গোয়েন্দা পুলিশের পোশাক পরিবর্তন নাটক : বিশেষজ্ঞদের মতামত

0
1136

বাংলাদেশ পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম এখন ওপেন সিক্রেট। রক্ষক নামের এই ভক্ষক বাহিনী এমন কোন অপরাধ নেই যা করেনি। গুম, খুন, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ এবং পাচারসহ সকল অপরাধের সাথে জড়িত এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী বাহিনী। কখনো নিজেরা বা কখনো ভাড়াটে লোক দ্বারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের টাকা।

সম্প্রতি নিজেদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম আড়াল করতে নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে সংস্থাটি। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) পরিচয় দিয়ে অপরাধ ঠেকাতে নতুন পোশাক চালু করেছে দাবি সংস্থাটির।

গত ১ আগস্ট ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন পোশাক ব্যবহারের বিষয়টি জানায় ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এই হারুন অর রশিদ নিজেই অর্থপাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত; পুলিশ বিভাগের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসার হিসেবেও তার দুর্নাম রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের আগে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতির সাথে সংশ্লিষ্ট ছয় ডাকাতকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়।

ছাই রংয়ের নতুন এই পোশাকে রয়েছে কুইক রেসপন্স (কিউআর) কোড যা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্ক্যান করলেই আসামি ধরতে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় জানা যাবে। পুরানো পোশাকের রং কিছুটা পিত রংয়ের এবং পেছনে ডিবি লেখা ছিল।

‘পোশাক বদলে কাজ হবে না’

তবে মানবাধিকার কর্মী এবং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরাধ ঠেকাতে পোশাক পরিবর্তন কোনো কাজে আসবে না।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান সোমবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভুয়া ডিবি পরিচয়ে অপরাধ বন্ধ করতে ডিবি পোশাক পরিবর্তনের যে কথা জানিয়েছে, সেটি আসলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। তারা যাকে খুশি তাকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে, আটক রেখেছে, হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে—এগুলো আমরা দেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘তারা আটকের সময় কাউকে পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না। এভাবে তারা সারাদেশে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সে কারণে অপরাধী ডিবি ব্র্যান্ড ব্যবহার করার কৌশল অবলম্বন করেছে।’

নূর খান আরও বলেন, “ভুয়া ডিবি সদস্যদের কথা বলে ডিবি তাদের অতীত এবং বর্তমান কৃত অপকর্মের দায় তাদের ওপর চাপাতে চাইছে। তারা বলতে চাচ্ছে, ‘আমরা কোনো অপরাধ করিনি’।… এগুলো না করে উচিত, তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যারা ডিবির নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করেছে তাদের সংস্থাটি থেকে বের করে দেওয়া হোক।”

নূর খান বলেন, ‘ডিবি বলছে, নতুন পোশাকে কিউআর কোড থাকবে এবং মানুষ অ্যাপের মাধ্যমে আসামি ধরতে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে পারবেন। এটি একটি অবাস্তব ধারণা। ডিবির সদস্যরা যখন কাউকে ধরতে যায়, তারা কাউকে তোয়াক্কা না করে, জোর করে মানুষকে ধরে নিয়ে আসে। ওই অবস্থায় কারো পক্ষে কি অ্যাপের মাধ্যমে কিউআর কোড ব্যবহার করা সম্ভব?’

তিনি বলেন, ‘র‌্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির পর এখন পুলিশ তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা চাপা দিতে বিভিন্ন ধরনের অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। এটি সেই অপকৌশলের একটি অংশ বলে আমি মনে করি।’

‘সমস্যা পোশাকে নয়, মানসিকতায়’

ভুয়া ডিবির অপরাধ ঠেকাতে পোশাক পরিবর্তনের ধারণাকে ‘স্থূল বুদ্ধির পরিচয়’ হিসাবে আখ্যায়িত করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান। তিনি জানন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে অন্য কেউ অপরাধ করার কারণে সবাই যদি পোশাক পরিবর্তন করা শুরু করে তাহলে তো মুশকিল।’

তিনি বলেন, ‘সমস্যা পোশাকে নয়। সত্য কথা বলতে কি, ডিবির ভেতরে সমস্যা না থাকলে এত সংখ্যক ভুয়া ডিবি সদস্য দেখা যেত না। ডিবির সদস্যদের সমস্যার কারণেই ভুয়া ডিবি এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘ডিবি সদস্যরা হরহামেশা যে কোনো মানুষকে তুলে নিয়ে যায়। ধরার পর স্বীকার করে না। এগুলো তো আমরা দেখছি। এগুলো বন্ধ করতে হবে।… সুতরাং, নিজেদের দুর্বলতা না কাটিয়ে পোশাক পরিবর্তন করে কিছু হবে না। এই পোশাক পরিবর্তনের কারণে পোশাক সরবরাহকারী ঠিকাদার এবং তাদের কাছের কিছু লোকজন আর্থিকভাবে লাভবান হবে। এর বাইরে আর কিছু হবে বলে মনে হয় না।’

অপরাধীরা সব সময় নিজেদের নিষ্পাপ দেখানোর চেষ্টা করে এটাই বাস্তবতা। কথিত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় পৃথিবীর কোন ভূখণ্ডেই দূর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক ব্যবস্থার নজির নেই। মূল সমস্যা এই পশ্চিমা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার। ইসলামি শরিয়্যাহ ব্যাতিত যতদিন যত তন্ত্রমন্ত্র থাকবে পৃথিবীতে, ততদিন পৃথিবীবাসী শান্তির মুখ দেখবে না। দীর্ঘদিন ধরে এ কথা বলে আসছেন ইসলামি বিশেষজ্ঞরা।



প্রতিবেদক :  ইউসুফ আল-হাসান



তথ্যসূত্র:
১। গোয়েন্দা পুলিশের নতুন ইউনিফর্ম, লক্ষ্য ডিবি পরিচয়ে অপরাধ ঠেকানো-
https://tinyurl.com/3mvvrxdy

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধবেনিনে আল-কায়েদার কার্যক্রম পরিচালনার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
পরবর্তী নিবন্ধকেনিয়া | আশ-শাবাবের পৃথক অভিযানে গোয়েন্দা সহ ১৮ ক্রুসেডার নিহত