সুবি তুরসান (২৯), যিনি একজন উইঘুর এক্টিভিস্ট এবং একই সাথে দক্ষিণ চীনের গুয়াংঝৌ শহরের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত। তাকে বিনা কারণে গ্রেপ্তার করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ তাকে তার বাড়ি উরুমকি শহর থেকে গ্রেপ্তার করেছে।
সুবি তুরসান, ২০১০ সালে কলেজে পড়াশোনার জন্য তুরস্কে যান এবং ২০১৬ সালে রাজধানী ইস্তাম্বুলের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি সেখানে একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন। এতদিন উরুমকি শহরের এই উইঘুর মুসলিম মূলত তুরস্কে নির্বাসনে ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান যে, ২০২১ সালে তুরসান কোম্পানির তুরস্ক শাখা থেকে গুয়াংঝো শাখায় স্থানান্তরিত হন। পরে তিনি ১ জুলাই উরুমকি শহর থেকে তুরসানের গ্রেপ্তার হবার খবর পান। তিনি জানান যে, সন্দেহভাজনদের তালিকায় তুরসানের নাম থাকায় তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ।
সূত্রটি আরও জানায় যে, তুরসান তুরস্কের নাগরিক ছিলেন না। তবে তিনি তুরস্কের একটি আবাসিকে থাকার পারমিট পেয়েছিলেন।
চীন সূত্রে জানা গেছে যে, ২৬টি দেশের মধ্যে তুরস্ক অন্যতম, যেখানে কোনো উইঘুর ভ্রমণ করেছে কিনা তা জানার জন্য চীনা কর্তৃপক্ষ সর্বদা নজরদারি চালায়।
আরএফএ’র (রেডিও ফ্রি এশিয়া) সূত্র থেকে জানা যায় যে, কেবল তুরস্ক থেকে ফিরে আসা চীনা নাগরিকত্বের উইঘুররাই নয় বরং তুর্কি নাগরিকত্বের উইঘুরদেরও গ্রেপ্তার করে শিনজিয়াংয়ের কারাগারে পাঠায় চীনা কর্তৃপক্ষ।
বছরের পর বছর ধরেই চীনা কর্তৃপক্ষ উইঘুর মুসলিমদের পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করার অংশ হিসেবে উইঘুর আলেম, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী এবং পূর্ব-তুর্কিস্তানের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে এবং গ্রেপ্তার করছে।
পূর্ব-তুর্কিস্তানে উইঘুর মুসলিম এবং অন্যান্য তুর্কি মুসলিম সংখ্যালঘুরা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্যাতন এবং জোরপূর্বক শ্রমের শিকার হচ্ছেন। সেই সাথে তাঁদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্ম থেকে বলপূর্বক বের করে দেওয়া হচ্ছে।
২০১৭ সাল থেকে প্রায় ১.৮ মিলিয়ন (বা ১৮ লাখ) উইঘুর এবং অন্যান্য তুর্কি সংখ্যালঘুদের জিনজিয়াংয়ের ডিটেনশন ক্যাম্পগুলিতে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের ওপর সেখানে জোরপূর্বক চীনা সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মুসলিম নারীদেরকে নাচতে বাধ্য করা হচ্ছে; পুরুষ ও নারীদের মদ খেয়ে চীন সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে হচ্ছে। উইঘুর মুসলিম শিশুদের তাদের বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিভিন্ন ‘স্পেশাল স্কুলে’ ভর্তি করে তাদের নাস্তিকতা শেখানো হচ্ছে। এসব ছাড়াও আরও ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে চীনের বিরুদ্ধে।
মুসলিম বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চীন আর্থিক ঋণের ফাঁদ তৈরী করে তাদের নিজেদের দলে ভিড়িয়েছে। আর এই ঋণের কারণেই এখন বিভিন্ন দেশে তারা তাদের বল প্রয়োগ করতে সক্ষম হচ্ছে। মুসলিম দেশগুলোর তাই উচিত হবে চীনের এই ঋণের ফাঁদ থেকে নিজেদের দেশকে ও মুসলিমদেরকে নিরাপদ রাখা। এবং উইঘুর মুসলিমদের জন্য এগিয়ে আসা ও আন্তর্জাতিকভাবে চীনকে চাপে ফেলা।
তথ্যসূত্র :
———
1. Uyghur who studied in Turkey arrested by police in Xinjiang, sources say
– https://tinyurl.com/bds42sb7