‘শাঁখের সুর আজানে যাচ্ছে মিশে, ধর্মান্ধ তোমার লালসা মিটবে কীসে?’—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পাশে একটি দেয়ালে লেখা এই ছন্দটি। পাশে বড়ো করে লেখা আছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। শাঁখের সুর হলো হিন্দুদের ধর্মীয় উপাসনার অংশ; আর আজান মুসলিমদের ইবাদতের অংশ। বাংলাদেশের মুসলিমদের আজানের ধ্বনি ছাত্রলীগের পছন্দ নয়, তাদের শুনতে হবে শাঁখের সুর। ছাত্রলীগের দৃষ্টিতে আজানের ধ্বনি ধর্মান্ধতা, আর শাঁখের সুর ছাত্রলীগের ধর্মের অংশ। কারণ ছাত্রলীগ উগ্র হিন্দু সন্ত্রাসীদের এজেন্ডা নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন। ছাত্রলীগের অতীত ও বর্তমান এই কথাটিরই সাক্ষ্য দিচ্ছে দ্ব্যর্থহীনভাবে।
গত ৩০শে জানুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সম্মেলনে নাচ-গানের আয়োজনে নর্তকীদের শাড়িতে ছিল ভারতীয় পতাকার রং। ভারতের পতাকায় যেমন একপাশে সবুজ, মাঝে সাদা এবং আরেকপাশে গেরুয়া রং, ঐ নর্তকীদের শাড়িতেও ঠিক তেমনি। ছাত্রলীগ হিন্দুদের গেরুয়া রং পছন্দ করলেও, তাদের সহ্য হয় না ‘মুসলিম’ শব্দটি। মুসলিম শব্দেও তারা সাম্প্রদায়িকতা খুঁজে পায়, আর হিন্দুদের রীতিনীতিতে পায় অসাম্প্রদায়িকতার আহ্বান! এমন ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতিই উন্মোচন করে দিয়েছে উগ্রবাদী ছাত্রলীগের হিন্দুত্ববাদী মুখোশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে ছাত্রলীগের হল কমিটির ঘোষণাপত্রে কয়েকটি হলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী ছাত্রলীগ। ফজলুল হক মুসলিম হলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে লিখেছে ফজলুল হক হল। একইভাবে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের নাম থেকেও মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়েছে তারা। এই বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলে, এ নামগুলো থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়েছে নাকি নাম সংক্ষিপ্ত করার জন্য। অথচ, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল’, ‘শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল’, ‘স্যার এ. এফ. রহমান হল’, ‘বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল’ ইত্যাদি হলগুলোর নাম আরও বড় হলেও বিজ্ঞপ্তিতে সংক্ষিপ্ত করা হয়নি।
এভাবেই ছাত্রলীগ মূলত ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সংগঠন আরএসএসের ভূমিকায় এদেশে অবতীর্ণ হয়েছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সর্ব জায়গায় নামধারী কথিত মুসলিমদের পাশাপাশি ইসকনপন্থী হিন্দু সন্ত্রাসীদের আধিপত্য চোখে পড়ার মতো। বর্তমান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য নামক এক হিন্দু সন্ত্রাসী, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি সন্ত্রাসী হিন্দু নেতা সনজিত চন্দ্র দাস। কথিত মুসলিম নামধারীদের নিয়ে এই হিন্দু সন্ত্রাসীরা ছাত্রলীগের মাধ্যমে এদেশে হিন্দুত্ববাদীদের রামরাজত্ব কায়েম করার মিশনে নেমেছে। তারা চায়, এদেশে আজানের সুমধুর পবিত্র ধ্বনি বন্ধ করে দিয়ে শাঁখের অপবিত্র আওয়াজ করতে।
এজন্য যখনই মুসলিমরা কোনো ন্যায্য দাবি নিয়ে রাস্তায় নামেন, তখন মুসলিমদের নিরস্ত্র অবস্থার সুযোগ নিয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে হিন্দুত্ববাদী ছাত্রলীগ। নিরস্ত্র মুসলিমদের উপর হিংস্র ছাত্রলীগের আক্রমণে রাজপথ রঞ্জিত হওয়ার ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয় হলো, ছাত্রলীগের ইসলামবিদ্বেষ এত সুস্পষ্ট হওয়ার পরও কেউ কেউ ছাত্রলীগ নিয়ে গর্বিত হয় আবার মুসলিম হিসেবেও নিজেকে পরিচয় দেয়। এসব দ্বিমুখী লোকদের উচিত, মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতে চাইলে ছাত্রলীগের ইসলামবিদ্বেষের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। সর্বোপরি ছাত্রলীগ যে আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদী মিশন নিয়ে সামনে এগুচ্ছে, তা রুখতে হলে মুসলিমদেরকে সঠিক তাওহিদী চেতনার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং নববী পদ্ধতিতে ইসলাম কায়েমের চেষ্টা করতে হবে বলে মনে করেন আলেমগণ।
লেখক: সাইফুল ইসলাম
তথ্যসূত্র:
১। হল সম্মেলনের ভিডিও – https://tinyurl.com/2p8a5h4s [সতর্কতা: নাচ-গান-বাজনা ও বেপর্দা নারী আছে।]
২। ঢাবির দুই হলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ ছাত্রলীগের, ক্ষোভ; https://tinyurl.com/3ftfn4jv