ভারতে প্রকাশ্যে মুসলিমদের হত্যার হুমকি; আতঙ্কে মুসলিম সমাজ

1
1248
ভারতে প্রকাশ্যে মুসলিমদের হত্যার হুমকি: আতঙ্কে মুসলিম সমাজ

ভারতের হরিয়ানাতে গত মাসে একজন মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের খালাস করিয়ে আনার দাবিতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক ‘মহাপঞ্চায়েত’ বা জনসমাবেশ আয়োজিত হয়েছে।

দিনদশেক আগে এরকমই একটি সমাবেশ থেকে মুসলিমদের হত্যা করার ডাক পর্যন্ত দেওয়া হয় – যে ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়েছে।

যে মালাউন এই ডাক দিয়েছে সে রাজপুতদের সংগঠন কার্নি সেনার শীর্ষ নেতা। নিজেই  ভিডিওটি নিজস্ব ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছে। কিন্তু পুলিশ কাউকে এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার পর্যন্ত করেনি।

ওই কট্টর হিন্দু নেতা সুরজ পাল আমুর ফেসবুক পেজের দাবি অনুসারে সে ক্ষমতাসীন বিজেপিরও নানা পদে আছে।

ওদিকে মহাপঞ্চায়েতগুলো থেকে ক্রমাগত হুমকি আসতে থাকায় রাজ্যের মুসলিম সমাজ আতঙ্কে সিঁটিয়ে আছে।

গত মাসের ১৬ তারিখে হরিয়ানার খলিলপুর খেডা গ্রামের বাসিন্দা আসিফ খান তার বাড়ি থেকে একটু দূরে সোহনা শহরে ওষুধ কিনতে এসেছিলেন, তখন তার গ্রামেরই জনাকয়েক হিন্দু মালাউন বাসিন্দা তাকে ঘিরে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলে।

মামলার এফআইআরে মোট ১৪জনের নাম করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত।

তাদের মুক্তির দাবিতে লকাডাউনের মধ্যেই রাজ্যে একের পর এক মহাপঞ্চায়েত ডাকা হতে থাকে।

গত ৩০শে মে নূহ-র কাছে মেওয়াট জেলার ইন্দ্রি গ্রামে এমনই একটি সমাবেশে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান থেকেও বহু মানুষ এসেছে, কারফিউর মধ্যেও প্রায় ৫০ হাজার লোকের ভিড় হয়েছিল সেখানে।

পরে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কার্নি সেনা সংগঠনের প্রধান সুরজ পাল আমু সেখানে বলছে, “নিহত আসিফ খান আমাদের মেয়েদের, মা-বোনদের নিয়ে ভিডিও বানাত, তো কেন ওকে মার্ডার করা হবে না?”

“ও ওর কর্মের সাজা পেয়েছে। ওদেরকে একশোবার মারব, মায়ের দুধ খেয়ে থাকলে আমাদের আটকাক দেখি!”

এই ধরনের চরম বিদ্বেষমূলক ভাষণের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিতে মিছিল, সমাবেশও করতে থাকে।

হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী ভারতমাতা বাহিনীর মালাউন সদস্যরা ও বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা সে সব ভিডিও ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে পোস্টও করতে থাকে।

কার্নি সেনার প্রধানের নিজের পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায়, মহাপঞ্চায়েতে ভাষণই শুরু করছে ”আপনারা কি সত্যিকারের হিন্দু না কি পাকিস্তানের বাচ্চা” বলে।

নিহত আসিফের মা আইমান নিশো বলছিলেন, “আমার ছেলের কী দোষ ছিল? ওষুধ আনতে গিয়েছিল শুধু, ওকে ঘিরে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলল।”

“এখন যারা ওকে মারল, তাদেরই ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে!”

দিল্লিতে সুপরিচিত অ্যাক্টিভিস্ট ফারাহ নাকভি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “এখানে মুৃসলিমদের বিরুদ্ধে সরাসরি হিংসায় উসকানি দেওয়া হয়েছে।”

“এই বক্তাদের গ্রেপ্তার করার মতো আইনের কিন্তু দেশে অভাব নেই, কিন্তু তারপরও কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।”

“এগুলো কিন্তু হেইট স্পিচের চেয়েও মারাত্মক, কারণ এই মহাপঞ্চায়েতগুলো বা এই ভিডিওগুলোতে হত্যার অধিকারের ডাক দেওয়া হয়েছে – যা যুক্তি-বুদ্ধির অতীত!

মিস নাকভি মনে করেন, ভারত ক্রমশ এমন একটা পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে যেখানে সব নাগরিকের জন্য আইন আর সমান নয়।

মেওয়াটের মুসলিম নেতা ইশা মিও-ও তার সঙ্গে একমত।

তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, “গরু নিয়ে যাওয়ার অপরাধে আগে যেমন আকবর খান বা পহেলু খানকে পিটিয়ে মারা হয়েছে কিংবা জুনেইদ খানকে মেরে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে, সেই তালিকাতেই আর একটি নাম আসিফ।”

“অথচ তার হত্যার বিচারের জায়গায় আমরা দেখছি পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হচ্ছে এদেশে শুধু একটি শ্রেণিরই থাকার, বলার অধিকার আছে – অন্যদের কিছু নেই।”

মেওয়াটের পুলিশ প্রধান রাজ্য জুড়ে এই সব বিতর্কিত মহাপঞ্চায়েত নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআফগানিস্তানের ৩৪ টি প্রদেশের ২৬ টিতেই একযোগে হামলা চালাচ্ছে তালিবান
পরবর্তী নিবন্ধরাষ্ট্রীয় সমর্থন থাকা স্বত্বেও পশ্চিমা বিশ্বে ইসরাইলের জনপ্রিয়তা তীব্রভাবে কমছে