গত ১৭ আগস্ট ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আবাসন ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রনালয় এবং খাওয়ার কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মধ্যে নতুন কাবুল শহর নির্মাণ সম্পর্কিত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মাধ্যমে মাধ্যমে নতুন কাবুল শহরের নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।
প্রস্তাবিত নতুন কাবুল শহরটি বর্তমান কাবুলের উত্তরে অবস্থিত। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে ডা-সাবজ জেলার সমস্ত এলাকা, পারওয়ান প্রদেশের বাগরাম জেলার বারিক আব এলাকা এবং শকরদারা, কারাবাগ, স্টাল্ফ ও কালকান জেলার কিছু এলাকা।
উল্লিখিত এই শহরটি ৭৪০ বর্গকিলোমিটার জমির উপর নির্মাণ করা হবে, যা হবে বর্তমান কাবুল শহর থেকে প্রায় দেড়গুণ বড়।
নতুন কাবুল সিটি প্রকল্পের দুটি মাস্টার প্ল্যান ১৫ বছরে পর্যায়ক্রমিক ভাবে বাস্তবায়িত হবে। প্রথম পর্যায়ে ১.১ মিলিয়ন (১১ লাখ) মানুষের জন্য ২ লক্ষ ৫০ হাজার ঘর তৈরি করা হবে। এর মধ্যে বাণিজ্যিক, কৃষি এবং বিনোদনমূলক এলাকাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এই বিষয়ক বিভাগের প্রধান শেখ নূরুল হক আনোয়ারী অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন, “এখন সময় এসেছে দেশের অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য ইসলামী ইমারতের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করার এবং আফগানিস্তানকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর।”
অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক বিষয়ক উপ-প্রধানমন্ত্রী মোল্লা আব্দুল গণি বারাদার আখুন্দ এই প্রকল্পের অনুষ্ঠানে বলেছেন, “কাবুলের নতুন শহরে আজকের যুগের সমস্ত সুবিধা থাকবে। এই প্রকল্প শুরু হওয়ার সাথে সাথে অনেক নাগরিক চাকরি পাবেন এবং বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের জন্য জমির ব্যবস্থা করা হলে বর্তমান শহরের উপর চাপ অনেকটাই কমে যাবে।”
প্রশাসনিক উপ-প্রধানমন্ত্রী মাওলানা আব্দুল সালাম হানাফি জানিয়েছেন “দেশ গড়ার কাজে সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে সকল জাতীয় পর্যায়ের সকল ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।”
অনুষ্ঠানে অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান কর্মকর্তা মৌলভি দীন মোহাম্মদ হানিফ বলেন, “বিগত ২০ বছরে দেশে বিলিয়ন ডলার থাকা সত্ত্বেও অনেক আফগান পরিবার এখনও দারিদ্র্যের মধ্যে রয়ে গেছে এবং তারা অর্থনৈতিক সমস্যার সাথে লড়াই করছে।” বিদেশে বসবাসকারী আফগান বিনিয়োগকারীদেরকে তাদের সমস্ত সম্পত্তি বা অংশিক আফগানিস্তানে স্থানান্তর করে তাদেরকেও নিজেদের দেশ নির্মাণে অবদান রাখার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
কাবুলের গভর্নর শায়েখ মুহাম্মদ কাসিম এই সভায় প্রদত্ত বক্তব্যে বলেন, “স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইসলামি ইমারাতের দুই বছরের অর্জনকে উপেক্ষা করা যায় না।” আর জাতীয় স্তরের ব্যবসায়ি ও বিনিয়োগকারী- যারা দেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেন, তাদেরকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে “জাতীয় চ্যাম্পিয়ন” বলে অভিহিত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যে আবাসন ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক শায়েখ হামদুল্লাহ নোমানি আশ্বস্ত করে বলেছেন যে, এই জাতীয় প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট এলাকার সকল প্রাসঙ্গিক নথিপত্র সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ করা হয়েছে।
নতুন কাবুল প্রকল্পটি বর্তমান কাবুল শহরের চেয়ে দেড় গুণ বড়। এটি চারটি পর্যায়ে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়টিকে পাঁচটি স্তরে বিভক্ত করা হয়েছে। এই উপলক্ষে দ্বিতীয় স্তরের কাজ নির্ধারিত করে নির্মাণকাজও শুরু করে দেওয়া হচ্ছে।
দ্বিতীয় স্তরে ২ হাজার ৩০০টি আবাসিক ইউনিট নির্মাণ করা হবে ৭৫০ জেরিব (প্রায় ৩৭১ একর) জায়গা জুড়ে; যেখানে আনুমানিক ১২ হাজার ব্যক্তির থাকার ব্যবস্থা হবে।
একটি বেসরকারী নির্মাণ সংস্থা সক্রিয়ভাবে নতুন কাবুল প্রকল্পের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের দ্বিতীয় অংশটি সম্পাদনে নিযুক্ত রয়েছে। এই উল্লেখযোগ্য প্রকল্পটি নগর উন্নয়ন ও আবাসন মন্ত্রনালয়ের দ্বারা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এই উদ্যোগটির মধ্য দিয়ে হাজার হাজার ব্যক্তির জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থানের বিশেষ সুযোগ তৈরি হবে আশা করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র:
1. Construction Works of New Kabul City Kicks off