২০২১ সালের আগস্টে তালিবান যোদ্ধারা আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করেন। সমাপ্তি ঘটান বিশ বছরের দীর্ঘ এক যুদ্ধের। তালিবান যোদ্ধারা তখন দেশটির প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করে পূণরায় ইমারাতে ইসলামিয়ার ধারাবাহিকতা ঘোষণা করেন; প্রথমবার যা ১৯৯৬ সালে শুরু হয়ে ২০০১ সালে মার্কিন আগ্রাসনের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল।
আফগানিস্তানে পূণরায় তালিবান কর্তৃক দেশের শাসনভার গ্রহণ করাকে ভালো দৃষ্টিতে দেখেনি পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত বিশ্বের প্রায় মিডিয়াই। পুরো সময়টা জুড়েই মিডিয়াগুলোর প্রচারনা ছিলো ইসলাম বিরোধী দৃষ্টিকোণ থেকে। ফলে এসব মিডিয়ায় জায়গা পায়নি আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো কর্তৃক সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের হিসাব, যুদ্ধের ভয়াবহতা ও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক কোনো পরিসংখ্যান। জায়গা পায়নি- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পুতুল সরকার কর্তৃক দেশটিকে অর্থনীতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার পর মানুষ যখন খাবারের জন্য হাহাকার করছিল তখন দেশটির রিজার্ভ আটকে রাখার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ।
আবার, এহেন পরিস্থিতিতে তালিবান সরকার কর্তৃক আফগানিস্তানের আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কোনো কিছুই উল্লেখযোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায়।
যেমন, তালিবান সরকার কর্তৃক দেশে চিকিৎসালয়, শিক্ষালয় ও আবাসন নির্মাণ, কর্মসংস্থান তৈরি, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজলভ্য করণ এবং দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে তেল ও খনিজ সম্পদের মজুদ প্রক্রিয়াকরণ, কয়েকটি দেশের সঙ্গে শুরু হওয়া পারস্পরিক বাণিজ্য ইত্যাদি; এ ধরনের বিষয়গুলোতে কোনো দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি মিডিয়া আউটলেটগুলো।
বিপরীতে পশ্চিমা ও তাদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার জন্য আফগানিস্তানের অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল পশ্চিমাদের নিজস্ব অনুমান দ্বারা সংজ্ঞায়িত কথিত নারী অধিকারের নামে পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্ধ অনুসরণ বন্ধ করা, ইসলামি অনুশাসনে রাষ্ট্র পরিচালনা করা এবং গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস ও নিষিদ্ধ করার বিষয়গুলো।
যদিও বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নারীদের মাধ্যমিক স্কুল এবং উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করে তালিবান সরকার, তবে সকল মাদ্রাসায় নারীদের শিক্ষাকার্যক্রম চলমান ছিল; অনেক প্রদেশে চলমান ছিল নারীদের মাধ্যমিক স্কুলও।
আবার নারীদের নিয়ে বিশেষ পুলিশ বাহিনী গঠন, নারীদের জন্য নামমাত্র খরচে নারীদের মার্কেটে দোকান বরাদ্দ দেওয়া, অসহায় নারীদের ব্যবসা শুরু করতে আর্থিক সহায়তা প্রদান এসব সংবাদ কখনোই স্থান পায়নি পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায়।
ইমারাতে ইসলামিয়া প্রশাসন ক্ষমতায় আসার প্রথম দিন থেকেই গান ও বাদ্যযন্ত্রের প্রতি তার মনোভাব ছিলো স্পষ্ট। সাংবাদিকরা ইমারাতের একজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করল, এই পরিস্থিতিতে সঙ্গীতশিল্পীরা কী করবেন?
তখন উক্ত কর্মকর্তা উত্তর দিয়েছিলেন “তাদের এমন একটি চাকরি খুঁজে পাওয়া উচিত যা তাদের জন্য হালাল রিজিকের ব্যবস্থা করবে এবং অর্থনৈতিক ভাবে দেশকে সমৃদ্ধ করবে।
সম্প্রতি ইমারাতে ইসলামিয়া প্রশাসনের “ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে বারণ” মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, গান-বাজনার বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে অভিযান চলছে। অভিযোগের ভিত্তিতে গজনি সহ বিভিন্ন প্রদেশে তল্লাশি এবং জনসচেতনতা তৈরি করতে কাজ শুরু করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় অনেক বাদ্যযন্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং সেগুলো পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে “ইসলামী শরীয়তে এধরণের সঙ্গীতের কোন স্থান নেই।”
একই বিবৃতিতে এটাও বলা হয়েছে যে, এসব বাদ্যযন্ত্রের মালিকদের পরামর্শ এবং প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তারা যেনো এধরণের নিষিদ্ধ গান-বাজনা না করেন এবং হালাল রিজিকের অন্বেষণ করেন।
উপরোক্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক রাজধানী কাবুল সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জব্দ করা বাদ্যযন্ত্রগুলোকে পুড়িয়ে ধ্বংস করার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের শেয়ার করা ছবিগুলিতে বলা হয়েছে যে, “এসব বাদ্যযন্ত্র, ক্যাসেট এবং অনুরূপ জিনিসগুলো সমাজের নৈতিক কাঠামোকে ধ্বংস করে এবং তরুণদের বিকাশকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। যার ফলে একটি বিকলাঙ্গ সমাজ গড়ে উঠে।”
আর সার্বিক এই বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে প্রচার করে যাচ্ছে পশ্চিমা মিডিয়া ও তাদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া আউটলেটগুলো।
বিবিসির মতো অপর কিছু মিডিয়াও এমনকি তালিবান কর্তৃক মাদকের উৎপাদন ও বাণিজ্য নিষিদ্ধকরণের বিষয়টিকেও নেতিবাচকভাবে প্রচার করার প্রয়াস চালিয়েছে।
পপিক্ষেত ধ্বংস করার ফলে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যা দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করবে, দেশে বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহ দেখা দিবে, পশ্চিমা দেশগুলোতে মাদকের মূল্যবৃদ্ধি ও মান কমে যাবে, পশ্চিমা দেশগুলোতে তখন অতিরিক্ত মাদক গ্রহণে মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে – ইত্যাদি নানান অনুমাননির্ভর ‘ক্ষতি’র তালিকা প্রকাশ করছে কথিত পশ্চিমা থিংকট্যাঙ্কগুলো।
অথচ এসকল সমস্যা যেন তৈরি না হয়, এজন্য তালিবান কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই চাষিদের জন্য পপি চাষের লাভজনক বিকল্প হিসেবে জাফরান ও গম চাষে ব্যাপক সহায়তা প্রদান করেছে। তাছাড়া দেশজুড়ে কৃষির সম্প্রসারণের জন্য কুসতিপার মতো বিশাল আকারের খাল খনন সহ বেশ কিছু মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে তালিবান কর্তৃপক্ষ। এগুলোর কোনটিই যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে স্থান পাচ্ছে না পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায়।
ময়দানের যুদ্ধ তালিবানের কাছে পরাজিত পশ্চিমারা এখনও তাদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসন এবং অর্থনৈতিক ও মিডিয়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হয়।
আল্লাহ তায়ালা জালিমদেরকে ধ্বংস করুন!
ওদের সমস্ত চক্রান্তগুলো নিঃশেষ করে দিন!
আমিন!!