ব্রাউন ইউনিভার্সিটির প্রকাশিত নতুন একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০১ সাল থেকে কথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকা ৫৯ মিলিয়ন মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে।
রোড আইল্যান্ড ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘Cost of War project ‘ দ্বারা প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে যে ২০০১ সাল থেকে দীর্ঘ ২০ বছরের যুদ্ধে সন্ত্রাসী আমেরিকান সামরিক বাহিনীর সহিংসতায় আফ্রিকা, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের আটটি মুসলিম দেশের প্রায় ৩৭ থেকে ৫৯ মিলিয়ন মানুষ তাদের বাড়িঘর এবং দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
‘শরণার্থী তৈরি করা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 9/11 যুদ্ধের পরে বাস্তুচ্যুত’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে।
সন্ত্রাসী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ কর্তৃক ঘোষিত এই অন্যায় যুদ্ধে ভয়াবহভাবে বিপর্যস্ত হয় ৮টি মুসলিম দেশ। আফগানিস্তান, ইরাক, পাকিস্তান, ইয়েমেন, সোমালিয়া, ফিলিপাইন, লিবিয়া এবং সিরিয়া।
প্রতিবেদনেটিতে বলা হয়, ইরাক থেকে অন্তত ৯.২ মিলিয়ন মুসলিম তাদের বাড়িঘর ছেড়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক মুসলিম বাস্তুচ্যুত হয়েছে সিরিয়া থেকে, যার পরিমাণ ৭.১ মিলিয়ন। আর কমপক্ষে ৫.৩ মিলিয়ন লোক বাস্তুচ্যুত হওয়া আফগানিস্তান রয়েছে তৃতীয় স্থানে।
প্রতিবেদনটির গবেষকদের দাবি, বিশাল সংখ্যক এই শরনার্থীদের সংখ্যা ১৯০০ সাল থেকে এযাবৎ যেকোন যুদ্ধ বা দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত হওয়া লোকদের চেয়ে বেশি। ব্যতিক্রম শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে।
মুসলিমদের দমনের উদ্দেশ্যে আমেরিকার কথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই সহিংস যুদ্ধে বিভিন্ন দেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া আরো কয়েক মিলিয়ন মুসলিমদের এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সেই দেশগুলো হচ্ছে বুর্কিনা ফাসো, ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, চাদ, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, মালি, নাইজার ও তিউনিসিয়া।
সন্ত্রাসী আমেরিকার সহিংসতা থেকে বাঁচতে ইরাক ও আফগানিস্তানের মুসলিমরা আশ্রয় নিয়েছে পাকিস্তান, জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন, মিশর, তুরস্ক এবং ইরান ও ইউরোপীয় দেশসহ আশেপাশে।
মুসলিম শরণার্থীদের পুনর্বাসনে পশ্চিমা সন্ত্রাসী রাষ্ট্রগুলোর অনিচ্ছা, সীমিত আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং প্রত্যাবর্তনের সময় সম্পর্কে অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে শরণার্থীদের পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। তাদের নাগরিক অধিকার ও সেবা প্রত্যাখ্যান, নির্বাসনের ভয় এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন তারা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। নানান সমস্যার মধ্য দিয়ে কাটছে তাদের দিন। যেমন স্বাস্থ্যকর খাবারের অপর্যাপ্ততা , বেকারত্ব, গৃহহীনতা, পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবার অভাব, পানি-বিদ্যুৎ এবং স্যানিটেশন সহ অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনের ঘাটতি।