন্যান্য দেশের কাছে ঈর্ষণীয় ছিলো৷ আজ সেই মিশর শাসকগোষ্ঠীর কারণেই দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দয়া ও সাহায্যর ভিখারীতে পরিণত হয়েছে৷ এই দয়ার বিনিময়ে ইয়েমেন ও ফিলিস্তিনে নিজ ভাইদের রক্ত ঝারানো, ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি ও প্রথম কিবলা ‘‘মসজিদে আকসাকে” জায়নবাদীদের হাতে তুলে দেওয়ার চুক্তিতে দুর্নীতিবাজ কতিপয় আরব শাসকগোষ্ঠির সাথে হাত মিলাচ্ছে মিশর।
অতএব এমন আত্মঘাতিমূলক নিকৃষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে কুরআন-হাদীস ও ইসলামী শিক্ষা উঠিয়ে দিলে সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা নির্মূল তো হবেইনা, বরং ফিতনা-ফাসাদ, বিশৃঙ্খলা ও চর্মপন্থার জন্ম দিবে৷ কারণ, প্রজন্ম ইসলামী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হলে বুঝবে না- দেশপ্রেম কী? ধর্ম কী? মানবতা কী? এবং দেশ রক্ষার্থে সংগ্রাম করে প্রাণোৎসর্গ করার জন্যও তৈরী হবেনা তারা৷ কাজেই ইসলামী শিক্ষা রহিত করা মানে ফিতনার দ্বার খুলে দেওয়া৷
সূত্র: ওয়াতন নেট এবং আ’লম টিভি নেট