১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সালের বসনিয়া যুদ্ধে কমপক্ষে ২ লক্ষ মুসলিম মারা যায়। ২০ লক্ষাধিক বসনিয়ান বাস্তুচ্যুত হন।
বসনিয়া যুদ্ধে সেব্রেনিৎসা গণহত্যার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন প্রিজেডর গণহত্যায়। জাতিগত নির্মূলের প্রয়াসে সংখ্যাগরিষ্ঠ বসনিয়াকে ও ক্রোট মুসলিমদের উপর ক্রুসেডার সার্বিয়ান সৈন্য কর্তৃক চালানো হয় এই নারকীয় গণহত্যা।
৩১ মে, ১৯৯২ঃ ইতিহাসের এই দিনে বসনিয়ার প্রিজেডর পৌরসভা জোড়পূর্বক দখলে নেয়ার পর দখলদার সার্বিয়ান সৈন্যরা স্থানীয় রেডিওতে সকল অ-সার্বিয়ান নাগরিকদের তাদের ঘরবাড়িতে সাদা রঙের পতাকা কিংবা বিছানার চাদর দিয়ে চিহ্নিত করতে ও বসতবাড়ি ত্যাগ করার সময় বাহুতে সাদা ফিতা পরিধান করতে নির্দেশ প্রদান করে।
তারপর সাদা বাহু বন্ধনী যুক্ত প্রায় দশ হাজার লোককে বসনিয়া যুদ্ধে নির্মিত কুখ্যাত ওমারস্কা, কেরাটার্ম, মাঞ্জাচা, ট্রনোপলজে ক্যাম্পে বন্দী করে রাখা হয়।
মূলত বসনিয়াক মুসলিমদের গণহত্যার উদ্দেশ্যে সার্বিয়ান খৃষ্টানদের থেকে পৃথক করতে সাদা বাহুবন্ধনী পরতে বাধ্য করা হয়েছিল।
১৯৯২ সালে ওমারস্কা ও মাঞ্জাচা ক্যাম্পে সাত মাস বন্দী থাকা, নির্যাতিত এক অভিবাসী শ্রমিক বলেন, সাদা বাহুবন্ধনী গণহত্যার প্রতীক কারণ কুখ্যাত সার্বিয়ান সৈন্যরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদিদেরকে জোড়পূর্বক দাউদ আঃ এর তারকা পরানোর কথা স্মরণ রেখেছিল।
প্রিজেডর গণহত্যায়, ২৫৮ জন নারী ও ১০২ জন শিশু সহ ৩১৭৬ জন মুসলিমকে সার্বিয়ান সৈন্যরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। প্রায় ৩১ হাজার বেসামরিক লোককে ক্যাম্পে বন্দী রেখে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। ৫৩ হাজার মুসলিমকে জোড়পূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে।
নির্যাতনে বেঁচে যাওয়া লোকেরা নেদারল্যান্ডসের হগে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে লোমহর্ষক নির্যাতন, ধর্ষণ আর পৈশাচিক গণহত্যার বিবরণ দিয়েছিলেন।
অতীতের স্মৃতিচারণঃ
২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে “ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর মিসিং পারসন” প্রিজেডর পৌরসভার টমাসিকাতে বসনিয়া যুদ্ধের অন্যতম বৃহত্তম গণকবরস্থান আবিষ্কার করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া তথ্যমতে, গণকবরস্থানটিতে হানাদার সার্বিয়ান সৈন্য কর্তৃক নিহত এক হাজারের অধিক বসনিয়াক মুসলিম ও ক্রোট জনগোষ্ঠীর দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। গণহত্যায় নিহত লোককে দেহাবশেষ পরে পুনরায় দাফন করা হয়।
প্রিজেডরের পার্শ্ববর্তী জেকোভি গ্রামের বাসিন্দা হাভা তাটারেভিক তার স্বামী ও ছয় সন্তানের পুরো পরিবারকে প্রিজেডর গণহত্যায় হারিয়েছেন।
সম্প্রতি টমাসিকায় গণকবর আবিষ্কারের ফলে লোকেরা বসনিয়া যুদ্ধের নিকৃষ্টতম যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে মুখ খুলেছে।
হডজিক বলেন,”এটি এমনকিছু যা এড়ানো যায় না। আমি বিশ্বাস করি, যদি স্থানীয় প্রশাসন বাধাগ্রস্ত না করে, তবে প্রিজেডরের সাধারণ নাগরিকদের যুদ্ধাপরাধের বিষয় উল্লেখ করতে কোন সমস্যা হবে না। সমস্যার মূলে প্রিজেডরের প্রশাসন, জনগণ নয়।”
মুজাগিক অতীতের ভয়াবহতা তুলে ধরতে “গার্ডিয়ান অফ ওমারস্কা” নামে ফেইসবুকে একটি গ্রুপ খুলেছেন।
তিনি বলেন, প্রিজেডর গণহত্যা শুধু বসনিয়ার নিছক স্বাধীন আর নিরাপত্তার নিদর্শন নয়, বরং এটি ছিল অ-সার্বিয়ান মুসলিমদের বিরুদ্ধে সার্বিয়ানদের একটি পরিকল্পিত আগ্রাসন। সাদা বাহুবন্ধনী ছিল ফ্যাসিবাদের প্রতীক।”
প্রিজেডর গণহত্যায় পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশিদের হারানো মুজাগিক স্মৃতির পুনর্মিলনের সন্নিবেশ ঘটাতে ২০০৩ সালে সোশ্যাল এক্টিভিস্ট হিসাবে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন।
মুজাগিক বলেন,”আমি চাই আমার দুই মেয়ে প্রিজেডরে পুনরায় ফিরতে সক্ষম হোক! তাদের যেন কেউ ভিন্ন চোখে না দেখে। হয়তো আমার জীবদ্দশায় এটি হবে না কিন্তু শতবর্ষ পর হতে পারে।”