চলতি বছরের ১৫ই আগস্ট তালেবান মুজাহিদিন কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার মাধ্যমে দীর্ঘ ২০ বছরের আফগান যুদ্ধের ইতি টানেন। তেমন কোনো গুলিবর্ষণ কিংবা রক্তপাত ছাড়াই ঐতিহাসিক কাবুল বিজয় বিশ্ববাসীকে চমৎকৃত করেছে। কীভাবে সম্ভব হয়েছিল এমন রক্তপাতহীন কাবুল জয়?
এ বিজয় অবশ্যই আল্লাহর অনুগ্রহে সম্পন্ন হয়েছে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের যুদ্ধকৌশল দিয়ে শত্রু বাহিনীকে পরাজিত করেছেন। তালেবানের কাবুল বিজয় নিয়ে একটি কৌশল জানা যাচ্ছে। আমেরিকার গোলাম গনি সরকারের প্রতিটি দপ্তরেই তালেবানের গোয়েন্দা সদস্যরা ছদ্মবেশে কাজ করতেন। মূলত বিনা রক্তপাতে কাবুল বিজয়ে তাঁরাই সহায়তা করেছিলেন।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, তালেবানের গোয়েন্দা সদস্যগণ মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যবসায়িক সংস্থা এবং সাহায্য সংস্থাগুলোতে সরব ছিলেন। হাক্কানি নেটওয়ার্কের অনুগত একজন শীর্ষ তালেবান নেতা মৌলভি মোহাম্মদ সেলিম সাদ জানিয়েছেন, প্রতিটি সংস্থা এবং বিভাগে তাঁদের লোক রয়েছেন; যাঁরা কাবুলে প্রবেশের আগেই কৌশলগত অবস্থানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন।
পত্রিকাটির খবরে বলা হচ্ছে, তালেবানের গোয়েন্দা সদস্যরা ১৫ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর বন্দুকগুলো সরিয়ে নেওয়া এবং তাদেরকে নিরস্ত্র করার কাজ করেছিলেন। রাজধানী কাবুলের কৌশলগত অবস্থানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁদেরকে।
মোহাম্মদ রহিম ওমারি তালেবানের বদরি বাহিনীর একজন সদস্য। তিনি মধ্যস্তরের কমান্ডার। কাবুলে তাঁর পরিবারের পেট্রল-বাণিজ্যের ব্যবসা রয়েছে। তিনি বলছেন, তাঁকে এবং অন্য ১২ জনকে শহরের পূর্বে একটি আফগান গোয়েন্দা পরিসেবা কম্পাউন্ডে পাঠানো হয়। যেখানে তাঁরা কর্তব্যরত অফিসারদের নিরস্ত্র করেন এবং কম্পিউটার ও ফাইলগুলো ধ্বংস করা থেকে তাদেরকে বাধা দেন।
গোয়েন্দাদের অন্যান্য সেলগুলো বিভিন্ন সরকারি ও সামরিক স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। টিমের সদস্যদের কাবুল বিমানবন্দরেও পাঠানো হয়, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের লোকদের সরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল। সকালে গ্রামাঞ্চল থেকে উন্নত অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত তালেবান সেনারা না আসা পর্যন্ত এই গোয়েন্দা সদস্যগণই বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন।
এমনকি সম্ভাব্য লুটেরাদের হাত থেকে আফগান প্রত্নতত্ত্ব ইনস্টিটিউট এবং এর ধনসম্পদ সুরক্ষিত করার জন্যও তালেবানের পক্ষ থেকে লোক নিযুক্ত ছিলেন। একইভাবে আরেকজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কাজে।
কাবুলের পশ্চিমে ওয়ার্দাক প্রদেশের ৩০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি জানাচ্ছেন, ২০১৭ সালে ইউনিভার্সিটিতে আরবি ভাষায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার সময় তিনি গোপনে তালেবান সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পান। বছরের পর বছর ধরে তিনি প্রায় ৫০০ জনকে দলে ভেড়াতে সক্ষম হন। কিন্তু তাদের পোশাক ছিল পশ্চিমা ধাচের। তাঁরা দাড়ি কামাতেন, জিন্স-টাই পরতেন।
তিনি বলছেন, ‘আমাদের অনেক বন্ধুকে দাড়ি থাকার কারণে তালেবান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু আমি সন্দেহের ঊর্ধ্বে ছিলাম। অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে। অথচ আমি তাদের নেতা ছিলাম। বহু শিক্ষার্থী আমাকে ১৫ আগস্টে তালেবান হিসেবে প্রথমবারের মতো জানতে পারেন, যেদিন সরাসরি বন্দুক নিয়ে হাজির হয়েছিলাম। মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মচারী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মীরা আমাকে চিনতেন। তারা আমাকে দেখে অবাক হয়েছিলেন।’ এখন তিনি কাবুলের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ইউনিটের প্রধান। তাঁর পোশাক-পরিচ্ছদে এখন ইসলামি সংস্কৃতির সৌন্দর্য দেখা যায়।
তালেবানের এই গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক সংঘর্ষ ছাড়া কাবুল ও আমেরিকার গোলাম গনি প্রশাসনের পতন ডেকে আনার ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রেখেছিল।
তথ্যসূত্র:
1. Taliban Covert Operatives Seized Kabul, Other Afghan Cities From Within, November 28, 2021, The Wall Street Journal; https://on.wsj.com/3pIXuAb
আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা তাঁদেরকে পরিপূর্ণ জাযায়েখায়র দান করুক।আমাদেরকেও তাঁদের অনুসরণ করার তাওফিক দান করুক আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন ♥♥♥।
Alhamdulillah