গত ১৫ আগস্ট তালিবান প্রতিরোধ যোদ্ধারা আফগানিস্তানের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের পর হাজার হাজার আফগান আমেরিকা ব্রিটেনে পারি জমায়, যাদের অধিকাংশি ছিল আগ্রাসী বিদেশি বাহিনীর হয়ে কাজ করা লোকজন।
তাদের মধ্যে একজন মির্জা আলি আহমাদি। সে গত ১০বছর দখলদার মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে কাজ করেছে। তালেবান মুজাহিদিনরা নিজ দেশ পুনরুদ্ধার করার পর সে তার স্ত্রী-সন্তানসহ আমেরিকার চাকচিক্যের লোভে পরে বিমানবন্দরে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। কাবুল বিমানবন্দরের ফটকের বাইরে তখন মার্কিন সহযোগীদের প্রচন্ড ভীড়।
এ সময় সাহায্যের জন্য এক মার্কিন সেনার কাছে আকুতি জানায় সে। মার্কিন সেনা দেয়ালের উপর থেকে আফগান এই পরিবারের দিকে হাত বাড়ায়। এ সময় নিজ সন্তানকে তুলে দেন ওই মার্কিন সেনার হাতে। খুব অল্প সময় পরই বিমানবন্দরে প্রবেশ করে তারা। কিন্তু তাদের সন্তানকে আর ফিরিয়ে দেননি তাদের একান্ত বিশ্বস্ত মার্কিন সেনাবাহিনী।
তাদের ধারণা ছিল, মাত্র ১৬ ফুট দূরের ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলেই নিজ সন্তানকে পাচ্ছেন তারা। সেই ভাবনাই কাল হয়ে দাঁড়াল। চোখের আড়াল করার আড়াই মাস পেরিয়ে গেছে, সেই সন্তানকে তারা এখনও ফেরত পাননি। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মার্কিন সেনা ও সেনাকমান্ডারদের কাছে তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও কোথাও তার সন্তানের হদিস পাননি তারা। শেষমেশ সেই পরিবারকে আমেরিকায় নিয়ে একটি শরনার্থী কেম্পে রাখা হয়েছে। কিন্তু মায়ের চোখের পানি এখনও ঝরছে পুত্রশোকে।
তালিবানরা যদিও সবার জন্য ক্ষমা ঘোষণা করেছিল, তবুও এই আফগানরা ইউরোপ-আমেরিকার চকচক রঙিন প্রলেপ দেখে সেসব দেশে শরণার্থী হয়ে পারি জমায়। তবে তারা এখন ঐসব দেশে চরম মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ফলে তাদের অনেকেই এখন আফগানিস্তানে ফিরে আসার আকুতি জানাচ্ছে।
অন্যদিকে, আফগানরা যখন দেশ ছেড়ে পালাচ্ছিল হলুদ মিডিয়া তখন আমেরিকাকে ত্রাণকর্তা ও উদ্ধারকারী হিসেবে প্রচার করেছিল।
বিপরীতে আমেরিকা যখন তাদের সহযোগীতাকারীদের পশ্চিমা দেশে নিয়ে অধিকারহারা নিস্ব অবস্থায় শরনার্থী কেম্পে ফেলে রাখলো, তাদের সন্তানকে চুরি করে গায়ের করলো অথচ মিডিয়া এখন চুপ। শিশুটির মায়ের আহাজারিতে আকাশ-পাতাল প্রকম্পিত হলো, তবু দালাল মিডিয়া নিশ্চুপ!
এই কাজটাই যদি তালিবান মুজাহিদিনের বিপক্ষে হতো, দালাল মিডিয়ায় এতোদিনে হইচই শুরু হয়ে যেত। চেচামেচি শুরু করতো তথাকথিত সুশীল, মানবতাবাদী ও নারীবাদীরা। বিবৃতি দিতে শুরু করতো কথিত জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো!
উল্লেখ্য যে, এই শিশুটিকে যখন আমারিকান সেনাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছিল সেই ছবি হলুদ মিডিয়ায় ফালাও করে প্রচার করছিল। মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে বলা হচ্ছিল, “Desperate Afghan Mothers Threw Babies Over Barbed Wire To Foreign Troops To Save Them From taliban”
“Mother handed her baby over to US forces to save it from the Taliban”
অর্থাৎ, ‘তালিবানের হাত থেকে বাঁচতে আফগান মা নিজ সন্তানকে আমেরিকান সেনাদের হাতে তুলে দিচ্ছে।’
মূলত সাহায্যকারীর হাতে নয়, নিজ সন্তানকে তুলে দিয়েছিল মানবতার মুখোশ পরিহিত বর্বর এক বাহিনীর হাতে। যাদের হাতে লেগে আছে লক্ষ-কোটি বনি আদম সন্তানের রক্ত।
তথ্যসূত্র:
——-
১। Baby handed to US soldiers in chaos of Afghanistan evacuation still missing
https://tinyurl.com/3xw5zzsz
২। ‘Committed to ensuring protection’: Afghan baby handed to US soldiers amid airlift chaos still missing, reveals State Dept-
https://tinyurl.com/v85y5ena
৩। Afghan toddler handed over to US Army, still missing | Afghanistan Crisis | Taliban | World News-
https://youtu.be/DmmPoGAWYt4