যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বেশ কিছু আরব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের পথে হাঁটছে দখলদার ইসরায়েল। ইতোমধ্যেই অনেক গাদ্দার আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের চুক্তিও হয়েছে। এবার তারই ধারাবাহিকতায় ইসরায়েলকে নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে সৌদি আরব। ফলে এখন থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী ইসরায়েলের বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের বিমান সৌদির আকাশপথ ব্যবহার করতে পারবে।
ইসরায়েলের সঙ্গে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই সৌদি আরবের। তবে ইসরায়েলের সাথে রিয়াদের গোপন সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়, যে বিষয়টি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি সৌদি আরব। ২০২০ সালে তৎকালীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে একটি গোপন বৈঠকের জন্য সৌদি আরবে এসেছিল। যদিও বিষয়টি গাদ্দার সৌদি প্রশাসন অস্বীকার করেছিল।
এত দিন দেশটির আকাশসীমা ব্যবহার করে ইসরায়েলে চলাচলের ক্ষেত্রে উড়োজাহাজগুলোর ওপর বিধিনিষেধ ছিল। এখন সেই বাধা আর রইল না। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সৌদি আরব সফরের আগমুহূর্তে এ ঘোষণা দিয়েছে পশ্চিমা ও জায়নবাদী দালাল সৌদি সরকার।
সন্ত্রাসি রাষ্ট্র ইসরাইলের জন্য সৌদি আরবের আকাশসীমা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছে সৌদি বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলে- এই সিদ্ধান্ত সৌদি আরবের সঙ্গে অনেক মাস ধরে প্রেসিডেন্টের অবিচল ও নীতিগত কূটনীতির ফল, যা আজ তার সফরে চূড়ান্ত পরিণতি পেল।
মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে গতকাল দিনের শেষ দিকে এক ভ্রমণে সৌদি আরব এসেছে বাইডেন। মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে গত বুধবার ইসরায়েল পৌঁছান বাইডেন। আরও আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে পদক্ষেপ নিতে পারে বলে এর আগে ইঙ্গিত দিয়েছিল ওয়াশিংটন।
ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংঘাতের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত দাপ্তরিকভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থাপন না করার বিষয়ে দীর্ঘদিনের অবস্থান ছিল সৌদি আরবের। তবে এখন এ পদক্ষেপ দখলদার ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের আনুষ্ঠানিকতার শুরু হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আব্রাহাম অ্যাকর্ডের অধীন ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে কুখ্যাত সংযুক্ত আরব আমিরাত শাসকগোষ্ঠী। একই পথ অনুসরণ করে বাহরাইন ও মরক্কো। আঞ্চলিক মিত্রদের এমন পদক্ষেপের কোন বিরোধিতা করেনি সৌদি আরব।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আরব দেশগুলো প্রধান তিনটি শর্ত দিয়েছিল। সেগুলো হলো, যুদ্ধের সময় আরব দেশগুলোর দখল করা জমি ছেড়ে দেওয়া, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন ও স্বীকৃতি এবং ফিলিস্তিনের দখল করা জমি হস্তান্তর। তবে সেই ‘লক দেখানো’ শর্তের কোনোটা পূরণ না হওয়ার পরও গাদ্দার আরব দেশগুলো অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলছে।
ইসরায়েলের সাথে একের পর আরব দেশের সম্পর্ক স্থাপনের প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রতিষ্ঠা বা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে বহু দূরেই ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। বৃহত্তর এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা ইসরায়েল–ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের বিষয়টি।
আরব বিশ্ব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার বিনিময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনে ছিল অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু আরব বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি করেছে ইসরায়েল। আর ফিলিস্তিনিরা এখনো পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে অধিকৃত অবস্থায় আছে, যা গাজার মতোই একটি উন্মুক্ত কারাগারের শামিল।
কথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আরব রাষ্ট্র কেউই ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে যখন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা, তখন ফিলিস্তিনি মুসলিমদের স্বাধীনতা অর্জনের দায়িত্ব মুসলিমদেরকে নিজেদের কাঁধেই তুলে নিতে হবে বলে দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন উম্মাহ দরদী আলিমগণ৷
তথ্যসূত্র:
——–
1. Saudi Arabia opens airspace to Israeli flights
– https://tinyurl.com/2p8ehshe